শিক্ষার্থীদের অ্যানিমেশন, রোবটিকসহ প্রযুক্তি শিক্ষা দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দু’দফায় বসানো হয় ডিজিটাল ল্যাব। এর মাধ্যমে নিত্যনতুন সফটওয়্যার এবং ডিভাইসের ব্যবহারও তাদের শেখানোর কথা ছিল। সে লক্ষ্যে বসানো হয় কম্পিউটারসহ নানান প্রযুক্তি সরঞ্জাম। কিন্তু কয়েক বছর না যেতেই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ১৮টি ল্যাব অচল হতে চলেছে। অনেক সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে বাড়ছে ই-বর্জ্য। প্রযুক্তি শিক্ষার বদলে ল্যাবগুলো এখন পরিণত হচ্ছে বোঝায়।
২০১২ সালে ‘শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব’ ও ২০১৮ সালে ‘স্কুল অব ফিউচার’ নামে সারাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়। শুরুতে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ১৩টি প্রতিষ্ঠানে এমন ল্যাব স্থাপন করে তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি অধিদপ্তর। এর বর্তমান নাম হয়েছে ‘আইসিটিডি’। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেকটি প্রকল্পে উপজেলার আরও পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়।
এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো এবং স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা। সে লক্ষ্যে স্কুল অব ফিউচার ও শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছিল। বাস্তবে সেগুলোর বেশির ভাগই ব্যবহার হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরাও পাচ্ছে না প্রযুক্তি শিক্ষা। অনেক ল্যাবের কিছু উপকরণ ই-বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। এতে ল্যাব তৈরিতে খরচ হওয়া অন্তত ৯ কোটি টাকা পানিতে যেতে বসেছে।
সরেজমিন উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ ল্যাব প্রায় অচল বা তালাবদ্ধ পাওয়া গেছে। তাড়াশ ইসলামিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল অব ফিউচারের অবস্থা জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামের ভাষ্য, অপারেটর না থাকায় ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ আছে। নওগাঁ জিন্দানী ডিগ্রি কলেজে স্থাপিত ডিজিটাল ল্যাবের ৩০টি ডেস্কটপ কম্পিউটারসহ অন্যান্য ডিজিটাল সামগ্রী অচল হওয়ার পথে। ল্যাবটি অনেকটা ই-বর্জ্যে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বেলাল হোসেন আনছারী।
গুল্টা বাজার শহীদ এম মনসুর আলী ডিগ্রি কলেজের ল্যাবের ল্যাপটপগুলো নষ্ট হওয়ার পথে। পাঁচ থেকে সাতটির কোনো হদিস নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কম্পিউটারগুলো প্রতিষ্ঠানে ফেরত দিতে বারবার তাগাদা দিলেও কলেজের অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান তাতে সাড়া দেননি। অভিযোগ উঠেছে, এসব ল্যাপটপ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও অধ্যক্ষ তা অস্বীকার করেছেন।
ল্যাবগুলো এভাবে বোঝায় পরিণত হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুরুতে নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছিল। এতে কয়েক বছরের মধ্যেই তা বিকল বা অচল হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। অথচ এসব ল্যাব পরিচালনার জন্য একজন করে ল্যাব সহকারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা সরকারিভাবে নিয়মিত মাসিক বেতন-ভাতা পাচ্ছেন।
এসব ল্যাব স্থাপনে উপজেলায় কত টাকা খরচ হয়েছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য মেলেনি। স্থানীয় আইসিটি খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, যে ধরনের সরঞ্জাম রয়েছে, তাতে ১৮টি ল্যাবে সরকারের অন্তত ৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি সিন্ডিকেট আগের জেনারেশন সংস্করণের ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ওয়েবক্যাম, এলইডি টিভি, হোয়াইট বোর্ড, রাউটার, ট্যাব, সার্ভার সিস্টেমসহ ফার্নিচার সরবরাহ করে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের টাকা লুটে নিয়েছে।
ল্যাব প্রতিষ্ঠায় কত টাকা ব্যয় হয়েছিল, সে তথ্য রাখা হয়নি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও। সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধান ও উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ল্যাবের সমস্যা সমাধানে টেকনিশিয়ান চেয়ে বারবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ তাদের। ফলে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা, অ্যানিমেশন, রোবটিকসহ প্রযুক্তি শিক্ষার উদ্যোগ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েকটি কম্পিউটার এখনও সচল রয়েছে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর ল্যাবকক্ষটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, আইসিটি ল্যাব হিসেবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি বিশেষ কক্ষ রয়েছে।
এসব ল্যাবে কম্পিউটার, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস এবং অন্যান্য ডিজিটাল সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা দেওয়ার কথা। নতুন সফটওয়্যার এবং ডিভাইস কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তাও শিখবে তারা। বাস্তবে এ শিক্ষা অধরা বলে জানিয়েছে তামিম, রাফিদ, রেজওয়ানসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে ১৪টি শর্ত দেওয়া হয়। সেগুলোর বেশির ভাগই মানা হয়নি। এলাকার এমপিরা নিয়ম না মেনে তাদের পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ডিও লেটার দিয়ে ল্যাব স্থাপন করেছেন।
উপজেলা আইসিটি কর্মকর্তা আবু রায়হান ল্যাবগুলোর করুণ অবস্থার কথা স্বীকার করেছেন। ডিজিটাল ল্যাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর কার্যালয় থেকে বিভিন্ন ল্যাব পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে। ল্যাব প্রতিষ্ঠার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের শুধু পত্র দিয়ে জানিয়েছিল। কত বরাদ্দ, কেমন মানের ডিজিটাল সামগ্রী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করেছে, তাও তাদের লিখিত বা মৌখিকভাবে জানানো হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ই বর জ য উপজ ল র সরঞ জ ম ব যবহ র এসব ল য হয় ছ ল সরক র হওয় র আইস ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিদ্যুৎ না থাকায় ডিইপিজেডে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ
ঢাকার সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) আজ সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দুপুরের পর ডিইপিজেডের সব কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। ডিইপিজেডের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় এ সংকট তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ ইউনাইটেড পাওয়ারের ডিইপিজেডে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্পটিতে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে তারা উৎপাদন করতে না পারায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ডিইপিজেডে প্রায় ৯০টি কারখানার এক লাখের মতো শ্রমিককে ছুটি দেওয়া হয়।
বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে উল্লেখ করে মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার যদি এটি অব্যাহত থাকে, তবে সংকট আরও বাড়বে। শ্রমিকেরা কাজ না করতে পেরে বিক্ষুব্ধ হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠবে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়া এ ধরনের ঘটনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘তিতাস বলছে, ইউনাইটেড পাওয়ারের কাছে বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করেনি। এ ব্যাপারে আদালতে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, বেপজাকে কোনো ধরনের পূর্ব নোটিশ না দিয়ে হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপের আগে ডিইপিজেডের গুরুত্ব বিবেচনা করে আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়টির সমাধান করা উচিত ছিল।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপক মো. মমতাজ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্যাসের কোনো প্রেশার নেই। প্রেশার শূন্য। কিন্তু কেন তিতাস কর্তৃপক্ষ এমনটি করল, সে ব্যাপারে এখানকার (আশুলিয়া অঞ্চলের) তিতাসের লোকজন কিছু বলতে পারেননি। আমরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে জানি না। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে, বকেয়া নিয়ে কোনো ধরনের মামলা নেই। তিতাস কেন গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিল, সেটি জানা নেই।’
জানতে চাইলে তিতাসের আশুলিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আবু ছালেহ মুহাম্মদ খাদেমুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গ্যাসের বিল বকেয়া থাকায় গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এটি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সিদ্ধান্ত। দুপুরের দিকে গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।