মাঠের পর মাঠ, যত দূর চোখ যায়, কেবল তরমুজের গাছ। সবুজ লতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ডোরাকাটা আলপনা আঁকা নানা আকারের তরমুজ। কোথাও কোথাও মাঠের মধ্যে তরমুজ স্তূপ করে রাখা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এসে এসব তরমুজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার খুলনার উপকূলীয় কয়রা উপজেলার বিভিন্ন তরমুজখেত ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

কয়েকজন তরমুজচাষি বলেন, পাঁচ বছর আগেও জমিগুলো আমন ধান চাষের পর অনাবাদি পড়ে থাকত। শুষ্ক মৌসুমে মাটিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ায় বৃথা পরিশ্রম ভেবে কেউ চাষাবাদের চেষ্টা করতেন না। এখন সেই পতিত জমিগুলোই স্বপ্ন দেখাচ্ছে কয়রার চাষিদের। অল্প সময়ে বিনিয়োগের দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ লাভ করায় দিন দিন এখানকার কৃষকের আশার আলো হয়ে উঠছে লবণসহিষ্ণু সুস্বাদু তরমুজের আবাদ। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে চাষের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ।

কয়রা উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে উপজেলায় মাত্র ৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছিল। এরপর ২০২১ সালে তরমুজ চাষ হয় ৬৫০ হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালে উপজেলায় তরমুজ আবাদের জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯৫ হেক্টরে। ২০২৩ সালে উপজেলায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়। আর ২০২৪ সালে তরমুজ আবাদের জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৩০ হেক্টরে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এ বছর ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেন কৃষকেরা।

কয়রা উপজেলার আমাদী, মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর, চণ্ডীপুর, খিরোল, হরিকাঠি, কিনুকাঠি, ফতেকাটিসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, তরমুজখেতে চাষিদের কেউ কেউ সেচ দিচ্ছেন, কেউ আবার খেত থেকে তরমুজ তুলছেন। তরমুজের মাঠে ঘুরছেন ফড়িয়া ও আড়তদারেরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রলার নিয়ে তরমুজ কিনতে এসেছেন তাঁরা।

তরমুজের ব্যাপারী যশোরের রেজাউল করিমের সঙ্গে কথা হয় কয়রার হরিকাঠিতে। তিনি বলেন, কয়রার তরমুজ খুব মিষ্টি, বাজারে চাহিদাও অনেক। তরমুজের এবার ভালো হয়েছে। তিনি বিঘাপ্রতি ৮০ হাজার টাকা দরে তরমুজ কিনেছেন।
ব্যাপারীদের সঙ্গে কাজ করেন একদল মৌসুমি শ্রমিক। খেত থেকে তরমুজ কেটে ট্রাকে তুলে দেওয়াই তাঁদের কাজ। এমন এক শ্রমিক আবুল কালাম সরদার বলেন, তাঁদের দলে ২০ জন কাজ করেন। প্রতিদিন তাঁদের গড়ে এক হাজার টাকার মতো আয় হয়।

কয়রার কিনুকাঠি গ্রামের খেত থেকে তরমুজ তুলে মাঠের মধ্যে সেগুলো জড়ো করে স্তূপ করছিলেন কৃষক তারক মণ্ডল। তিনি জানান, এবার তিনি ২২ বিঘা জমিতে তরমুজ লাগিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে ৯ বিঘা জমির তরমুজ পাঁচ লাখ টাকায় বেচেছেন। এবার আবহাওয়া ভালো ছিল, তবে বৃষ্টি বেশি হলে তরমুজ আরও বড়ো হতো।
কয়রার মহারাজপুর এলাকার বিলে বছরে শুধু একবার আমন চাষ হতো। এ বছর প্রথমবারের মতো ১২০ একর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।

সেখানে তরমুজখেতের পরিচর্যার ফাঁকে কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, তাঁর বাড়ি আমাদী এলাকায়। কিন্তু সেখানে কোথাও কোনো জমি ফাঁকা না থাকায় এবার মহারাজপুর এলাকায় এসেছেন। এখানে আমন ধান ওঠার পর বিল পড়ে থাকত। তিনি চার বছর ধরে তরমুজ চাষ ক‌রে সংসা‌রের অভাব কা‌টি‌য়ে এক বিঘা জ‌মিও কি‌নেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের খুলনা কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক সহকারী জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কয়রার অধিকাংশ জমিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেশি হওয়ায় আমন ধান ছাড়া কোনো ফসল হতো না। ২০১৫ সালের দিকে প্রথমবারের মতো কয়রার লবণাক্ত পতিত জমিতে শুষ্ক মৌসুমে ফসল উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। সেটা যে কত সফল, তা তরমুজের ফলন থেকেই বোঝা যায়।

কয়রা উপ‌জেলা উপকৃ‌ষি কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ব‌লেন, তরমুজ চাষে রবি শস্য থেকে তিন গুণ বেশি লাভ হয়। এ কারণে চল‌তি মৌসুমে তরমুজের আবাদ বেড়েছে। এবার কয়রায় উৎপাদিত তরমুজের বাজারমূল্য প্রায় ২৫২ কোটি টাকা।

এই পরিমাণ বাজারমূল্যের হিসাব প্রসঙ্গে এই কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এক হেক্টর সমান প্রায় সাড়ে সাত বিঘা। সে হিসাবে ৪ হাজার ২০০ হেক্টরে ৩১ হাজার ৫০০ বিঘা হয়। কৃষি বিভাগ এক বিঘা জমিতে হওয়া তরমুজের বিক্রয়মূল্য ধরে ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে কৃষি বিভাগ এবার কয়রায় উৎপাদিত তরমুজের বাজারমূল্য ধরেছে প্রায় ২৫২ কোটি টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তরম জ চ ষ তরম জ র ব তরম জ ক য় কয়র উপজ ল কয়র র

এছাড়াও পড়ুন:

নওগাঁয় ১০ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ

নওগাঁর ধামইরহাট সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। 

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভোরে ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন সীমান্ত পিলার ২৫৬/৭ এস কাছ দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হলে বিজিবির সদস্যরা তাদেরকে আটক করেন। তাদের মধ্যে দুজন পুরুষ এবং আটজন নারী। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়েছেন পত্নীতলা ১৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন।

আরো পড়ুন:

গাংনী সীমান্ত দিয়ে ১৮ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে বিএসএফ

বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে ১০ রোহিঙ্গাকে ঠেলে দিয়েছে বিএসএফ

আটকরা হলেন—আছমা বেগম (৪০), খাদিজা বেগম (৩৪), পাখি বেগম (২৪), রুমা বেগম (২৫), কাকলি আক্তার (২৭), রুজিনা আক্তার (৩৩), কোহিনুর বেগম (২৬), নাসরিন বেগম (৩৩), মঞ্জুরুল ইসলাম (৩৬), সুমন হোসেন (২৭)। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের নাগরিক।

বিজিবি জানিয়েছে, আগ্রাদ্বিগুন বিওপির টহল কমান্ডার জেসিও সুবেদার মো. জিহাদ আলীর নেতৃত্বে একটি টহল দল সীমান্তের শূন্য লাইন থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মহেষপুরে ওই ১০ জনকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আটক করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে যান। মুম্বাই শহরে পুরুষ দুজন রাজমিস্ত্রি হিসেবে এবং নারী আটজন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে তাদেরকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। গত ২৯ জুলাই ভারতের হরিবংশীপুর বিএসএফ ক্যাম্পে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে বিএসএফ ওই ১০ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দিলে বিজিবি টহল দল তাদের আটক করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা/সাজু/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ