গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে
Published: 7th, April 2025 GMT
মুখ, গাল ও গায়ের পোশাকে লাগানো হয়েছে লাল রং, যেন রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডেও রক্তের রং লাল লাগানো। তাতে লেখা ‘আই অ্যাম ফ্রম গাজা, আই অ্যাম ফ্রম প্যালেস্টাইন’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের তিনজন শিক্ষার্থী আজ সোমবার এই চেহারা নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের আশপাশে হেঁটে হেঁটে প্ল্যাকার্ডগুলো প্রদর্শন করেন। এর মাধ্যমে তাঁরা ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতীকী চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন। চারুকলা অনুষদের এই তিন শিক্ষার্থী হলেন ইমরান সাদমান, শাহাদাত সানি ও দস্তগীর চৌধুরী।
আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকা ইসরায়েলবিরোধী স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’–এর ব্যানারে ফিলিস্তিনের পক্ষে সংক্ষিপ্ত সংহতি সমাবেশ হয়। তবে সকাল থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে থাকেন। তাঁরা ফিলিস্তিনের পতাকা ও বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দেন।
বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মার্চ ফর প্যালেস্টাইনের সংহতি সমাবেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে স্লোগান ওঠে, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, জেনোসাইড নো মোর’, ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি।’
স্লোগানের ফাঁকে এ সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আয়োজকদের একজন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য সংগঠক তাহমীদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দেখছি, ফিলিস্তিনে কীভাবে নিরীহ নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে! আমরা দেখতে পাচ্ছি, সারা পৃথিবী আজ মজলুম মানুষদের কান্না ভারী হয়ে উঠছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সারা পৃথিবীর মজলুমদের ওপরে এই জালিমদের হাত আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। আজকে মার্চ ফর প্যালেস্টাইন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা ফিলিস্তিনি মানুষের প্রতি সংহতি জানাচ্ছি।’
গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ–সমাবেশে অংশ নেন বহু মানুষ। আজ সোমবার টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প য ল স ট ইন ভ স কর য
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।
শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।