ভোলার তজুমদ্দিনে বিএনপির একপক্ষের নেতা-কর্মীদের হাতে অন্য পক্ষের নেতা-কর্মীরা লাঞ্ছিত-অপমানিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে দলটির একটি পক্ষ। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার শশীগঞ্জবাজারের একটি ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করা হয়।

বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী ও বাসিন্দার সূত্রে জানা যায়, তজুমদ্দিন উপজেলায় ২০০৭-০৮ সাল থেকে বিএনপির দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.

) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বীর বিক্রমের অনুসারী। এই পক্ষের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওমর আসাদ ও তাঁর ভাই তজুমদ্দিন উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক হাসান। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিঞা ও তাঁর ছেলে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা (প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি) সাইদুর রহমান।

আজ সংবাদ সম্মেলন করেছে মোস্তাফিজ-সাইদুর পক্ষ। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ উপেক্ষা করে তজুমদ্দিনে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে একটি পক্ষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার বেলা ৩টার দিকে উপজেলার শশীগঞ্জবাজার এলাকায় দলটির একটি কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদল সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। এ সময় মোস্তাফিজ-সাইদুর পক্ষের ৭ নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়। তাঁদের ওপর হামলায় নেতৃত্ব দেন হাসান।

সাইদুর রহমান বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে বিএনপি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে। যখন সারা পৃথিবী ইজরায়েলি আগ্রাসনের বিচার চাইছে—তখন তজুমদ্দিনে বিএনপির হাতেই বিএনপি লাঞ্ছিত হচ্ছে, আহত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় যুবদল সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামের মতো একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদের সামনে হাসান তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী বিএনপির ওপর হামলা করছে। আগেও আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আমরা এর প্রতিকার চাই।’

এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসান বলেন, ‘আসল ঘটনা হচ্ছে, সাইদুর রহমানের লোকজন হঠাৎ করে মিছিলে ঢুকে পড়লে গতি কমে যায়। কয়েকজন মিছিল থেকে ছিটকে পড়ে। যুবদল নেতা নুরুল ইসলামকে বিদায় দিয়ে দেখেন কয়েকজন রাস্তার পাশের রিকশায় ধাক্কা খেয়ে আহত হয়েছে। এ কারণে কেউ কেউ উত্তেজিত হয়েছেন। পরে ঠিক হয়ে গেছে।’

গতকালের ওই হামলার ঘটনায় আজ বেলা ১টা পর্যন্ত কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ করেনি বলে জানান তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহব্বত আলী খান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র রহম ন ন উপজ ল ব এনপ র য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ