গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, পরিবার বলছে ‘এআইয়ে বানানো আপত্তিকর ভিডিওর’ জেরে আত্মহত্যা
Published: 10th, April 2025 GMT
লালমনিরহাটের আদিতমারীতে গত রোববার এক গৃহবধূর (২০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর পরিবারের দাবি, পারিবারিক বিরোধের জেরে এআই দিয়ে স্বামীর স্বজনের বানানো আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় মানসিক যন্ত্রণায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
ওই গৃহবধূর স্বামী (২৮) জাপানপ্রবাসী। ১০ মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়। গৃহবধূরও স্বামীর কাছে জাপানে যাওয়ার কথা ছিল।
পুলিশ বাড়ির শোবার ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে। একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করা হয়। সেখানে গৃহবধূ তাঁর স্বামীর এক স্বজন পর্তুগালপ্রবাসী মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
গৃহবধূর ভাই অভিযোগ করেন, এআই প্রযুক্তি দিয়ে তাঁর বোনের আপত্তিকর ভিডিও বানানো হয়েছিল। এটি বানানো ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটি স্বামীর স্বজন মৃদুল করেছেন বলে বোন তাঁদের বলেছিলেন। সুইসাইড নোটেও তাঁর নাম লিখে গেছেন। তাঁরা বোনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু মানসিকভাবে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বোন।
গৃহবধূর স্বজনদের অভিযোগ, জাপানপ্রবাসীর সঙ্গে বিয়ে মেনে নিতে পারেননি তাঁর (বর) স্বজন মৃদুল। একপর্যায়ে এটি পারিবারিক বিরোধে রূপ নেয়। পরে আপত্তিকর ভিডিও বানিয়ে একটি ভুয়া আইডি থেকে সেটি স্বজনদের কাছে পাঠানো হয়।
বক্তব্য জানার জন্য গৃহবধূর জাপানপ্রবাসী স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোহাম্মদ নাহিন শেখ ওরফে মৃদুলকে অভিযুক্ত করেন। স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ করে তিনি বিচার দাবি করেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে পর্তুগালপ্রবাসী নাহিন শেখ ওরফে মৃদুলের সঙ্গে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, তাঁর জাপানপ্রবাসী স্বজনের সঙ্গে অন্য মেয়ের সম্পর্ক আছে। সে কারণে এই মেয়েকে (মৃত গৃহবধূ) বিয়ে করতে চায়নি। পরিবারের চাপে পড়ে বিয়ে করেছিল। বিয়ের দেনমোহরের ১০ লাখ টাকা না দিতে জাপানপ্রবাসী এই নাটক করেছেন। আপত্তিকর ভিডিওর বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, তাঁর আইডিতে ৭ মিনিট ৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আসে। তিনি সেটা তাঁর স্ত্রীকে দেখান। ভিডিওটি নিয়ে তাঁর জাপানপ্রবাসী স্বজন ও পরিবারের লোকজন গৃহবধূকে মানসিক নির্যাতন করেছেন।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
গৃহবধূর ভাই প্রথম আলোকে বলেন, বোনকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া ও আপত্তিকর ভিডিও তৈরি করে পাঠানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করবেন তাঁরা। তাঁদের কাছে সব তথ্য-প্রমাণ আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র গ হবধ র কর ছ ন য গ কর স বজন
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।