বিগত ১৬ বছর নববর্ষে বিদেশি রাষ্ট্রেরও প্রভাব আমরা দেখেছি: সারজিস আলম
Published: 13th, April 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘বিগত ১৬ বছরে যে বাংলা নববর্ষগুলো ছিল, এই নববর্ষে শুধু দলীয় প্রভাব নয়; বরং বিদেশি রাষ্ট্রেরও প্রভাব আমরা দেখেছি। তাদের মতো করে দলের যেমন ছিল, বিদেশি রাষ্ট্রের এজেন্সির ওই রকম করে কনসেপ্ট তৈরি করে এই নববর্ষগুলোর বিভিন্ন ধরনের সেগমেন্ট তৈরি করা হতো, বিভিন্ন ধরনের অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হতো।’
আজ রোববার দুপুরে পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের শিংরোড নায়েকপাড়া এলাকায় আন্দোলনে নিহত সাগর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথাগুলো বলেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন ঢাকার মেরুল বাড্ডা থানার সামনে মিছিলে অংশ নিয়ে গুলিতে মারা যান সাগর রহমান। আজ তাঁর কবর জিয়ারত শেষে সাগরের মা–বাবাসহ স্বজনদের খোঁজখবর নেন তিনি।
সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি, এই যে ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষ থেকে বা ক্ষমতার জায়গা থেকে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া, এটি কখনোই সাসটেইনেবল নয়। এটি কখনো আমরা প্রত্যাশাও করি না। আমরা মনে করি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ততটুকু স্পেস বাংলাদেশের মানুষকে অলরেডি দিয়েছে যে আমরা আমাদের জায়গা থেকে যা ধারণ করি, আমরা সেটাই প্রকাশ করি এবং করতে পারি।’
এনসিপির এই নেতা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে আগামীতেও যারাই এই বাংলাদেশের সরকারের দায়িত্বে থাকুক না কেন, তারা যেন ক্ষমতাকে ব্যবহার করে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার এই সাহসটুকু না করে এবং তাদের জায়গা থেকে বরং আমাদের প্রকৃত যে সংস্কৃতি, সেটাকে ধারণ করার জন্য তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা যেন তারা রাখে।’
সাগরের কবর জিয়ারত নিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা যে আমাদের যারা শহীদ পরিবার আছে কিংবা আমাদের যারা আহত যোদ্ধা আছেন, তাঁদের পরিবারের সঙ্গে থাকা। শহীদ পরিবারটা যেন আমাদের পরিবার হয়ে ওঠে। এটা সত্য যে এক-দেড় হাজার পরিবারের কাছে আমরা চাইলেই যেতে পারি না। কিন্তু আমরা যখন যে এলাকায় যাই, তখন ওই এলাকায় যে শহীদ পরিবার থাকে, তাদের বাসায় যাওয়ার এবং খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের জায়গা থেকে যতটুকু করা সম্ভব, সেটা আমরা চেষ্টা করি।’
গাজায় গণহত্যার বিষয়ে সারজিস বলেন, ‘আমরা পুরো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বকে একটি বার্তাই দিতে চাই, ফিলিস্তিনের গাজায় মজলুম মুসলিম ভাইদের সঙ্গে যেটা হচ্ছে, এটা একটা গণহত্যা। এই গণহত্যার যে রক্ত, এই রক্তের দাগ নেতানিয়াহুর হাতে আছে, এই রক্তের দাগ নেতানিয়াহুকে যারা বিভিন্নভাবে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে, এটা দেশ হতে পারে, ব্যক্তি হতে পারে, তাঁদের প্রত্যেকের গায়ে আছে। আমরা বাংলাদেশের একজন মানুষ হিসেবে পুরো পৃথিবীর কাছে এই আহ্বান জানাতে চাই যে আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় যে ভাইয়েরা আছেন, তাঁদের পক্ষে কথা বলা শুরু করুন।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নববর ষ পর ব র আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
ইসরায়েল আবারও ইরানে বড় রকমের হামলা করেছে। হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। হামলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও আবাসিক এলাকায়। একদিন পর পাল্টা হামলা চালায় ইরান। এতে কয়েকজন ইসরায়েলি নিহত হয়। ধ্বংস হয় তেলআবিবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ইসরায়েল তার ইরানবিরোধী এ হামলার নাম দিয়েছে ‘রাইজিং লায়ন’। এ নাম রাখা হয়েছে হিব্রু বাইবেলের একটি চরণ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। যে নাম ইসরায়েলের একটি শক্তিশালী ও বিজয়দীপ্ত ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার ইহুদিদের সবচেয়ে পবিত্র উপাসনাস্থল জেরুজালেমের ওয়েস্টার্ন ওয়ালের একটি ফাটলে হাতে লেখা একটি চিরকুট রেখে আসার সময় ছবি তোলেন। এটি ছিল মূলত ইরানে ইসরায়েলের হামলার ইঙ্গিত।
শুক্রবার তার অফিস থেকে সেই চিরকুটে একটি ছবি প্রকাশ করা হয়। সেখানে লেখা ছিল: ‘জনগণ সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে।’
এই বাক্যাংশটি হিব্রু বাইবেলের গ্রন্থ বুক অব নাম্বারস (গণনা পুস্তক) ২৩:২৪ পদ থেকে এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে: ‘দেখো, এই জাতি একটি মহান সিংহের মতো উঠে দাঁড়াবে এবং একটি তরুণ সিংহের মতো নিজেকে উদ্দীপ্ত করবে; সে শিকার না খাওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবে না এবং নিহতদের রক্ত না পান করা পর্যন্ত থামবে না।’
এই চরণটি হিব্রু বাইবেলের অ-ইসরায়েলীয় একজন নবী ও ভবিষ্যদ্বক্তা বালামের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণীর অংশ। সেখানে তিনি ইসরায়েলের শক্তি ও ক্ষমতার কথা বলেন। তাদের এমন এক সিংহের সঙ্গে তুলনা করেন যে নিজের ক্ষুধা না মেটানো পর্যন্ত বিশ্রামে যায় না।
অনেকেই মনে করেন, এই অভিযানের নাম ইরানের শেষ শাহ-এর পুত্রের প্রতি ইঙ্গিত হতে পারে। কারণ পারস্য রাজপরিবারের প্রতীক হিসেবেও সিংহ ব্যবহৃত হতো।
ইসরায়েলের ঐশ্বরিক অধিকারের দাবিইসরায়েল প্রায়শই তার সামরিক অভিযানের নাম হিব্রু বাইবেল বা ওল্ড টেস্টেমেন্ট থেকে নেয় বা ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে গ্রহণ করে। ফিলিস্তিনি ভূমির উপর ইহুদিদের তথাকথিত ঐশ্বরিক অধিকারের দাবি এবং মধ্যপ্রাচ্যে তাদের যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিতে ইসরায়েল এসব ধর্মীয় বিষয় ব্যবহৃত করে বলে অনেকে মনে করে থাকেন।
উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সিরিয়ার সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে চালানো এক অভিযানের নাম দিয়েছিল, ‘অ্যারো অব বাশান।’ ‘বাশান’ শব্দটি ইসরায়েলিদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্টে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি দিয়ে মূলত সিরিয়ার দক্ষিণ ও জর্ডান নদীর পূর্বে অবস্থিত একটি অঞ্চলকে নির্দেশ করা হয়। বাশানের রাজাকে পরাজিত করে ইসরায়েলিরা সেই অঞ্চলকে দখল করেছিল।
গাজা উপত্যকার ওপর হামলা চালাতেও অস্ত্র ও অভিযানের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় প্রতীক বা অনুষঙ্গ ব্যবহার করছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু অন্তত তিনবার গাজায় আক্রমণের জন্য হিব্রু বাইবেলীয় আমালেক কাহিনি ব্যবহার করেছেন।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রন্থ ‘বুক অব ডিউটেরনমি’(২৫:১৭) এর থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:
‘আমালেক তোমার সঙ্গে যা করেছিল তা মনে রেখো, আমরা মনে রাখি এবং আমরা যুদ্ধ করি।’
এর মধ্য দিয়ে গাজাবাসীদের উপর পূর্ণাঙ্গ হামলা করা উচিত বলে নেতানিয়াহু ইঙ্গিত করেন। কারণ ডিউটেরনমির এই উদ্ধৃতি বাইবেলের স্যামুয়েল গ্রন্থে বর্ণিত আমালেকীয়দের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ ধ্বংসের আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাইবেলের এ কাহিনিতে ইসরায়েলিদের ওপর আক্রমণকারীদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান জানানো হয়েছে। গাজার গোটা জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে বাইবেলের এ কাহিনিকে হাজির করেছেন নেতানিয়াহু।
গণহত্যার মামলায় নেতানিয়াহুর বক্তব্যইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা গণহত্যার মামলায় আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রথম শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষের আইনজীবী হিব্রু বাইবেলের উদ্ধৃতির মাধ্যমে নেতানিয়াহুর এই বক্তব্যকে গাজার জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যায় প্ররোচনা হিসেবে তুলে ধরেন।
আইনজীবী আরও জানান, নেতানিয়াহু ৩ নভেম্বর সেনাদের উদ্দেশ্যে লেখা আরেকটি চিঠিতে একই আমালেকীয় গল্প পুনরাবৃত্তি করেন।
ধর্মীয় নাম ব্যবহার করে সামরিক প্রযুক্তিইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি গাজায় বোমাবর্ষণে সহায়তা করছে, তাদের নাম ‘ল্যাভেন্ডার’ এবং ‘দ্য গসপেল’, যা উভয়ই হিব্রু বাইবেলীয় ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক রাভালে মহিদিনের মতে, প্রায়ই ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসরায়েলের অস্ত্রের নামকরণ করা হয়। যেমন, স্যামসন রিমোট কন্ট্রোলড ওয়েপন স্টেশন।
জেরিকো ব্যালিস্টিক মিসাইল-এর নাম রাখা হয়েছে জেরিকো শহরের নামে। হিব্রু বাইবেল ও ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব যশুয়া’ অনুসারে ইসরায়েলিরা এই শহর ফিলিস্তিনিদের কাছ দখল করেছিল।
ডেভিড’স স্লিং নামক আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার নাম রাখা হয়েছে বাইবেলের মেষপালক ডেভিড ও বিশাল যোদ্ধা গোলিয়াথের মধ্যকার বিখ্যাত সেই লড়াইয়ের স্মরণে, যেখানে ডেভিডের বিজয় হয়েছিল। এই কাহিনী আছে হিব্রু বাইবেল ও ওল্ট টেস্টামেন্টের একটি গ্রন্থ ‘বুক অব স্যামুয়েল’-এ।
*দ্য নিউ আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। টিআরটি ওয়ার্ল্ডের বিশ্লেষক ও হার্ভার্ডের গবেষক রাভালে মহিদিনের একটি লেখার অবলম্বনে দ্য নিউ আরব এ বিশ্লেষণটি প্রকাশ করেছে। অনুবাদ করেছেন: রাফসান গালিব