মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে গত ২৮ মার্চের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বৃহৎ মানবিক সহায়তা মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত এই মিশনের আওতায় ত্রাণসামগ্রী, উদ্ধারকারী দল ও চিকিৎসা সহায়তাকারী দল মিয়ানমারে পাঠানো হয়।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানান।

মিয়ানমারে উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণকারী সদস্যদের সম্মানে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আয়োজিত বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান প্রত্যেক সদস্যকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকায় অবস্থিত মিয়ানমারের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে একই স্থানে মানবিক মিশনের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে একটি প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অপারেশন ও পরিকল্পনা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো.

আলীমুল আমীন বক্তব্য দেন।

তিনি মিশনে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক সদস্যকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সেই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, মিয়ানমারে বাংলাদেশের দূতাবাস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।

মানবিক মিশনটি তিনটি ধাপে পরিচালিত হয়
প্রথম ধাপে গত ৩০ মার্চ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর দুটি পরিবহন বিমানে করে ১৬ দশমিক ৫ টন জরুরি ত্রাণ মিয়ানমারে পাঠানো হয়।

দ্বিতীয় ধাপে ১ এপ্রিল সেনাবাহিনীর একটি এবং বিমান বাহিনীর দুটি পরিবহন বিমানের মাধ্যমে ৫৫ সদস্যের উদ্ধারকারী ও চিকিৎসা দল এবং ১৫ টন ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়।

তৃতীয় ধাপে ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা সমুদ্র অভিযানের মাধ্যমে ১২০ টন ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়। সব মিলিয়ে মিয়ানমারে প্রেরিত ত্রাণ সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫১ দশমিক ৫ টন, যা বৈশ্বিকভাবে পাঠানো সহায়তার মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ।

মিয়ানমারে মানবিক মিশন শেষে উদ্ধারকারী ও চিকিৎসা সহায়তাকারী দলটি গত ১৫ এপ্রিল বিকেলে নৌবাহিনীর জাহাজযোগে দেশে প্রত্যাবর্তন করে।

উদ্ধারকারী দল নেপিডো শহরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে। উল্লেখযোগ্যভাবে, তারা একটি বিধ্বস্ত চারতলা ভবনের নিচ থেকে ৬৮ বছর বয়সী এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে। ভবনটি অতিমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অন্যান্য দল সেখানে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বাংলাদেশ দল ৩ এপ্রিল দুপুর আড়াইটায় সফলভাবে উদ্ধারকাজটি সম্পন্ন করে।

এ সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ মিয়ানমার সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তিনটি আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী উদ্ধার করার দায়িত্ব বাংলাদেশ দলকে প্রদান করে, যা তারা সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করে।

দলটি নেপিডোর বিভিন্ন এলাকায় ৪৫টি আবাসিক ভবন, ক্লিনিক ও শপিংমল চিহ্নিত করে নিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা শনাক্তকরণে সহায়তা করে। নেপিডো সেন্ট্রাল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনে যৌথ উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ দল একটি সমন্বিত পরিকল্পনা তৈরি করে, যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে।

বাংলাদেশের চিকিৎসা সহায়তাকারী দল নেপিডোর ৫০ শয্যার যবুথিরি হাসপাতাল, ১০০ শয্যা হাসপাতাল এবং ১০০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ও মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করে। সামরিক ও বেসামরিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং নার্সদের সমন্বয়ে গঠিত এ দল ১৭টি জটিল অস্ত্রোপচারের পাশাপাশি মোট ৮৮৫ জন আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দেয়।

বাংলাদেশের মানবিক কার্যক্রমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শোয়ে ব্যক্তিগতভাবে উদ্ধারকারী দল পরিদর্শন করেন এবং তাদের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিকল্পনা ও সমন্বয় সভায় তিনি ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অংশ নেন।

মিশন শেষে ১০ এপ্রিল মিয়ানমার সরকার একটি আনুষ্ঠানিক বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, যেখানে উপস্থিত ছিলেন, দেশটির স্টেট কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান, ডিফেন্স সার্ভিসের ডেপুটি কমান্ডার ভাইস সিনিয়র জেনারেল সো উইন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া মন্ত্রীসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। মিশনের কার্যক্রম মিয়ানমারের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পায়।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ মানবিক সহায়তা ও সশস্ত্র বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রতিবেশী দেশের প্রতি বাংলাদেশের সহানুভূতিশীল মনোভাব ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। এ উদ্যোগ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে। ভবিষ্যতেও দেশ-বিদেশে যেকোনো দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত ও অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সশস ত র ব হ ন মন ত র পর চ ল অন ষ ঠ সরক র সমন ব সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ