বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, সংবিধান সংস্কার সুপারিশের প্রস্তাবনা, প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি, মৌলিক অধিকার এবং আইন বিভাগ পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে। বিচার বিভাগ নিয়ে আলাদা আলোচনা করেছি। কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলো আবার আমাদের দলীয় ফোরামেও আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, এছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমিশনকে আমরা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। সেসব বিষয়ে কমিশন পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানাবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন বিএনপি নেতারা। নামাজ ও মধ্যহ্নভোজ সময়টুকু ছাড়া বিরতিহীন তা চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রথম দিনে শুধু সংবিধান এবং বিচার বিভাগ সংস্কারের আংশিক আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদদ) সংস্কার নিয়ে কথা হয়নি।

সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধানের সংস্কারে ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানিয়েছি। কমিশন কতটুকু গ্রহণ করবে, তা পরবর্তীতে দেখা যাবে। আস্থা-অনাস্থা ভোট এবং সংবিধানে সংশোধনে যদি ৭০ অনুচ্ছেদ না থাকে, সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি মতামত দিয়েছে, অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধন বিল, আস্থাভোট ও জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতিত এমপিরা স্বাধীন থাকবেন। চর্চার মাধ্যমে গণতন্ত্র সমৃদ্ধি হয়। আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারিনি, ভবিষ্যতে যদি সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতায় যদি সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারি, তাহলে ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে তখন উম্মুক্ত করা যেতে পারে।

গণভোট ও সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরও গণভোট লাগবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে। 

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিযোগের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় স্পিকারসহ ৯ সদস্যের এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এতে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমবে। 

সালাহউদ্দিন আহমদে বলেছেন, এনসিসি নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়নি। তবে দফাওয়ারি আলোচনার শুরুতেই জানিয়েছি, বিএনপি এনসিসি গঠনের ধারণার সঙ্গে একমত নয়। এনসিসির চর্চা নেই দেশে। হঠাৎ তা করলে রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাহী বিভাগ এবং সংসদ দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে। যে সময় সংসদ থাকবে না বা সংসদ ভেঙ্গে যাবে, তখন এনসিসি খুব বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অন্যকিছু করে কিনা, তা দেখতে হবে।

বিএনপি আগেই জানিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকারের করা পঞ্চদশ সংশোধনী আগে সংবিধানের যে চার মূলনীতি ছিল, তা পুনর্বহাল করতে হবে। এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের করা চার মূলনীতি পুনর্বহাল তথা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ ফেরত চায়। 

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘এখানে একটা ভুল বোঝার কারণ ছিল, কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ অন্যান্যগুলো বাতিলে জন্য প্রস্তাব করেছে। বিএনপি চেয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ব অবস্থায় যাওয়া হোক। ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ মূলনীতি হিসেবে থাকবে। সুতরাং বিএনপি বহুত্ববাদের পক্ষেও নয়,  ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষেও নয়। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রয়েছে, সেগুলো প্রস্তাবনা ও মূলনীতিতে অর্ন্তভুক্ত করা যায় কিনা কমিশন প্রস্তাব করেছে। এতে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত। তবে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে জানাবে কমিশনকে’। 

বৈঠক সূত্র জানায়, বিচার বিভাগ সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশে ভিন্নমত জানানো বিএনপি বলেছে, এজন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চায়, তবে তা করবে পরবর্তী সংসদ। বিএনপি দলের ৩১ দফা অনুযায়ী, বিচার বিভাগের সংস্কার চায়। উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের অন্তর্বর্তী সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, সে জন্যও সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন বলে দলটি অভিমত জানিয়েছে। 

সালাহউদ্দিন আহমদ সমকালকে বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য আছে, আবার কিছু বিষয়ে মতপার্থক্যও আছে। কমিশনের কিছু যুক্তি গ্রহণ করেছি। যেগুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আবার বিএনপির অধিকাংশ যুক্তিও কমিশন নোট নিয়েছে। এভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে যেতে পারবো বলে আশাবাদী। 

দিনভর আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের সুপারিশের অধিকাংশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশে ভিন্নমত জানানো বিএনপি; আলোচনার টেবিলেও এতে রাজি হয়নি। আগামী রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবে দলটি। 

আলোচনার আগে গত বুধবার রাতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১ সুপারিশের ওপর ৫১ পৃষ্ঠার এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিপরীতে ৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয় বিএনপি। ‘ফুল রেসপন্স’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে উভয় কমিশনের প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে দলীয় অবস্থানের বিস্তারিত জানিয়েছে।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ স ল হউদ দ ন অন চ ছ দ প রস ত ব ঐকমত য এনস স র ওপর ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল

জুলাই জাতীয় সনদ ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার অবসান ঘটিয়ে সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দিকে মনোযোগী হতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে। আপনারা দয়া করে ওই সমস্যাগুলো সমাধান করে যাতে সবাই একসঙ্গে আমরা নির্বাচনের দিকে যেতে পারি, এই সমস্যার সমাধান করে আমরা জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করতে পারি, সেই পথে এগিয়ে চলুন।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

এদিন সকালেই জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দেশ ও জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তরের পর থেকে বিএনপি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে সংস্কার প্রস্তাবগুলোই শুধু উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কমিশনের সভায় আলোচনা হয়নি, এমন বিষয়ও যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট নিয়েও আপত্তি রয়েছে বিএনপি।

গণসংহতি আন্দোলনের অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে সংকট তৈরি করেছে এই অন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন, আমি বিশ্বাস করি যে এই সংকট কেটে যাবে। এই দেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। পরাজয় বরণ করেনি, পরাজয় বরণ করবে না।’

আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: মির্জা ফখরুল৩ ঘণ্টা আগে

যেকোনো চক্রান্তকে পরাজিত করতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ থাকার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘যে ষড়যন্ত্র আমাদের বিরুদ্ধে হচ্ছে, তাকে পরাজিত করতে হবে। এখানে আমরা বিভিন্ন দল করতে পারি, বিভিন্ন মত থাকতে পারে, বিভিন্ন পথ থাকতে পারে, কিন্তু একটা বিষয়ে আমরা সব সময় এক ছিলাম, বাংলাদেশের ব্যাপারে; সবার আগে বাংলাদেশ—এ ব্যাপারে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। রাজনৈতিক জীবনে হতাশাবাদী নই; কারণ, আমি বিশ্বাস করি যে ন্যায়ের জয় হবেই, সত্যের জয় হবে।’

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে থাকা গণসংহতি আন্দোলনের সাফল্য কামনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন অতীতে আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, সব সময় আপনাদের সঙ্গে থাকব; কিন্তু অবশ্যই আপনাদেরকে নিজে এই যে জায়গা তৈরি করেছেন, তার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্য কেউ সেটা করে দেবে না।’

শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে গণসংহতি আন্দোলনের জাতীয় সম্মেলনের সূচনা করেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা এবং শহীদ ওমর নুরুল আবছারের স্ত্রী ফারজানা জাহান। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, নারীর রাজনৈতিক অধিকার ফোরামের সংগঠক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা প্রমুখ।

কৃষক-শ্রমিক, খেটে খাওয়া, নিপীড়িত ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায্য হিস্যার দাবি এবং ‘বৈষম্যহীন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ, অধিকার ও মর্যাদার বাংলাদেশ, জনগণের বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকারে গণসংহতি আন্দোলন তাদের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন করছে। তিন দিনের এই আয়োজনে সারা দেশ থেকে প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকরা দলের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন।

আরও পড়ুনঅন্তর্বর্তী সরকার ও ঐকমত্য কমিশন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে: মির্জা ফখরুল৩ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
  • তড়িঘড়ি না করে সংবিধান সংস্কারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান
  • কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্য কমিশনে গিয়ে ফাঁদে পড়েছে: জাপা মহাসচিব
  • দেশের মানুষ ১৭ বছর ধরে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে: সাইফুল হক
  • ঐকমত্য কমিশন হাজির করেছে অনৈক্যের দলিল: বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন
  • জুলাই সনদে সই না করা অংশের দায় নেব না: মির্জা ফখরুল
  • ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ‘অশ্বডিম্ব’ বললেন সিপিবি সভাপতি
  • জুলাই সনদ নিয়ে জট খুলুন, সময় কিন্তু চলে যাচ্ছে
  • সমস্যা সমাধান করে নির্বাচনের পথে এগোন: অন্তর্বর্তী সরকারকে মির্জা ফখরুল
  • যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান: তুরস্ক