Samakal:
2025-06-15@22:58:01 GMT

 শৈশবে নিয়ে গেল যৌবনের দিন

Published: 17th, April 2025 GMT

 শৈশবে নিয়ে গেল যৌবনের দিন

সাবিত্রী মণ্ডলের (২৮) ছেলেটি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। মেয়েটি পড়ছে তৃতীয় শ্রেণিতে। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে বাড়ি তাদের। প্রতিদিন এক কিলোমিটার দূরের মাগুরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে তারা। স্বল্প সময়েই পাকা রাস্তা ধরে ছেলেমেয়েরা আসা-যাওয়া করে। বিষয়টি সাবিত্রীর শৈশবে ছিল কল্পনার মতো। তিনি যখন কাছাকাছি দূরত্বের তপোবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন, তখন ধুলা-কাদার জন্য প্রতিদিন পথে ভোগান্তি পোহাতে হতো। 
সাবিত্রীর স্বামী পরিমল চন্দ্র পেশায় কৃষক। তাদের দু’জনের শৈশবই কেটেছে কাঁঠালিয়া গ্রামে। দুই সন্তানের যাতায়াতে কষ্ট কমায় পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছে বলে খুশি তারা। শৈশব-কৈশোরে বিদ্যালয়ে যাওয়ার স্মৃতি রোববার তুলে ধরেন সাবিত্রী। তিনি বলেন, রাস্তায় অনেক কাদা থাকত, স্কুলে যাওয়া-আসার সময় জামাকাপড়, বইপত্র নষ্ট হয়ে যেত। এতে অনেক সময়ই মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরতেন। এখন বাড়ির পাশেই পিচঢালা সড়ক।
উপজেলা সদর থেকে মাগুরখালীর দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার। ১৭-১৮ বছর আগে এই জনপদ ছিল অবহেলিত। বর্ষাকালে কাদামাটি আর শুকনো মৌসুমে ধুলায় একাকার হয়ে যেত এলাকার রাস্তাঘাট। ২০০৭ সালের ২৭ আগস্ট দৈনিক সমকালে ইউনিয়নবাসীর দুর্ভোগ নিয়ে একটি ফটোফিচার ছাপা হয়। তখন ডুমুরিয়া সদর থেকে খুলনা শহর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার পথ পেরোতে লাগত আধা ঘণ্টারও কম। একই জায়গা থেকে মাগুরখালী ইউপি পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার পথে লেগে যেত আট ঘণ্টা। এখন মাত্র ২০-২২ মিনিটেই পাড়ি দেওয়া যায়। 
২০০৭ সালে ১৬ হাজার লোকের বসবাস ছিল ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামে। সব মিলিয়ে ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ২৮টি সড়কের কোনোটিতেই পিচঢালা ছিল না। মাত্র দেড় কিলোমিটার সড়কে বিছানো ছিল ইট (সোলিং)। বাকি সড়ক ছিল কাঁচা আর খানাখন্দে ভরা। পুরো ইউনিয়নে তখন কোনো সেতু বা কালভার্ট ছিল না। এখন পাঁচটির মতো কালভার্ট ও একটি সেতু আছে। ইউনিয়নে ২০০৭ সালে ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি বালিকা বিদ্যালয় ও একটি মহাবিদ্যালয়, একটি পুলিশ ক্যাম্প এবং একটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র ছিল। এসব প্রতিষ্ঠান ঠিকই আছে। মহাবিদ্যালয়টি সম্প্রতি এমপিওভুক্ত হয়েছে।
মাগুরখালী ইউনিয়নের প্রায় সব জায়গা এখন ঝলমলে। মসৃণ পিচের সড়ক দিয়ে চলছে যান্ত্রিক যানবাহন। পাশেই দেখা যায় আধুনিক বাড়িঘর। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে বদলে গেছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। মাগুরখালী গ্রামের শ্রমজীবী নিরঞ্জন মণ্ডল (৭৫) বলেন, ‘আর বলবে না বাবা। ১৪-১৫ বছর আগে বর্ষাকালে মনে হতো দ্বীপের মধ্যে বসবাস করছি। গ্রামের বাজারে যেতে পারতাম না, ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে যেতে কষ্ট হতো। অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছিল আরও কঠিন। পাকা রাস্তার জন্য কত যে ধরনা দিয়েছি!’
একই গ্রামের কৃষক অশোক কুমার মণ্ডলের (৫৯) ভাষ্য, এখন তো জীবনটাই পাল্টে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বেড়েছে, ছেলেমেয়েরা সহজে স্কুল-কলেজে যেতে পারছে। দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানো যায়। এই পাকা রাস্তাঘাট তাদের জন্য আশীর্বাদ। একসময় দেড় কিলোমিটার দূরের মাগুরখালী বাজারে যেতেও ঘাম ছুটে যেত। 
এ ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুভাষ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, এখন ইউনিয়নের বাসিন্দা ২০ হাজারের মতো। ২০০৭ সালে যে রাস্তা ছিল, এর বাইরেও নতুন করে ছোট-বড় প্রায় দ্বিগুণ রাস্তা হয়েছে। অধিকাংশ রাস্তাই পিচের ঢালাই ও সোলিং করা। 
আড়তগুলোতে মাছ সরবরাহ করেন পার মাদারতলা গ্রামের বিধান রায়। মাগুরখালী বাজারে ভ্রাম্যমাণ সবজির দোকান নিহার মণ্ডলের। এ দু’জন অতীতের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, আগে মালপত্র আনা-নেওয়া খুব কষ্টের ছিল। খরচও বেশি পড়ত। এখন যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। 
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় এখানে শিক্ষা, কৃষি, মৎস্য ও নানামুখী নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানান ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনোজ সরকার। তিনি বলেন, এক সময় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট ছিল। এখন আর নেই। তবুও বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে এখনও গ্রামীণ সড়ক বেহাল। বেশ কিছু জায়গায় বাঁশের সাঁকো রয়েছে। 
ইউপি চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ সানা সমকালে অবহেলিত ইউনিয়নবাসীর দুর্ভোগ তুলে ধরায় ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এই উন্নয়ন দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে রাস্তঘাট পাকা করার উদ্যোগও নেওয়া হয়। সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্পে স্থানীয় মানুষও সহায়তা করেন। 
ইউনিয়নটির প্রায় সবখানে পিচ ও সোলিং করা রাস্তা আছে। এ তথ্য জানিয়ে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো.

রবিউল ইসলাম বলেন, ৩২৯ কোটি টাকা খরচে ঘ্যাংরাইল নদীর ওপর ৩১৫ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মিত হয়েছে। এর পূর্বপারে সাহস ও পশ্চিমপারে মাগুরখালী। এই সেতুটি মানুষের জীবনমান পাল্টে দিয়েছে। 
ডুমুরিয়ার ইউএনও মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, মাগুরখালীর একটি কলেজও এমপিভুক্ত হয়েছে সম্প্রতি। ওই এলাকা যেন সরকারি বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।
পাশের ফুলতলা উপজেলায় বাড়ি অর্থনীতিবিদ ড. মো. মাহবুব-উল ইসলামের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট ফ্রান্সিস ইউনিভার্সিটির ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্স বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এখন বাড়িতেই থাকেন। ড. মাহবুব-উল ইসলাম মনে করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনীতি ও সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোনো এলাকা উন্নত করতে হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার বিকল্প নেই। কারণ যোগাযোগের সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক নিবিড়। কোনো ব্যবসায়ী যদি পাঁচ ঘণ্টার পথ আধা ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছাতে পারেন, তাহলে সময় বাঁচবে। বাকি সাড়ে চার ঘণ্টা তিনি অন্যান্য কাজে ব্যয় করতে পারেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য গ য গ ব যবস থ ২০০৭ স ল সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ‌্যান

২০২১ সালের পর শ্রীলঙ্কায় টেস্ট খেলতে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। গল ও কলম্বোতে হবে দুই দলের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। যা দিয়ে দুই দলই আইসিসি টেস্ট চ‌্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২৭ চক্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। যেহেতু টেস্ট চ‌্যাম্পিয়নশিপের ম‌্যাচ, দুই দলই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়বে বলাই যায়। মুখোমুখি লড়াইয়ে মাঠে নামার আগে তাদের আগের পরিংস‌্যান কেমন ছিল সেগুলোতে চোখ দেয়া যাক— 

‘‘১৩’’
দুই দল এর আগে ১২টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে। এবারের সিরিজটি হতে যাচ্ছে ১৩তম। আগের ১২ সিরিজে বাংলাদেশ একটিতেও জিততে পারেনি। ড্র করেছে কেবল একটি। বাকি ১১টিতেই জয় শ্রীলঙ্কার। 

‘‘১’’
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একবারই শ্রীলঙ্কাকে টেস্টে হারাতে পেরেছে। ২৬ মুখোমুখি লড়াইয়ে ২০টিতে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ড্র হয়েছে ৫ ম‌্যাচ।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের বিপক্ষে হোম সিরিজে টেস্ট দল ঘোষণা শ্রীলঙ্কার

বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফরের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি

‘‘৭৩০/৬’’
বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা দুইবার সাতশর বেশি রান করেছে। দুটিই বাংলাদেশের মাটিতে। ২০১৪ সালে ৭৩০ রান করেছিল ৬ উইকেটে। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে করেছিল ৭১৩ রান, ৯ উইকেটে। মুখোমুখি লড়াইয়ে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। 

‘‘৬২’’
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সর্বনিম্ন রান ৬২। বাংলাদেশ ২০০৭ সালে কলম্বোতে এই রানে অলআউট হয়েছিল। 

‘‘ইনিংস ও ২৪৮ রানে জয়’’
শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে আট ম‌্যাচে ইনিংস ব‌্যবধানে হারিয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় ইনিংস ও ২৪৮ রানে, ২০১৪ সালে মিরপুরে। রানের ব‌্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় ৪৬৫ রানের। ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে এই জয় পেয়েছিল লঙ্কানরা। 

‘‘১৮১৬’’
দুই দলের ব‌্যাটসম‌্যানদের মধ‌্যে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন কুমার সাঙ্গাকারা। ১৫ ম‌্যাচে ১৮১৬ রান করেছেন ৭টি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে। 

‘‘৩১৯’’
সাঙ্গাকারা তার একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি পেয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে। ৩১৯ রান করেছিলেন বাঁহাতি ব‌্যাটসম্যান। যা দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব‌্যক্তিগত রানের ইনিংস। 

‘‘৭’’
সর্বাধিক রান, সর্বোচ্চ রানের সঙ্গে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিতেও সাঙ্গাকারা এগিয়ে। ৭ সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। জয়াবর্ধনে ও চান্দিমালের রয়েছে ৫টি করে সেঞ্চুরি। 

‘‘০’’
ডাকের রেকর্ডে সবার ওপরে যৌথভাবে রয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবাল। দুজন ৪টি করে ডাক পেয়েছেন। 

‘‘৪৯৯’’
এক সিরিজে সর্বোচ্চ ব‌্যক্তিগত রানের ইনিংসটিও সাঙ্গাকারার দখলে। ২০১৪ সালের সফরে ২ ম‌্যাচে ৩ ইনিংসে ৪৯৯ রান করেছিলেন। 

‘‘৮৯’’ 
মুত্তিয়া মুরালিধরন বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১ ম্যাচে ৮৯ উইকেট নিয়েছেন। যা দুই দলের ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ। 

‘‘৮৯/৭’’
রঙ্গনা হেরাথ দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ‌্যে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড নিজের কাছে রেখেছেন। ৮৯ রানে ৭ উইকেট পেয়েছিলেন ২০১৩ সালে। 

‘‘১২’’
হেরাথ ও মুরালিধরন ম‌্যাচে ১২টি করে উইকেট পেয়েছেন এক টেস্টে। ২০০৭ সালে ক্যান্ডিতে মুরালিধরণ ৮২ রানে ১২ উইকেট এবং ২০১৩ সালে হেরাথ ১৫৭ রানে ১২ উইকেট পেয়েছিলেন। 

‘‘১১’’
সর্বোচ্চ ১১বার মুরালিধরন ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট পেয়েছেন। 

‘‘২১৯’’
তাইজুল ইসলাম ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে ২১৯ রান দিয়েছিলেন ৬৭.৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে। যা এক ইনিংসে সবচেয়ে ব‌্যয়বহুল বোলিং ফিগার।

‘‘২৬’’
এক সিরিজে সর্বোচ্চ ২৬ উইকেট পেয়েছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। ২০০৭ সালে ৩ ম‌্যাচের সিরিজে ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন কিংবদন্তি অফস্পিনার।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ‌্যান