বাম বিকল্প রাজনৈতিক ধারা গড়ে তোলার আহ্বান
Published: 18th, April 2025 GMT
লুণ্ঠনের বুর্জোয়া ধারা ও ধর্মীয় মৌলবাদী ধারার বিপরীতে বাম বিকল্প রাজনৈতিক ধারা গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ।
বাসদের সমর্থক–শুভানুধ্যায়ীদের ২১তম বার্ষিক মিলনমেলায় বজলুর রশীদ এ আহ্বান জানান। রাজধানীর তোপখানার বিএমএ মিলনায়তনে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দিনব্যাপী চলে এই আয়োজন।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অনুষ্ঠানে সারা দেশের ছয় শতাধিক সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী অংশ নেন। বিভিন্ন বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষক, সাংবাদিক ও আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষও অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বাসদের কার্যক্রম, রাজনৈতিক সংগ্রাম, পরামর্শ, সমালোচনা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ বলেন, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকাতে হলে বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী ধারা ও মৌলবাদী ধারার বিপরীতে বাম ও উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির সমন্বয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি।
বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে যে আশাবাদ গড়ে উঠেছিল, তা ক্রমাগত ফিকে হয়ে যাচ্ছে। কারণ, বৈষম্যের বিলোপের স্লোগানে আকৃষ্ট হয়ে মানুষ গণ–অভ্যুত্থানে শামিল হলেও একই শ্রেণির এক অংশকে হটিয়ে অপর অংশ শাসনক্ষমতায় যাওয়ায় গত আট মাসেও জীবনযাত্রার ব্যয় কমেনি। আইনশৃঙ্খলার অবনতি থামেনি। গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য যে নির্বাচন, তা নিয়েও ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মিলনমেলায় অন্যদের মধ্যে আলোচনা করেন বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবিদুর রেজা, সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, গণতন্ত্রী পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব সুজা উদ্দিন, সাংবাদিক কুদরত ই খুদা, ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন, নারী নেত্রী বহ্নিশিখা জামালী প্রমুখ।
মিলনমেলায় ছিল কবিতা আবৃত্তি, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনসহ নানা আয়োজন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাসদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড নিখিল দাস।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি ডলার ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ
ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও টেলিকম কর্মকর্তা বঙ্কিম ব্রহ্মভট্টের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ওই জালিয়াতির তিনিই মূল পরিকল্পনাকারী বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এই কেলেঙ্কারির কারণে ব্ল্যাকরকের ঋণ শাখা এবং আরও কয়েকটি বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী সংস্থার ৫০ কোটি কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কভিত্তিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক বিশেষ প্রতিবেদনে এটিকে ‘বিস্ময়কর’ আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
কে এই বঙ্কিম ব্রহ্মভট্ট
ব্রহ্মভট্ট বৈশ্বিক টেলিকম-পরিষেবা শিল্পে অপেক্ষাকৃত অপরিচিত দুটি সংস্থা—ব্রডব্যান্ড টেলিকম ও ব্রিজভয়েসের সঙ্গে যুক্ত। দুটি সংস্থাই ব্যাঙ্কাই গ্রুপের অধীনে কাজ করে।
২০২৫ সালের জুলাই মাসে ব্যাঙ্কাই গ্রুপ এক্স (পূর্বের টুইটার)-এর একটি পোস্টে ব্রহ্মভট্টকে প্রেসিডেন্ট এবং সিইও হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
এক্সে দেওয়া ব্যাঙ্কাই গ্রুপের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে—‘টেলিকমিউনিকেশন শিল্পে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নেতা, যারা টেলকো, অপারেটর এবং আরও অনেকের সঙ্গে টেলিকম প্রযুক্তি ও ক্যারিয়ার ব্যবসায়িক সৌহার্দ্যকে লালন করে।’
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট অনুসারে, ব্রহ্মভট্টের প্রতিষ্ঠান সারা বিশ্বের টেলিকম অপারেটরদের অবকাঠামো ও সংযোগের সরঞ্জাম সরবরাহ করে।
মনে হচ্ছে, ব্রহ্মভট্টের লিঙ্কডইন প্রোফাইলটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কয়েক মাস আগেও ব্রহ্মভট্ট নিউইয়র্কের গার্ডেন সিটিতে অফিস চালাতেন।
জালিয়াতির ধরন
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে করা মামলায় দাবি করা হয়েছে, ব্রহ্মভট্টের প্রতিষ্ঠানগুলোর ৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ বকেয়া রয়েছে। ব্ল্যাকরকের এইচপিএস ইনভেস্টমেন্ট পার্টনার্সের নেতৃত্বে ঋণদাতারা তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়া চালান ও ভুয়া পাওনা অ্যাকাউন্ট তৈরি করার অভিযোগ এনেছেন। বড় অঙ্কের ঋণের জন্য জামানত হিসেবে ওইসব অ্যাকাউন্ট বানানো হয়েছিল।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ব্রহ্মভট্টের প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল যখন ভারত ও মরিশাসে স্থানান্তর করা হয়েছিল, তখন তাদের নেটওয়ার্ক কাগজে-কলমে আর্থিক শক্তির একটি মায়াজাল তৈরি করা হয়েছিল।
তবে ব্রহ্মভট্টের আইনজীবী এই জালিয়াতির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ঋণদাতারা দাবি করেছেন, ব্রহ্মভট্ট কারিওক্স ক্যাপিটাল ও বিবি ক্যাপিটাল এসপিভির মতো আর্থিক সংস্থার এক জটিল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন, যা ব্ল্যাকরকের মতো কয়েকটি বেসরকারি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল।
মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ব্রহ্মভট্ট ভুয়া গ্রাহক চালান তৈরি করেন এবং সেই জাল কাগজপত্র দিয়ে জামানত তৈরি করে তার বিপরীতে ৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, পরে তিনি ভারত ও মরিশাসে সম্পদ স্থানান্তর করেন। এখন তাঁর দুটি কোম্পানি এবং ব্রহ্মভট্ট নিজে দেউলিয়া হওয়ার আবেদন করেছেন।
গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ব্রহ্মভট্টের আইনজীবী কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, জালিয়াতির সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।