ট্রাম্প-সি-মোদি এসে বাংলাদেশে কিছু করে দিয়ে যাবেন না: মির্জা ফখরুল
Published: 19th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এ দেশের মানুষকে ঠিক করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশটা আমাদের, এর ভবিষ্যতও আমাদের নির্মাণ করতে হবে। আমেরিকা থেকে ট্রাম্প এসে ঠিক করে দেবেন না বা চীন থেকে সি এসেও এটা করে দেবেন না কিংবা ভারত থেকে মোদিও আমাদের ধাক্কা দিয়ে কিছু করতে পারবেন না। এ বিষয় আমাদের অন্তরে গেঁথে নিতে হবে।’
আজ শনিবার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সেমিনার হলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ক্ষমতায়ন: নেতৃত্ব, ঐক্য এবং প্রবৃদ্ধির পথ’শীর্ষক এক আলোচনায় মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে বহু সমস্যা আছে, এর জন্মই হয়েছে বহুত্ববাদের মধ্য দিয়ে, এটা নিয়ে অনেকে ভুল–বোঝাবুঝি করেন। বহু চিন্তার মধ্য দিয়ে, অনেক চিন্তা এসে এখানে একসঙ্গে হয়েছে। স্বাধীনতার সময় আমাদের নেতা অনেকেই ছিলেন। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, মাহবুব উল্লাহ্ তখন বড় নেতা ছিলেন।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘তখন আমাদের একেকজনের একেক চিন্তা ছিল। কেউ সমাজতন্ত্র, কেউ কমিউনিজম, কেউ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত করার চিন্তা করেছেন। তারপর যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আমরা সবাই এক হয়েছি এবং এক হয়ে লড়াই লড়েছি। আজ ২৪–এ একই ঘটনা ঘটেছে, বিভিন্ন চিন্তাভাবনা নিয়ে আমরা এসেছি, যেদিন ছাত্রদের ওপর গুলি শুরু হয়েছে, সবাই রাস্তায় নেমে এসেছে।’
‘প্রায় শত বছর ধরে আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ লড়াইয়ে আমাদের অনেক ত্যাগ আছে, অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। কিছুদিন আগেই আমাদের কয়েক হাজার তরুণ-তাজা প্রাণ চলে গেছে।’ তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁদের ত্যাগের কারণেই বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটি সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, সুখী দেশের স্বপ্ন দেখছে প্রতিষ্ঠার পর থেকে।’
আমাদের চারদিকের অবস্থা, টেলিভিশনের টক শো, বিদ্যান মানুষের বক্তৃতা—সবকিছু শুনে সবাই কেমন যেন হতাশ হয়ে পড়ছেন বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘(সবাই) বলছেন, এত যে রক্তপাত হলো, এত রক্ত ঝরল, এত মায়ের বুক খালি হলো—কী হবে এর শেষ পরিণতি? আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পরিণতি খুব ভালো হবে। কারণ, আমরা বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল ভালোর জন্য লড়াই করেছি এবং জয়ী হয়েছি।’
আজকের বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন, তার সবটা তরুণদের জন্য হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে একেবারে ২৪–এর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সামনে থেকে ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করেছেন আমাদের ছেলেমেয়েরা এবং সেখানেই আমাদের শক্তি।’
দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘তাঁদের কথা কেউ বলেন না। আমাদের কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ, বৈষম্য তো তাঁদের কাছে, পুরো বৈষম্য তো সেখানে। তাঁদের কথা বলা দরকার, তাঁরা হেসেখেলে তাঁদের কাজ করছেন এবং বাংলাদেশকে টেনে তুলে ধরছেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে মির্জা ফখরুল শঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘যদি এর সুরাহা করা না যায়, তবে আরও বড় বিপদে পড়তে হবে। আমার মনে হয়, কৃষক ও কৃষির সঙ্গে জড়িতদের যদি আমরা এগিয়ে আনতে পারি, তাঁদের কাজ দিতে পারি, তাঁদের নতুন প্রযুক্তি দিতে পারি, তবে সমস্যাগুলো আমরা অতিদ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারব।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক সমস্যা আমাদের আছে, বরাবরই আছে। দেড় শ বছর যখন এখানে ব্রিটিশরা শাসন করেছে (তখনো ছিল)। পলিটিক্যাল তর্ক করা আমাদের মজ্জাগত। আমরা চায়ের দোকানে বসে পলিটিক্যাল আলাপ করি।’
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন, আমরা সবাই এক হয়ে কাজ করি, সমস্যা আছে, সমস্যার সমাধান হবে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো চলে গেছে। আমি প্রফেসর ইউনূসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন। আমার বিশ্বাসও আছে, তিনি সফল হবেন। আসুন, সবাই মিলে তাঁকে সাহায্য করে আমরা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করি। তবে একটা কথা, গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই এবং গণতন্ত্রকে কখনো চাপিয়ে দেওয়া যায় না—এটা চর্চা করতে হবে।’
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে এক ভিডিও বার্তা দেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র আম দ র সমস য ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্যের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটি বলেছে, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শুধু কথায় নয়, বাস্তবে সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পদক্ষেপ দেখতে চায়।
শুক্রবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
তারা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক ও বিবৃতিতে আগামী বছরের পবিত্র রমজানের আগেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের ঘোষিত প্রত্যয়ে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাঠামোগত মৌলিক সংস্কার এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের ব্যবস্থা। এই বিষয় দুটির দৃশ্যমান অগ্রগতিই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনা করতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সমাজের শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের মতামত, আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের আহ্বান জানায় জেএসডি।