Samakal:
2025-09-18@09:22:16 GMT

কেড়ে নিচ্ছে জীবনের স্বপ্ন

Published: 19th, April 2025 GMT

কেড়ে নিচ্ছে জীবনের স্বপ্ন

নানা চড়াই-উতরাই, পরিবর্তন আর বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে পথ চলছে আমাদের এ নীল গ্রহ। মানুষের আগমনের আগেও ছিল এ পৃথিবী, ছিল প্রাণের বিকাশ। ২২ এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ১৯৭০ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে এ দিবস। অথচ একদিকে যুদ্ধ, দখলদারিত্ব, দাবানল, ভোগবাদী আগ্রাসন, অন্যদিকে এর প্রতিফল জলবায়ু পরিবর্তনের কঠিন বাস্তবতা। প্রকৃতি আজ ক্ষতবিক্ষত। জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে, গলে যাচ্ছে হিমবাহ, ডুবে যাচ্ছে উপকূল। পৃথিবীর ছোট একটি দেশ বাংলাদেশ, যার অস্তিত্ব জড়িয়ে আছে প্রকৃতির সঙ্গে। এখানেও আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি– নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, খরার প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলেছে।
কিছুদিন আগে উত্তরবঙ্গজুড়ে দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে না পেতে উপকূল ও পাহাড়জুড়ে ব্যাপক পানি সংকট দেখা দেয়। পানির জন্য পাড়ি দিতে হচ্ছে সাত থেকে আট কিলোমিটার। প্রাকৃতিক, মানবসৃষ্ট ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশের নদীগুলোর ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। এক সময়ের প্রাণবন্ত নদীগুলো আজ দখল, নাব্য হারানো এবং বিভিন্ন বাঁধ নির্মাণের ফলে মৃতপ্রায়। এসব কারণে বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে দেখা দিচ্ছে ভয়াবহ বন্যা; কারণ পানি নিষ্কাশনের পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার শুষ্ক মৌসুমে কম বৃষ্টিপাত ও নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ খরা। এ জলবায়ু ও নদী সংকটের ফলে দেশের খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কৃষিতে পানি সংকট দেখা দিচ্ছে; যা অর্থনীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। নদীভিত্তিক জীবিকায় নির্ভরশীল মানুষজন হারাচ্ছে তাদের আয়ের উৎস।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ও দুর্বল বেড়িবাঁধগুলো এখন নতুন করে দুর্যোগের আশঙ্কা তৈরি করেছে। সামান্য জলোচ্ছ্বাস বা ভারী বৃষ্টিপাতে ভেঙে পড়ছে এসব বাঁধ। যার ফলে প্লাবিত হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ ও ফসলি জমি। ঈদুল ফিতরের আগের দিন পূর্ণিমার কারণে জোয়ারের পানি সামান্য বাড়ার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ে বেড়িবাঁধ। ঈদের দিন যখন মানুষ নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছে কিংবা মসজিদে প্রার্থনায় মগ্ন, ঠিক সেই সময় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উচ্চতার জোয়ারে ভেঙে পড়ে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বিছট এলাকার বেড়িবাঁধটি। খবর পেয়ে স্থানীয় জনগণ দ্রুত বাঁধ রক্ষার চেষ্টা চালান, তারা তৈরি করতে চেয়েছিলেন অস্থায়ী প্রতিরক্ষা। সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। কিছু সময়ের ব্যবধানে আশাশুনির অন্তত ১০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ে গ্রামাঞ্চলে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার। ঈদের আনন্দ পরিণত হয় কান্না, আতঙ্ক ও অসহায়ত্বে। জোয়ারের পানিতে শুধু একটি বাঁধ ভেঙে পড়েনি; তা ভেঙে দিয়েছিল হাজারো মানুষের স্বপ্ন, নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের ভরসা। যেসব পরিবার ঈদের দিন আনন্দে মেতে ওঠার কথা, তারা সেদিন তলিয়ে গিয়েছিল কান্না, আতঙ্ক ও বেদনার গভীরে। আব্দুল রশিদ সরদারের বাড়ি আশাশুনির বল্লপুরে। তিনি বলেন, ‘যখন বাঁধ বাঁধতে পারিনি, তখন বাড়ির দিকে ছুটতে লাগলাম। ফিরতে ফিরতে বাড়ি ভেঙে পড়েছে। আমার হাঁড়ি-পাতিলের ব্যবসা। এসে দেখি হাঁড়ি-পাতিল সব ভেসে গেছে। আমি এখন নিঃস্ব।’
মোহাম্মদ কাজল মোড়ল বলেন, ‘আমার ৬০টির মতো হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। দুটি ছাগল নোনাপানি খেয়ে মারা গেছে। ঘর ভেঙে গেছে। আমি একা কিছুই রক্ষা করতে পারিনি।’ এভাবে জহুরা খাতুনের পাঁচটি ছাগল আর ১০টি মুরগি মারা গেছে। ৮৪ বছরের নিলু রানীর তিনটি গরু যেন ভেসে চলে না যায়, তাই জানের মায়া না করে ওই পানির স্রোতকে উপেক্ষা করে ঠাই দাঁড়িয়ে ছিলেন গোয়াল ঘরে। আয়শা খাতুন আর তাঁর স্বামী কোনো জিনিস রক্ষা করতে পারেননি। তারা সাত মাস ও দুই বছর বয়সী দুই শিশুসন্তানকে রক্ষা করেন। রোমেলা খাতুন ঘর ভাঙার পর অন্যের বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। এখন ভাড়া বাড়িতে উঠেছেন। অনেকের ভাঙা ঘরগুলো আর নিরাপদ নেই। খোকন সরদার মাছ চাষ শুরু করেছিলেন। দেড় লাখ টাকা খরচের পর আয় করতে পেরেছেন মাত্র ১১ হাজার টাকা। এখন তিনি পুরো নিঃস্ব। আগের ঋণ শোধ করতে না করতেই আবারও ঋণগ্রস্ত হলেন। এ মানুষগুলোর জীবনে এখন শুধু ক্ষয়, বেদনা আর অনিশ্চয়তা। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষত শুধু বসতভিটা নয়, কেড়ে নিয়েছে জীবনের স্বপ্নগুলো। তারা কেউই আজ নিরাপদ নন– না খাদ্যে, না আশ্রয়ে, না ভবিষ্যতের নিশ্চয়তায়।
লবণপানির সঙ্গে যুদ্ধ করছেন শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনীর শেফালী বিবি। খোসপাঁচড়া-চুলকানি প্রতিদিন লেগে আছে। গত এক বছর আগে ফেলে দিতে হয়েছে জরায়ু। এখনও ইউরিন ইনফেকশন সারছে না তাঁর। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবার চাষ করতে পারেননি শাহিনুর ইসলাম। পদ্মপুকুরের লাইলিসহ দশ ঘর অন্য এলাকা থেকে মাইগ্রেশন হয়ে ওয়াপদার চরে বসবাস করছে। আইলা থেকে শুরু করে রিমাল পর্যন্ত প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় তাদের গৃহহীন করেছে।
এই বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে আমরা যখন পৃথিবীকে ভালো রাখার অঙ্গীকার করব, তখন আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের বাস্তবতা; যেখানে মানুষ প্রকৃতির বিরূপতার বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে।
এ দুর্যোগের পেছনে শুধু প্রকৃতির রুদ্ররূপ নয়। আছে অবহেলা, প্রস্তুতির অভাব এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নির্মম বাস্তবতা। বাংলাদেশের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মানুষ বারবার ঘর বাঁধে, আবার হারায়– তাদের স্বপ্নগুলো ভেসে যায় লবণাক্ত জোয়ারে, ভেঙে পড়ে দুর্বল বেড়িবাঁধে।
আজ আমাদের শুধু সহানুভূতিশীল হওয়াই যথেষ্ট নয়। দরকার দায়িত্বশীলতা, টেকসই পরিকল্পনা, জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং মানুষের প্রতি অঙ্গীকার। দরকার প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা ও দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর প্রস্তুতি। যারা প্রান্তিক, যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তাদের কণ্ঠকে কেন্দ্রে রেখে গড়ে তুলতে হবে ভবিষ্যতের পথরেখা। কারণ পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের সবারই পরিবর্তিত হতে হবে। নয়তো এ নীল গ্রহে মানবসভ্যতা টিকে থাকা হয়ে পড়বে অনিশ্চিত। 
লেখক: উন্নয়নকর্মী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ রস ত আম দ র রস ত ত উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সুযোগ, সারা দেশে ৮টি কেন্দ্রে

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ প্রশিক্ষণের মেয়াদ দুই মাস। প্রশিক্ষণটি আগামী ১২ অক্টোবর শুরু হবে, চলবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ শেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সরকারি সনদ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীদের ৯ অক্টোবরের মধ্যে ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে আবেদন করতে হবে।

প্রশিক্ষণের বিষয়

১. বেসিক কম্পিউটার,

২. অফিস অ্যাপ্লিকেশন ও ইউনিকোড বাংলা,

৩. ইন্টারনেট,

৪. গ্রাফিক ডিজাইন,

৫. ফ্রিল্যান্সিং,

৬. মার্কেটপ্লেস ও কনসালটিং।

আরও পড়ুনহার্ভার্ড এনভায়রনমেন্টাল ফেলোশিপ, দুই বছরে ১ লাখ ৮৫ হাজার ডলার১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫আবেদনের যোগ্যতা

১. ন্যূনতম দাখিল বা সমমানের পরীক্ষায় পাস হতে হবে,

২. হাফেজদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হবে,

৩. উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে,

৪. প্রার্থীকে কম্পিউটার চালনায় বেসিক জ্ঞান থাকতে হবে,

৫. যাঁদের নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হাফেজ, ইমাম, মাদ্রাসাছাত্র ও বেকার যুবকদের বিনা কোর্স ফিতে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় কোর্সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।যে ৮টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

১. ঢাকা,

২. চট্টগ্রাম,

৩. রাজশাহী,

৪. খুলনা,

৫. বরিশাল,

৬. সিলেট,

৭. দিনাজপুর,

৮. গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুনবিনা মূল্যে ২ লাখ টাকার প্রশিক্ষণ, নন-আইটি স্নাতক শিক্ষার্থীদের সুযোগ ৭ ঘণ্টা আগেদরকারি কাগজপত্র

১. শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি,

২. জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি,

৩. এক কপি পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি জমা দিতে হবে,

৪. ইমামদের ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা ওয়ার্ড কমিশনারের কাছ থেকে নেওয়া ইমামতির প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে,

৫. মাদ্রাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছ থেকে ছাত্রত্ব প্রমাণের কপি জমা দিতে হবে।

নিবন্ধন ফি

মনোনীত প্রার্থীদের নিবন্ধন ফি হিসেবে ৫০০ টাকা দিতে হবে।

দেশের ৮টি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ