সংবিধানের মূলনীতি রাখার প্রয়োজন আছে কিনা– এই প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির অবস্থান হলো, যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, তারা দলীয় আদর্শকে মূলনীতি হিসেবে চাপিয়ে দিয়েছে। দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এবারও এ বিষয়ে ঐকমত্য সম্ভব নয়। তাই সংস্কারকে এগিয়ে নিতে মূলনীতি বাদ দেওয়া যায় কিনা, তা ভাবতে বলেছে তারা। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দিনভর বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন এনসিপি নেতারা। 

আলোচনা শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি মৌলিক সংস্কার চায়। এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা থাকতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের স্থায়ী পথ বের করতে হবে। এ নিয়েই আলোচনা হয়েছে। 

নাহিদ জানান,  কমিশনের সুপারিশ মতো অন্তর্বর্তী সরকার নয়, নির্বাচনকালীন সরকার চায় এনসিপি। নির্বাচনকালীন সরকার শুধু নির্বাচন-সংক্রান্ত কাজ করবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শাসিত নয়, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের প্রস্তাব করেছেন তারা। ৭০ অনুচ্ছেদ রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। অর্থবিল ও আস্থা ভোটে সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তে ভোট দেওয়ার কথা বলেছেন।

সাংবিধানিক নিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতায় লাগাম টানতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাব করেছে কমিশন। এনসিপি জানিয়েছে, এতে তারা একমত হলেও কোন প্রক্রিয়ায় এনসিসি গঠিত হবে, তা নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। 

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠক শুরু হয়। সূচনা বক্তব্য দেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বেলা ১১টায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়ে মাঝে মধ্যাহ্নভোজ ও নামাজের বিরতি দিয়ে তা বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে।

প্রথম দিনের বৈঠকে সংবিধান, বিচার ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে তিন কমিশনের সব সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়নি। আগামী মঙ্গলবার বা তার পরে আবার আলোচনা হবে। এতে কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, ড.

বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। দুপুরের বিরতির পর কমিশনের আরেক সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বৈঠকে যোগ দেন। 

এনসিপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন– সদস্য সচিব আখতার হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাভেদ রাসেল, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা। 

বাহাত্তরের সংবিধানে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্রকে মূলনীতি করে। ১৯৭৯ সালে বিএনপি ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস’কে মূলনীতি করে। দলটি আবারও জিয়াউর রহমানের শাসনামলের মূলনীতিতে ফিরতে চাচ্ছে।

 নাহিদ ইসলাম বলেন, সংবিধানে মূলনীতির মাধ্যমে দলীয় রাজনৈতিক অবস্থানকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। মূলনীতির প্রয়োজন আছে কিনা– প্রশ্ন রেখেছি। সংবিধানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং মৌলিক অধিকারের কথা বলা থাকে। এতে আলাদা করে মূলনীতির প্রয়োজন আছে কিনা?

আলোচনায় এনসিপির কী অবস্থান ছিল, তা তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পদে কেউ দু’বারের বেশি কেউ থাকতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী কখনও রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ পদ্ধতিতে সংসদের উভয় কক্ষের সদস্য ও প্রস্তাবিত ‘জেলা সমন্বয় পরিষদ’-এর ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সুপারিশ করেছিল সংবিধান সংস্কার কমিশন। সারোয়ার তুষার বলেন, এতে একমত হলেও স্থানীয় সরকারে সব জনপ্রতিনিধির ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন চায় এনসিপি। সংবিধান সংশোধনে উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনের পাশাপাশি গণভোটেরও পক্ষে দলটি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, নিরবচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট প্রাপ্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় রাজনীতিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে মনে করে এনসিপি। আগামীতে যাতে তা না হয়, এ ব্যবস্থা নিতে বলেছি। নির্বাচনের সময় কারা দায়িত্ব পালন করবেন, এ বিষয়ে আরও আলোচনা হতে পারে।

এ বিষয়ে আখতার হোসেন বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টা কারা কীভাবে হবেন, এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এনসিপি কিছু প্রস্তাব দিয়েছে। এনসিসির সদস্যদের মধ্যে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধীদলীয় নেতাকে বাদ রেখে অন্যদের থেকে কীভাবে নিয়ে আসা যায়, এ নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।

সংবিধান অনুযায়ী সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার হলেও এনসিপি আলাদা স্বাধীন কমিশন চেয়েছে। নাহিদ বলেন, আগের সীমানায় যেতে চাই না, বরং নতুন করে নির্ধারণ করতে হবে।

সংস্কারের সুপারিশ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে শনিবার আলোচনা হয়নি জানিয়ে নাহিদ বলেন, গণপরিষদের মাধ্যমে হতে হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প র ষ ট রপত প রস ত ব মন ত র এনস প ক ষমত সদস য য় এনস সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ