আমরা আর কত অপেক্ষা করব, প্রশ্ন গুম হওয়া বাবার সন্তানের
Published: 20th, April 2025 GMT
‘১৪ বছর হয়ে গেছে আমার বাবার কোনো সন্ধান পাই নাই। পাঁচ আগস্টের পর আমরা আশায় ছিলাম হয়তো সন্ধান পাব। কিন্তু এত দিন পার হলেও বাবার কোনো হদিস আমরা পাইনি। আমরা আর কত অপেক্ষা করব, আমাদের আর কত অপেক্ষা করতে হবে।’
কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন গুম হওয়া বাবার সন্তান নাবিলা নূর। গুমের শিকার হওয়া আরেক চালক কাওসারের মেয়ে লামিয়া মীম বলেন, ‘১২ বছর হয়ে গেছে আমি আমার বাবাকে চোখের দেখাও দেখতে পারিনি। আমার কি অধিকার নেই আমার বাবাকে দেখার। আমার বাবাকে যারা গুম করেছে তারা এখনো স্বাধীন বাংলাদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের কেন কোনো বিচার হচ্ছে না।’
আজ রোববার হাইকোর্ট সংলগ্ন মাজার গেটের সামনে জড়ো হয়ে আওয়ামী লীগের আমলে গুম হওয়া স্বজনদের খোঁজে মানববন্ধন করেছে গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’। এ সময় গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তাঁরা।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের শতাধিক স্বজন মানববন্ধনে অংশ নেন। বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনা পতনের আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো চিহ্নিত খুনিদের বিচার করা হয়নি। যারা গুম-খুনের মাস্টারমাইন্ড তাঁরা ৫ আগস্টের পরে পালিয়ে গেছেন বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। স্বজনেরা প্রশ্ন রাখেন, এখনো গুমের শিকার পরিবারগুলোকে এভাবে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে হবে কেন?
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি, গুম থেকে ফিরে আসা ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চামড়াশিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আমলের পুরোনো চক্র ও সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলন। এই সিন্ডিকেট ও চামড়াশিল্প ধ্বংসের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত ‘চামড়া শিল্পের নৈরাজ্য ও সিন্ডিকেট রুখো’ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মির্জা শরিফুল আলম। সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, কলামিস্ট মীর আবদুল আলীম, রাজনীতিবিদ নুরুজ্জামান হীরা, মানবাধিকারকর্মী আব্দুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ।
কয়েক বছর ধরে কাঁচাচামড়ার দাম কমছে। দাম না পেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নদী বা খালে ফেলে দিয়েছেন কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন– এমন ঘটনাও ঘটছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি বছর ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ট্যানারি মালিকদের। এর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির সময়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান বলেন, এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে। কোরবানিদাতাদের থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। সেসব চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার দাম পড়ে গেছে তলানিতে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বেশির ভাগ ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়েছে। বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। দেশে ও বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। অথচ কোরবানির চামড়া শিল্প নিয়ে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, বিদেশি চক্রান্তে দেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট শিল্পকে সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে। এবার আরেক সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। গত বছরের মতো এবারও কম দামে সব ধরনের চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। এতে করে গরিব-অসহায় মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।