হবিগঞ্জে জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম এলাকায় শতবর্ষী গাছসহ বেশ কয়েকটি বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন অনেকে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়- শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে গাছগুলো কাটা হয়।  গাছগুলো এতদিন পরিবেশ রক্ষা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামের পাশে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা গাছের ছায়ায় সময় কাটাতে আসতেন। এ ছাড়া নানা প্রজাতির পাখির আবাস ছিল এসব গাছে। হঠাৎ ওই এলাকার ৯টি গাছের মধ্যে ৫টি কেটে ফেলা হয়েছে। 

জানা যায়, জেলা পরিষদের নিলামের কার্যাদেশ অনুযায়ী গাছগুলো কাটা হচ্ছিল। একপর্যায়ে এলাকাবাসীর বাধায় গাছ কাটা বন্ধ করা হয়। 

জেলা পরিষদ সূত্র বলছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি পরিষদের মাসিক সভায় অডিটরিয়ামের দেয়াল সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেন কর্মকর্তারা। সে অনুযায়ী শুক্রবার বড় ৫টি গাছ কাটা হয়।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী মিজান আহমেদ বলেন, “গাছগুলোতে নানা প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ছিল। সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা সেখানে অবসর সময় কাটাতো। গাছগুলো কাটার ফলে এখন সে এলাকার পরিবেশের চিত্র ভিন্ন হয়ে গেছে।”  

কামাল আহমেদ নামে একজন বলেন, “সামান্য অজুহাতে গাছ কাটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এমন অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।”

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, “সরকার যখন পরিবেশ সংরক্ষণে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন একটি সরকারি স্থাপনায় শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলা দুঃখজনক। গাছ কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, “গাছ কাটা আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। দেয়াল সম্প্রসারণের সুবিধার্থে গাছগুলো কাটা হয়েছিল।”

ঢাকা/মামুন/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের মহব্বতপুর গ্রাম ঘেঁষে তুলশীগঙ্গা নদীর অদূরে সন্ন্যাসতলীর বটতলা। জায়গাটিতে প্রায় একশ বছর আগে থেকে বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ শুক্রবার আয়োজন হয় ঘুড়ির মেলা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অন্তত ৫০ গ্রামের হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবার সন্ন্যাসতলী ঘুড়ি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

মেলার দিনক্ষণ মনে রেখে সময়মতো দোকানিদের পাশাপাশি দর্শনার্থীরা ভিড় জমান নিভৃত পল্লীতে। আগে মেলার দিন বৃষ্টি হওয়া যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহের মধ্যেই চলে এ আয়োজন। বৈরী পরিবেশের কারণে উৎসবের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন, সন্ন্যাসতলীর এ ঘুড়ি উৎসব শুরুর দিন বিকেলে বটতলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় সন্ন্যাস পূজা পালন করেন। তাদের এ পূজা-অর্চনা ঘিরেই মূলত এ মেলার উৎপত্তি। তবে শুরুর কথা কেউ বলতে পারেননি। প্রবীণরা শুধু জানেন, একশ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এ মেলার আয়োজন দেখে আসছেন।

মেলার নিজস্ব জায়গা না থাকলেও এর ব্যাপ্তি প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই এক দিনের এ মেলা ঘিরেই জেলার জামালগঞ্জ চারমাথা থেকে ঐতিহাসিক আছরাঙ্গাদীঘি পর্যন্ত রকমারি পণ্যের দোকান বসে। এখান থেকে সংসারের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন আসবাব থেকে শুরু করে ছোট মাছ ধরার বাঁশের তৈরি পণ্য খলসানি, টোপা, ডালা, চালুন কিনে নেন অনেকে।

সুতার তৈরি তৌরা জাল, গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টান্ন, প্রসাধনী, মাটির তৈজসপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নাগরদোলার ব্যবস্থাও। আর মেলার বড় আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো ও বিক্রি। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছিলেন ঘুড়ি বিক্রি করতে।

প্রচণ্ড গরমের পাশাপাশি তেমন হাওয়া-বাতাস না থাকায় এবার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা সেভাবে জমে ওঠেনি। তবে ঘুড়ি বেচাকেনা ও শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উপলক্ষে আসা হাজার হাজার দর্শনার্থীর নিরাপত্তার জন্য মেলায় সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের টহল ছিল।

আদমদীঘির শিববাটি গ্রামের ঘুড়ি ব্যবসায়ী সালাম হোসেনের ভাষ্য, সন্ন্যাসতলীর মেলা বড় হওয়ায় তিনি এসেছেন ঘুড়ি বিক্রির জন্য। মেলায় প্রত্যাশা অনুযায়ী ঘুড়ি বিক্রি করতে পেরে তিনি খুশি। জয়পুরহাটের পার্বতীপুর এলাকার ঘুড়ি ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন ও মজনু সরদার বলেন, পূর্বপুরুষের আমল থেকে এ মেলার কথা শুনে আসছেন তারা।

মেলা উদযাপন ও পূজা কমিটির সদস্য মহব্বতপুর গ্রামের মন্টু মণ্ডল বলেন, মেলাটি হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এটি আসলে সব ধর্মালম্বীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। 

মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন হোসেনের ভাষ্য, এক দিনের আয়োজনে যে এত লোকের সমাগম হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। মেলায় যেন অনৈতিক কর্মকাণ্ড না হয়, সে ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক্ষেতলাল থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং মেলায় আসা দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক আছে। মেলায় অনৈতিক আচরণ লক্ষ্য করা গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তুলশীগঙ্গার তীরে সন্ন্যাসতলীর শতবর্ষী ঘুড়ির মেলা