আন্তঃজিলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন পাগলা শাখার নির্বাচিত কমিটির পক্ষে হাইকোর্টের রুল
Published: 21st, April 2025 GMT
বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক, কভার্ডভ্যান, মিনি ট্রাক চালক ইউনিয়নের নারায়ণগঞ্জের পাগলা শাখার (রেজি: নং- বি- ১৬৬৫) কার্যকরি কমিটিকে বৈধ ঘোষণা এবং তা বহাল রাখাসহ কোনো প্রকার হয়রানী না করার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক জজ মিয়ার দায়েরকৃত একটি রিটে (পিটিশন নং- ৬০০৪/২০২৫) হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদী দ্বয়ের গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ গত ১৩ এপ্রিল এই আদেশ প্রদান করেন।
এরআগে কমিটি নিয়ে জলঘোলা করছে একটি পক্ষ। নির্বাচিত কমিটি বাতিল করার প্রচেষ্টাও চালিয়েছে ওই পক্ষটি।
আদেশ অনুযায়ী বিভাগীয় শ্রম অধিপ্তর, নারায়ণগঞ্জের ডেপুটি ডাইরেক্টরের বরাবর ৩০ দিনের মধ্যে পাগলা শাখার নির্বাচিত কমিটির পক্ষে আইনগত সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক, কভার্ডভ্যান, মিনি ট্রাক চালক ইউনিয়নের নারায়ণগঞ্জের পাগলা শাখার কার্যকরি কমিটির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন।
এতে সদস্যদের বিপুল ভোটে শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন সভাপতি ও মো.
অভিযোগ উঠেছে, দেশের পট পরিবর্তনের পর পাগলা এলাকার এক শ্রমিক দল নেতা সুযোগ সন্ধানী হয়ে উঠেছে। ওই শ্রমিক দল নেতা ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা রেখে চললেও ৫ আগস্টের পর সে শ্রমিক দলের ব্যনার ব্যবহার করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
এমনকি বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক, কভার্ডভ্যান, মিনি ট্রাক চালক ইউনিয়নের নারায়ণগঞ্জের পাগলা শাখার (রেজি: নং- বি- ১৬৬৫) নির্বাচিত কার্যকরি কমিটি দখল করতে অযাচিত হস্তক্ষেপ সহ কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতাকে ম্যানেজ করে কলকাঠি নাড়ছে।
নির্বাচিত কমিটি বাতিলের লক্ষ্যে দৌড়ঝাপ চালানো সহ কেন্দ্রীয় এক নেতার মাধ্যমে চিঠিও ইস্যু করিয়েছে। তবে তা গঠনতন্ত্র বিরোধী হওয়ায় বাংলাদেশ আন্তঃজিলা ট্রাক, কভার্ডভ্যান, মিনি ট্রাক চালক ইউনিয়নের নারায়ণগঞ্জের পাগলা শাখার (রেজি: নং- বি- ১৬৬৫) পক্ষে সাধারণ সম্পাদক জজ মিয়া হাইকোর্টে রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেন।
এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারপতি রাজিক আল জলিল ও বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদী দ্বয়ের গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ আবুল হোসেন ও জজ মিয়ার নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত কমিটিকে বৈধ ঘোষণা এবং তা বহাল রাখাসহ কোনো প্রকার হয়রানী না করার আদেশ প্রদান করেন।
সাধারণ সম্পাদক জজ মিয়া জানান, মহামান্য হাইকোর্টের এই আদেশ অনুযায়ী আমরা শ্রম মন্ত্রণালয়, শ্রব অধিদপ্তর, ডিভিশনাল লেবার অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ ও ফতুল্লা মডেল থানায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছি।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র ব চ ত কম ট ব চ রপত জজ ম য় সহ ক ন কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।