পঞ্চগড়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের দাবিতে ৭ ঘণ্টা অনশন
Published: 22nd, April 2025 GMT
পঞ্চগড়ে নবনির্মিত ২৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রয়োজনীয় লোকবলসহ এক মাসের মধ্যে চালুসহ চীনের অর্থায়নে এক হাজার শয্যার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবিতে সাত ঘণ্টা অনশন করেছেন রাজনীতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের এক পাশে ‘ভুক্তভোগী পঞ্চগড়বাসী’ ব্যানারে তাঁরা আমরণ অনশনে বসেন। কেউ কেউ কাফনের কাপড় পরেও অনশনে অংশ নেন। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মজিরুল ইসলাম পানি পান করিয়ে তাঁদের অনশন ভাঙান।
এ ছাড়া বেলা ১১টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে চীনের অর্থায়নে প্রস্তাবিত এক হাজার শয্যার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দাবিতে প্রতীকী অনশন করেছে জেলা রিকশা ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নসহ কয়েকটি সংগঠন।
অনশনে বসা ব্যক্তিরা হলেন পরিবেশ বন্ধু পঞ্চগড়ের সভাপতি তানবীরুল বারী, গণ অধিকার পরিষদের জেলা শাখার আহ্বায়ক মাহফুজার রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের জেলার আহ্বায়ক সাজেদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তবিরুল ইসলাম, সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী ফোরামের প্রতিনিধি ফাতেমা তুজ জোহরা ও জান্নাতুল শিলু। তাঁদের মধ্যে মাহফুজার রহমান কাফনের কাপড় পরে অনশনে অংশ নেন। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়ায় গণসংহতি আন্দোলনের নেতা সাজেদুর রহমানকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়া অনশনস্থলে তানবীরুল বারী ও জান্নাতুন শিলুর শরীরে স্যালাইন দেওয়া হয়।
অনশনে যোগ দেওয়া তানবীরুল বারী বলেন, ‘আমরা পঞ্চগড়ের মানুষ সব সময়ই অবহেলিত। পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে গুরুতর আহত একজন রোগী নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর বা দিনাজপুরে স্থানান্তর করা হয়। এতে পথেই অনেকের মৃত্যু হয়। আমরা আর কারও পথে মৃত্যু চাই না। এ জন্য জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দ্রুত প্রয়োজন। আমরা জেনেছি চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার একটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল করার জন্য সরকারিভাবে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় জমি খোঁজা হচ্ছে। আমরা মনে করি পঞ্চগড়ের মানুষ এই মেডিকেল কলেজের সঠিক দাবিদার।’
তানবীরুল বারী আরও বলেন, ‘পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের জন্য ভবন নির্মাণ করা হলেও চালু হচ্ছে না। আমরা প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে পঞ্চগড়ের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য মেডিকেল কলেজ স্থাপনের ওয়াদা বা ঘোষণা না পাওয়া পর্যন্ত অনশনে বসেছি। পরে আমাদের অসুস্থতার কথা শুনে আমাদের প্রিয় শিক্ষক মজিরুল ইসলাম এসে পানি পান করিয়ে আমাদের অনশন ভাঙান।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।
ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’
সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।
প্রতিবাদ, বিক্ষোভসেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।
‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।
পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।
দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।
সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।
সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।
কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।