বৃষ্টি বিঘ্নিত সিলেট টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫৫ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংস থেকে জিম্বাবুয়ের পাওয়া ৮২ রানের লিড শোধ করে জয়ের জন্য সফরকারীদের ১৭৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছে। ওই লক্ষ্য তাড়ায় ওপেনিং জুটিতে ৯৫ রান করে জিম্বাবুয়ে। এরপর দ্রুত ৬ উইকেট নিয়ে তাদের চাপে রেখেছে বাংলাদেশ। 

জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের লক্ষ্যে ৪৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রানে ব্যাট করছে। জয়ের জন্য ২৯ রান দরকার তাদের। ক্রিজে আছেন দুই নতুন ব্যাটার ওয়েলসি মেধেভেরে ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। এর আগে ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ৫৪ ও বেন কারেন ৪৪ রান করে আউট হয়েছেন। নিক ওয়েলস ১০ ও শন উইলিয়ামস ৯ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন।

প্রথম বলেই আউট শান্ত, ব্যর্থ মিরাজ: বাংলাদেশ দল সিলেট টেস্টে অধিনায়ক শান্তর ব্যাটে আশা দেখছিল। তিনি ৬০ রান করে অপরাজিত ছিলেন। তৃতীয় দিন নির্ভার ব্যাটিং করতে দেখা গেছে তাকে। কিন্তু চতুর্থ দিন বৃষ্টির কারণে দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে ক্রিজে ফিরে প্রথম বলেই আউট হয়ে যান এই বাঁ-হাতি ব্যাটার।

তার মতো হতাশ করেন মেহেদী মিরাজও। তিনি ক্রিজে এসে ব্যাট তুলে খেলতে শুরু করেন। ১১ রান করে ফিরে যাওয়ার আগে ছক্কাও হাঁকান। এরপর টেলেন্ডে বাংলাদেশ দলকে বিপদে ভরসা দেওয়া তাইজুল ইসলাম ব্যর্থ হয়ে ফিরলে চাপটা প্রবল হয় বাংলাদেশ দলের ওপর।

জাকেরের লড়াই: সকালে দ্রুত উইকেট হারানোর পর এক প্রান্ত দিয়ে লড়াই চালিয়ে যান জাকের আলী। তিনি শেষ ব্যাটার হিসেবে ১১১ বল খেলে ৫৮ রান করে আউট হন। চারটি চার ও একটি ছক্কা মারেন। জাকেরকে সঙ্গ দিতে পারেননি টেলেন্ডে খালেদ আহমেদ। তবে হাসান মাহমুদ৫৮ বল খেলে ১২ রান করেন। তাদের জুটি থেকে আসে ৩৫ রান।

প্রথম ইনিংসে বিপর্যয়: সিলেট টেস্টে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ দল। ১৯১ রানে অলআউট হয়ে যায় শান্ত, মুমিনুল, মুশফিকরা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে মুমিনুল ৫৬ ও শান্ত ৪০ রানের ইনিংস খেলেন। জাকের আলী ২৮ রান যোগ করেন। জিম্বাবুয়ের ব্লেজিং মুজুরাবানি ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ৩টি করে উইকেট নেন। মেধেভেরে ও নায়োচি নেন দুটি করে উইকেট।

জিম্বাবুয়ের লিড: প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে দারুণ ব্যাটিং শুরু করে। তবে নাহিদ রানা ও মেহেদী মিরাজের বলে তাদের নাগালে রাখা সম্ভব হয়েছিল। জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে ২৭৩ রান তোলে। ৮২ রানের লিড নেয়। দলটির হয়ে ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ৫৬ ও শন উইলিয়ামসন ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন। মিরাজ ৫টি ও নাহিদ নেন ৩ উইকেট।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ন কর উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল

বাঁশির সঙ্গে সখ্য সেই শৈশবে। গ্রামে যাত্রাপালায় গান করতেন আর বাঁশির সুরে ছড়াতেন মুগ্ধতা। জীবন-জীবিকার তাগিদে একসময় বেছে নেন রিকশাচালকের পেশা। গ্রাম ছেড়ে থিতু হন ব্যস্ত শহরে। তবে বাঁশের বাঁশিকে হাতছাড়া করেননি শফিকুল ইসলাম (৪৫)।

যানজটে গতি থামতেই রিকশার হ্যান্ডেল ছেড়ে শফিকুল কোমর থেকে হাতে নেন প্রিয় বাঁশি। হর্নের কর্কশ ধ্বনি এড়িয়ে তখন বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা। বেখেয়ালি যাত্রী আর পথচারীরা হঠাৎ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকেন বাঁশিওয়ালার দিকে।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। সেই বাঁশির সুরেই যেন তাঁর জীবন বাঁধা। অভাব, দুর্দশা আর দারিদ্র্যও এ বন্ধন থেকে তাঁকে আলাদা করতে পারেনি। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।

শফিকুলের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার শালিখা গ্রামে। তবে জীবিকার তাগিদে থাকেন বগুড়া শহরের মালতীনগর এলাকার একটি গ্যারেজে। গত রোববার বিকেলে তাঁর দেখা মেলে বগুড়া শহরের কোর্ট হাউস স্ট্রিটের ব্যস্ত সড়কে। শেষ বিকেলে যানজটে যখন পথচারীরা বিরক্ত, তখন বাতাসে ভেসে আসে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ ভাওয়াইয়া গানটির সুর।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বাঁশির সঙ্গে মিতালি গড়েছেন শফিকুল। রিকশার প্যাডেলের ছন্দে তাঁর ঠোঁটে বিমূর্ত হয়ে বাঁশির করুণ সুর। বগুড়া শহরের পথচারীদের কাছে তিনি ‘বাঁশিওয়ালা রিকশাওয়ালা’ হিসেবে পরিচিত।

এরই একফাঁকে আলাপ হয় শফিকুল ইসলামের সঙ্গে। কথায় কথায় তিনি জানান, দারিদ্র্যের কারণে পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়। এরপর জড়িয়ে পড়েন গ্রামের একটি যাত্রাপালার দলে। ‘কাজলরেখা’, ‘সাগরভাসা’, ‘গুনাইবিবি’, ‘রাখালবন্ধু’, ‘রূপবান’সহ নানা লোককাহিনিনির্ভর যাত্রাপালায় অভিনয় ও গান করেছেন। শুধু তা–ই নয়, গানের সুরে হারমোনিয়ামও বাজাতেন। এসবের ফাঁকে ফাঁকে টুকটাক রিকশা চালাতেন তখন।

পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল বলেন, ২০০০ সালে বিয়ে করেন। স্ত্রী মোর্শেদা গৃহিণী। তাঁদের তিন মেয়ে—শরীফা, শম্পা ও শাকিলা। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। স্ত্রী ও দুই মেয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। মাসে দুবার তিনি বাড়িতে যান। শফিকুলের দাবি, বগুড়া শহরে রিকশা চালিয়ে দিনে পান ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। থাকা-খাওয়া ও রিকশার জমা খরচ ছাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা থেকে যায়। সেই টাকায় চলে সংসার।

শুরুতে শহুরে জীবন শফিকুলের একদম ভালো লাগত না, মন পড়ে থাকত সেই গ্রামে। মন ভালো রাখতে রিকশা চালানোর সময় গুনগুন করে গাইতেন। এর মধ্যে শহরের রাস্তায় একদিন এক বাঁশিওয়ালার সঙ্গে তাঁর দেখা। তাঁর কাছ থেকে উপার্জনের ৮০ টাকা দিয়ে একটি বাঁশি কেনেন তিনি। এরপর রাতে গ্যারেজে শুয়ে সেই বাঁশিতে সুর তোলেন। এখন বাঁশি তাঁর নিত্যসঙ্গী।

বাঁশি বাজাতে বাজাতে রিকশা চালানো অভ্যাস হয়ে গেছে জানিয়ে শফিকুল বলেন, যানজটে আটকা পড়লে বাঁশিতে সুর তোলেন। যাত্রী না পেলে রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একমনে বাঁশি বাজান। সুর শুনে যাত্রীরা ১০-২০ টাকা বেশি ভাড়া দেন কখনো কখনো।

গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী।শফিকুল ইসলাম

স্মৃতি হাতড়ে শফিকুল বলেন, একবার ঢাকায় রিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলার মোড়ে রিকশা থামিয়ে একমনে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটি ২০ তলা ভবন থেকে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পান। ওপরে তাকাতেই ৫০ টাকার একটা নোট নিচে ফেলে দেন ওই ব্যক্তি। প্রশংসা করেন বাঁশির সুরের।

আলাপচারিতা একসময় আনমনে হয়ে পড়েন শফিকুল। বলেন, ‘মন তো (মনে) না পাওয়ার কষ্ট আচে। ১৬ বছর বয়সে এলাকার এক মেয়ের প্রেমে পড়চিনু। ৬ মাস ভালোই চলিচ্চিল সেই প্রেম। গরিব হওয়ার কারণে মেয়ের পরিবারের লোকজন প্রেমে বাধা হয়। বড়লোকের ছলের লগে বিয়ে হয় মেয়েটার। সেই থাকে গান আর সুর সঙ্গী। আরও পরে সঙ্গী হয় বাঁশি। এহন বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলে থাকপার চেষ্টা করি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তানি খেলোয়াড়ের থ্রো লাগল আম্পায়ারের মাথায়, এরপর যা হলো
  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার