কাশ্মীরে হামলায় জড়িতদের ‘পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত’ তাড়া করে খুঁজে বের করে শাস্তির ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘ভারতের আত্মায় আঘাত করে তারা ভুল করেছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যারা এই হামলার পরিকল্পনা করেছে, হামলায় অংশ নিয়েছে, তাদেরকে এমন শাস্তি দেওয়া হবে, যা তারা চিন্তাও করতে পারবে না।

গত মঙ্গলবার ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর জেরে গতকাল বুধবার সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছিল ভারত। এর প্রতিক্রিয়ায় আজ বৃহস্পতিবার একগুচ্ছ পাল্টা পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তান। দুই দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি ভারতের প্রেসিডেন্ট নরেন্দ্র মোদি। আজ বিহার রাজ্যের জনসভায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

নরেন্দ্র মোদি বলেন, পর্যটকদের মধ্যে থেকে বাছাই করে হত্যা করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ভারতের ইস্যু করা সব ভিসা বাতিল করা হলো। এছাড়াও যেসব পাকিস্তানি ভারতে অবস্থান করছেন তাদের দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

ভারতের বিহার রাজ্যের জনসভায় কাশ্মীরে নিহতদের স্মরণে হাত তুলে প্রার্থনা করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত হাজারো জনতা তার সঙ্গে প্রার্থনায় অংশ নেন।

হামলাকারীদের পরিচয় বা পাকিস্তানের নামোল্লেখ না করে মোদি বলেন, “আমরা হামলাকারীদের ‘পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত’ তাড়া করে খুঁজে বের করব।”

তিনি বলেন, এই হামলায় যারাই অংশ নিয়েছে, তারা খুব বড় ভুল করেছে। আমি স্পষ্ট করে বলছি, যারাই এই হামলার পরিকল্পনা করেছে এবং এতে অংশ নিয়েছে তাদের এমন শাস্তি ভোগ করতে হবে, যা তারা চিন্তুাও করতে পারবে না।

এদিকে হামলার ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার সর্ব ভারতীয় বৈঠকের আহ্বান করেছেন নরেন্দ্র মোদি। পরে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।

নয়াদিল্লির পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে। দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে কোনো সময় সামরিক যুদ্ধের দিকে যেতে পারে দুই দেশ।

গত মঙ্গলবার বিকেলে পেহেলগাম শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে বৈসরণ উপত্যকায় পর্যটকদের ওপর ওই হামলা হয়। পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় এ উপত্যকাকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ভারত বলছে, গতকালের এ ঘটনা ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিতে সম্ভাব্য সবকিছু করার ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার।

পর্যটকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইরান, ইতালিসহ অনেক দেশ। হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে পাকিস্তান প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা প্রধান উপদেষ্টার

পর্যটকদের ওপর হামলায় নিন্দা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে এক বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় আমার গভীর সমবেদনা গ্রহণ করুন। আমরা এ জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা জানাই। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৩ জন পেহেলগামের হামলাকারী: পার্লামেন্টে অমিত শাহ

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত তিন বন্দুকধারী ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার অভিযানটি চালানো হয়।

আজ মঙ্গলবার ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় দেওয়া বক্তব্যে অমিত শাহ এসব কথা বলেন।

তিন মাসেরও বেশি আগে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা পেহেলগামের বৈসরানে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালান। ওই ঘটনায় ২৬ জন নিহত হন।

অমিত শাহ বলেন, ‘আমি পার্লামেন্টে জানাতে চাই, বৈসরানে যে তিন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।’ তাঁর দাবি, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য। জাতিসংঘ এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে।

অমিত শাহ আরও বলেন, ‘হামলায় তাঁদের জড়িত থাকার ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে বিস্তারিত প্রমাণ আছে।’

ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাশ্মীরের দাচিগাম এলাকার পাহাড়ে গতকাল ওই অভিযান চালানো হয়েছে। শ্রীনগর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে দাচিগামের অবস্থান।

এপ্রিলে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে থাকা বন্দুকধারীরা হঠাৎ বেরিয়ে এসে পর্যটকদের ওপর গুলি চালান। ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই ভারতীয়। একজন নেপালি ছিলেন।

আরও পড়ুনকাশ্মীরে পর্যটকদের গুলি করার আগে কী হয়েছিল, জানালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা২৫ এপ্রিল ২০২৫

ভারতের অভিযোগ, এ হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ আছে। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। পেহেলগামে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত মে মাসে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে চার দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষে ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর অঞ্চলটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে। উভয় দেশ পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে থাকে। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে তারা দুটি যুদ্ধসহ বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে।

আরও পড়ুনপেহেলগামে হামলায় জড়িত সবাইকে এবার পাকিস্তানি নাগরিক বলে দাবি ভারতের২৪ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আশুলিয়ায় বিএনপির জনসভা ও এনসিপির পদযাত্রা আজ, নিরাপত্তা জোরদার
  • কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে ডুবে গেছে রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতু
  • ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৩ জন পেহেলগামের হামলাকারী: পার্লামেন্টে অমিত শাহ