আহত কিশোরকে বাঁচাতে তাকে পিঠে নিয়ে পাহাড় বেয়ে দৌড়ে নামেন সাজ্জাদ, ভিডিও ভাইরাল
Published: 25th, April 2025 GMT
ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত মঙ্গলবার বন্দুকধারীদের হামলার সময় ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। এর মধ্যেও আশার কথা হলো, তখন কয়েকজন স্থানীয় যুবক পর্যটকদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁদের একজন সাজ্জাদ আহমেদ বাট। ওই হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন।
বন্দুকধারীদের হামলায় আহত এক কিশোরকে উদ্ধার করেন সাজ্জাদ। এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে ওই কিশোরকে পিঠে নিয়ে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে দৌড়ে নামতে দেখা যায় তাঁকে। কমলা রঙের জ্যাকেট পড়া ওই কিশোর দুই হাত দিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।
সাজ্জাদ বলেন, ‘যাঁদের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল, তাঁদের মধ্যে আমি একজনমাত্র। আরও অনেকেই ছিলেন, যাঁরা একই কাজ করছিলেন।’
পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। গত বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। পরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সিদ্ধান্তগুলো সাংবাদিকদের জানান। পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে পাকিস্তানও।সাজ্জাদ আরও বলেন, ওই দিন চাচির দাফনে অংশ নিতে ঘটনাস্থলের কাছে একটি স্থানে অবস্থান করছিলেন তিনি। এ সময় হামলার খবর পান। স্থানীয় লোকজন তাঁকে সাহায্যের জন্য ডাকেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ঘটনাস্থলে রওনা হন। ততক্ষণে আহত ব্যক্তিদের সাহায্য করতে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছেন। আহত যাঁরা বসার মতো অবস্থায় ছিলেন, তাঁদের ঘোড়ায় পিঠে বসিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঘটনাস্থল থেকে সাজ্জাদ যে কিশোরকে উদ্ধার করেন, তার মুখমণ্ডল ও শরীর বেয়ে রক্ত পড়ছিল। তবে তিনি ওই কিশোরের নাম জিজ্ঞেস করেননি। তিনি বলেন, তাঁর ঠিক পেছনেই ডান পাশে একটি ঘোড়ার পিঠে বসিয়ে কিশোরটির মাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
আরও পড়ুনসিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৫ পদক্ষেপ নিল ভারত২৩ এপ্রিল ২০২৫এমন পরিস্থিতিতে ভয় পেয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে সাজ্জাদ বলেন, ‘আমরা যদি ভয় পেতাম, তাহলে আহতদের সাহায্য করতে পারতাম না। অবশ্যই কিছুটা ভয় ছিল, কিন্তু বিষয়টি ছিল মানবতার। সেদিন বন্দুকধারীরা সেখানে মানবতাকে হত্যা করেছিল।’
যাঁদের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল, তাঁদের মধ্যে আমি একজনমাত্র। আরও অনেকেই ছিলেন, যাঁরা একই কাজ করছিলেন।সাজ্জাদ আহমেদ, উদ্ধারকারী যুবকপর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পাঁচটি পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। গত বুধবার ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। পরে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সিদ্ধান্তগুলো সাংবাদিকদের জানান। পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে পাকিস্তানও।
আরও পড়ুনআগামীকাল শ্রীনগরে যাচ্ছেন ভারতের সেনাপ্রধান১১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৩ জন পেহেলগামের হামলাকারী: পার্লামেন্টে অমিত শাহ
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত তিন বন্দুকধারী ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার অভিযানটি চালানো হয়।
আজ মঙ্গলবার ভারতের সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় দেওয়া বক্তব্যে অমিত শাহ এসব কথা বলেন।
তিন মাসেরও বেশি আগে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা পেহেলগামের বৈসরানে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালান। ওই ঘটনায় ২৬ জন নিহত হন।
অমিত শাহ বলেন, ‘আমি পার্লামেন্টে জানাতে চাই, বৈসরানে যে তিন সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিলেন, তাঁদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।’ তাঁর দাবি, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য। জাতিসংঘ এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে।
অমিত শাহ আরও বলেন, ‘হামলায় তাঁদের জড়িত থাকার ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে বিস্তারিত প্রমাণ আছে।’
ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাশ্মীরের দাচিগাম এলাকার পাহাড়ে গতকাল ওই অভিযান চালানো হয়েছে। শ্রীনগর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে দাচিগামের অবস্থান।
এপ্রিলে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গলের ভেতর লুকিয়ে থাকা বন্দুকধারীরা হঠাৎ বেরিয়ে এসে পর্যটকদের ওপর গুলি চালান। ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই ভারতীয়। একজন নেপালি ছিলেন।
আরও পড়ুনকাশ্মীরে পর্যটকদের গুলি করার আগে কী হয়েছিল, জানালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা২৫ এপ্রিল ২০২৫ভারতের অভিযোগ, এ হামলার পেছনে পাকিস্তানের মদদ আছে। তবে ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। পেহেলগামে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত মে মাসে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে চার দিন ধরে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পক্ষে ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর অঞ্চলটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে। উভয় দেশ পুরো কাশ্মীরকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে থাকে। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে কেন্দ্র করে তারা দুটি যুদ্ধসহ বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে।
আরও পড়ুনপেহেলগামে হামলায় জড়িত সবাইকে এবার পাকিস্তানি নাগরিক বলে দাবি ভারতের২৪ জুন ২০২৫