চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি–মার্চ) ভুল তথ্য প্রচারের সংখ্যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ২১ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এ বছরের প্রথম তিন মাসে ৮৩৭টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে তথ্য যাচাই বা ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। যেখানে ব্যক্তি হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি এবং দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

তথ্য যাচাই বা ফ্যাক্টচেক প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার শনিবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। তারা চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পেয়েছে।

রিউমর স্ক্যানার বলছে, বাংলাদেশে প্রচারিত এসব ভুয়া তথ্য প্রচারের শীর্ষ প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ফেসবুক। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ৭৪৮টি ভুল তথ্য শনাক্ত করা হয়েছে ফেসবুকে। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে আটটির বেশি ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে এই প্ল্যাটফর্মে। ফেসবুকের পর এক্স (১৬২টি), ইউটিউব (১২৪টি), টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে ৬৭টি করে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে।

এ ছাড়া গত তিন মাসে মিথ্যা বা ভুল তথ্য শনাক্ত হয়েছে ৫০৭টি,  বিভ্রান্তিকর রেটিং দেওয়া হয়েছে ২২৬টি, বিকৃত রেটিং পেয়েছে ১০২টি।

এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি ৪১ শতাংশ রাজনৈতিক ভুল তথ্য শনাক্ত হয়। এ ছাড়া জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে ২৯ শতাংশ এবং ধর্মীয় ইস্যুতে ৯ শতাংশ ভুল তথ্য শনাক্ত হয়।

এ বছরের প্রথম তিন দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। দল এবং দলের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের নামে ৮১টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে রিউমর স্ক্যানার। জামায়াতের পর রয়েছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং এরপর আছে বিএনপি।

এই তিন মাসে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। যার ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই তাঁকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে জড়িয়ে চলতি বছরের শুরুতে ৪৪টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। যার মধ্যে ৯৩ শতাংশই ছিল সরকারের জন্য নেতিবাচক। এ ছাড়া দেশে সশস্ত্র এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জড়িয়ে এ সময় ৬০টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। যার মধ্যে সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে সর্বোচ্চ ৪২টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

দেশের গণমাধ্যমও ভুল তথ্য প্রচার করেছে। গত তিন মাসে দেশের গণমাধ্যমগুলোতে ভুল তথ্য, ছবি এবং ভিডিও মিলিয়ে ৪২টি ভুল। এ ছাড়া গত তিন মাসে ভারতীয় গণমাধ্যমে অন্তত ২০টি ঘটনায় বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সম্পর্কিত ২০টি ঘটনায় ভারতের ২৩টি সংবাদমাধ্যমে ৩৮টি অপতথ্য প্রচার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৮টি অপতথ্য প্রচার করেছে আজতক বাংলা। সব মিলিয়ে প্রথম তিন মাসে ৮৩টি অপতথ্যের প্রচারে ভারতীয়দের ভূমিকা দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।

গণমাধ্যমের নামেও ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে গণমাধ্যমের নাম, লোগো, শিরোনাম ব্যবহার করে এবং নকল ও ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে ১১৮টি ঘটনায় দেশি ও বিদেশি ৩৯টি সংবাদমাধ্যমকে জড়িয়ে ১৩৫টি ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র প রথম ত ন র উমর স ক য ন র প রথম ত ন ম স অপতথ য সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ