সন্ত্রাসীদের হাত থেকে তরুণকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে নিহত যুবদল কর্মী
Published: 28th, April 2025 GMT
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ইয়াছিন আরাফাত ওরফে শাকিল (২৮) নামের এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ সোমবার রাত আনুমানিক পৌনে আটটার দিকে উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের গঙ্গাবর বাজারে ওই ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসীরা এক তরুণকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিয়েছিলেন ইয়াছিন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় ইয়াছিনের ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেনও (২৫) আহত হয়েছেন। তাঁকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার পর এলাকাবাসী ধাওয়া করে হামলাকারীদের মধ্যে তিনজনকে ধরে ফেলেন। পরে তাদের পিটুনি দিয়ে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ তাদের আহত অবস্থায় আটক করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইয়াছিনের চাচাতো ভাই আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, রাত আনুমানিক আটটার দিকে তিনি, ইয়াছিনসহ কয়েকজন গঙ্গাবর বাজারের একটি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। তখন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় একদল সন্ত্রাসী সেখানে আসে। তারা মো.
আবদুল হাকিম জানান, ঘটনার পরপরই তাঁরা গুরুতর আহত অবস্থায় ইয়াছিনকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ছাড়া একই ঘটনায় আহত মোজাম্মেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, দুর্বৃত্তরা কাছে থেকে ইয়াছিনের বুকে ও পেটে গুলি করেছে।
হাসপাতালে উপস্থিত গঙ্গাবর এলাকার বাসিন্দা ও যুবদল কর্মী খালিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ইয়াছিন যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি আরেকজনকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হন এবং গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নিহত ইয়াছিন পেশায় থাই অ্যালুমিনিয়ামের মিস্ত্রি ছিলেন বলে জানান খালিদ।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজীব আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাত সোয়া আটটার দিকে গুলিতে নিহত ইয়াছিন আরাফাত নামের এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন কয়েকজন লোক। তাঁর বুকে গুলির দাগ দেখা গেছে। লাশ মর্গে আছে। একই ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকেও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লা আল ফারুক দুর্বৃত্তদের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, একটি ছেলেকে তুলে নিতে এলে বাধা দেওয়ায় ওই যুবককে গুলি করা হয়। ওই ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন দুর্বৃত্তদের তিনজনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আহত ব্যক্তিদের একজনের অবস্থা গুরুতর।
পুলিশ সুপার জানান, গুলির ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি দুর্বৃত্তরা ঘটনার পর পাশের একটি পুকুরে ফেলে দিয়েছে। পুকুর সেচ দিয়ে সেটি উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হবে। তা ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এ বিষয়ে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ত অবস থ য় ঘটন র পর ঘটন র প ঘটন য় য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন
প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।
জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।
অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।
কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।
সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।