ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে এবার ভারতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পুলিশের ওপর আক্রমণ শুরু হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের ভোপালের রানি কমলাপতি রেলস্টেশনে (পুরোনো নাম হাবিবগঞ্জ স্টেশন) রেলওয়ে পুলিশের এক উর্দিধারী কর্মীর ওপরে হামলা হয়েছে।

পুলিশের সূত্রকে উদ্ধৃত করে ভারতের দৈনিক ভাস্কর পত্রিকা জানিয়েছে, তিনজন তরুণ একজন রেলওয়ে পুলিশ কনস্টেবলের ওপর হামলা চালিয়েছেন। ওই তরুণেরা তাঁর ইউনিফর্ম ছিঁড়ে ফেলেছেন। তরুণেরা তাঁকে গালিগালাজ এবং আপত্তিকর ধর্মীয় মন্তব্য করেন। ওই পুলিশ সদস্যের নাম নজর দৌলত খান।

গত শনিবার দিবাগত রাত দুটার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। পুলিশ অভিযুক্ত তরুণদের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি দুজন এখনো পলাতক। তাঁরা নেশাগ্রস্ত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

স্থানীয় পুলিশ সূত্র জানায়, হেড কনস্টেবল নজর দৌলত এবং তাঁর দল দোকান ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করতে স্টেশন চত্বরে গিয়েছিলেন। তাঁরা যখন এ কাজ করছিলেন তখন নজর দৌলত একটি থেমে থাকা গাড়ির মধ্যে একদল তরুণকে মদ্যপান করতে দেখেন। তিনি তাঁদের চলে যেতে বললে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে ওই তরুণেরা ওই পুলিশ সদস্যের ওপর হামলা চালায়।

গতকাল রোববার ঘটনার একটি ভিডিও ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিও পুলিশের কাছেও স্বাভাবিকভাবে পৌঁছায়। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তরুণেরা শুধু নজর দৌলতকে মারধরই করেননি, তাঁর ধর্ম উল্লেখ করে অবমাননাকর মন্তব্যও করেছেন।

সন্দীপ ও কমল রঘুবংশী নামের নজর দৌলতের অন্য দুই সঙ্গী কনস্টেবল তাঁকে বাঁচাতে হস্তক্ষেপ করলে অভিযুক্ত তরুণদের একজন তাঁদের বলে, ‘তোমরা হিন্দু ভাই, তোমরা এখান থেকে সরে যাও।’

ওই তরুণ আরও বলেন, ‘হিন্দু ভাইয়েরা বুদ্ধিমান আর এই লোক (দৌলত খান) তাদেরই বক্তৃতা দিচ্ছে।’

রেলওয়ে স্টেশনে আশপাশের প্রত্যক্ষদর্শীদের রেকর্ড করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মদ্যপ তরুণেরা পুলিশের জিপের দরজা জোর করে খুলছেন এবং কনস্টেবলকে গাড়ির ভেতরে ঢুকে মারধর করছেন।

উপপরিদর্শক (এসআই) রামদয়ালকে উদ্ধৃত করে দৈনিক ভাস্কর পত্রিকা নিশ্চিত করেছে, অভিযুক্ত তিন তরুণের বিরুদ্ধে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে জিতেন্দ্র যাদব নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর দুই পলাতক সহযোগীকে ধরতে অভিযান চলছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাস থেকে এখন পর্যন্ত মুসলিম সমাজের ওপরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হামলা হয়েছে। কখনো ধর্মীয় সম্পত্তি, কখনো মাদ্রাসা বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সমাজের স্কুল, কখনো তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে সাধারণ মানুষের ওপরে হামলার ঘটনা প্রবলভাবে বেড়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে।

তবে একজন পুলিশ কর্মীকে বেছে নিয়ে নির্দিষ্টভাবে হামলার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে সম্ভবত এই প্রথম ঘটল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব

১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালিন বাকশাল সরকার চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। এতে হাজারো সাংবাদিক রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। জনগন সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর জানা থেকে বঞ্চিত হয়। গোটা দেশে যেন অন্ধকার নেমে আসে। জবরদস্তিমূলকভাবে তখন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবীদেরকে  বাকশালে যোগদানে বাধ্য করা হয়। 
অনেক সাংবাদিক সেদিন জীবন-জীবিকার ভয়ে বাকশালের ফরম পূরণ করেন। তাই সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। আজ দিবস আর কালো নেই। তথ্য প্রবাহের যুগে এখন মন খূলে লেখা যায়, প্রচার করা যায়। বিশেষ করে গেলো বছরের ৫ আগষ্টে ফ্যাসিবাদের পতনের পর গনমাধ্যমে অনেকটা স্বাধীনতা বেড়েছে। গণভবনের তেল তেলা তোষামদি প্রশ্ন এখন আর চলে না। বলা চলে গণমাধ্যম বিগত ১৬ বছরের চাইতে এখন বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে একটা প্রশ্ন রয়েই গেছে তা হলো পেশাদার কিছু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে । এসব মামলা বেশির ভাগই আক্রোশের কারনে হয়েছে। বাদীকে না জানিয়ে একটা মহল মামলায় সাংবাদিকের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটা নিন্দনীয়। একজন সাংবাদিক মানুষ খুনের মামলার আসামী এটা মেনে নেয়া  দুস্কর । 
৫ আগষ্টে আগে যারা তোষামদি করতো , সঠিক সংবাদ লিখতে কিংবা প্রচার করতো পারতো না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দোহাই দিয়ে যারা গনমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করে রেখেছিল তাদের ভয়ে আতংকে থাকতো। তাদের অনেকে এখন গনমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে মিথ্যা প্রপ্রাগান্ডা চড়াচ্ছে। গনহত্যাার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি একটা দলের প্রতি বিশেষ দরদ দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য চড়াচ্ছে। অনেকে তাদের ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। যাচাই বাছাই ছাড়া  মিথ্যা তথ্য শেয়ার করছে। তাদের এখনই থামা দরকার। সত্য প্রকাশ করা একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব । এ পেশাগত দায়িত্বের কেউ অপব্যবহার করলে মুলত তিনিই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। একসময় তার মিথ্যা সংবাদ পরিবেশের কারনে কেউ তার পাশে আর থাকবেন না। তাকে পেশাদার সাংবাদিক নয়, একজন দালাল হিসেবে চিহ্নিত  হয়ে  আস্তুাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। 
পেছনের কথায় ফিরে  আসি, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সংবাদ পত্রের কালো দিবস পেরিয়ে  ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভাবনীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর সাংবাদিকদের লেখার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত করেন।
জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সব কালাকানুন শিথিল করে দেশের সব জায়গা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহ প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, প্রকাশিত সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখা সরকারেরই দায়িত্ব বলেই তিনি মনে করতেন। তিনি রাজশাহী থেকে ‘দৈনিক বার্তা’ নামে একটি প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এ পত্রিকা ঘিরে সমগ্র উত্তরাঞ্চলে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। বহু সাংবাদিকের কর্মসংস্থান হয়।ডিক্লারেশনের শর্ত শিথিল করার কারণে সে সময় ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয়, জেলা এমনকি থানা পর্যায় থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। এসব পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে জিয়াউর রহমান সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টননীতিও শিথিল করেন। বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বণ্টন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন। একই সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞাপনের ৬০ ভাগ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় এবং বাকি ৪০ ভাগ মফস্বল থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সারা দেশে সংবাদপত্র প্রকাশনায় নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। 
শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই  প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হাঁটে দলটি। গত প্রায় ১৫ বছরে আমার দেশ, দিনকাল, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবিসহ জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দিয়েছিল । ৬০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে। একের পর এক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কথায় সাংবাদিক গ্রেফতার তখন নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয়ে একদল চাটুকার আওয়ামীলীগের দু:শাসনের মদদ দিয়ে জাতির উপর জুলুমের মাত্রা আরো বাড়িয়েছিল। ছাত্রজনতার বিপ্লবে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ পতনে মানুষ যেমন স্বস্তি ফিরে পেয়েছে তেমনি গণমাধ্যম ফিরেছে অবাধ স্বাধীনতায়। 

লেখক : সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
  • কালিয়াকৈরে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আটক ২ নেতা, পরে ছাড়া পেলেন একজন
  • আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম: আমির খান
  • প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেপ্তার ১
  • খামেনিকে হত্যার ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প
  • খামেনিকে হত্যায় ইসরায়েলি পরিকল্পনা আটকে দেন ট্রাম্প
  • সাংবাদিক পরিচয়ে গেস্ট হাউসের কক্ষে কক্ষে তল্লাশি, দম্পতির কাছে বিয়ের প্রমাণ দাবি
  • ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
  • চলতি মাসের ১৫ দিনে করোনায় ৪ জনের মৃত্যু
  • গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব