সংস্কার ও নির্বাচন একই সঙ্গে চলতে পারে: বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
Published: 29th, April 2025 GMT
জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা নিশ্চিতে সংস্কার ও নির্বাচন একই সঙ্গে চলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা আর প্রত্যাশা বারবার বিনষ্ট হয়েছে। নব্বইয়ের অভ্যুত্থানের পরও প্রত্যাশা নষ্ট হয়েছে। স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আমার আর সেই দুঃস্বপ্নের পুনরাবৃত্তি চাই না।
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংস্কার প্রশ্নে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের শুরুতে সাইফুল হক এসব কথা বলেন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার অংশ হিসেবে আজ বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বৈঠক করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বিগত ১৬ বছরের অপসংস্কৃতি, গুম, খুন, মানবাধিকার হরণের সময়ে ‘ফিরে যেতে চাই না’ মন্তব্য করে সাইফুল হক বলেন, ‘আমরা পুরোনো জামানায় ফিরে যেতে চাই না। আমরা এমন একটি দেশ দেখতে চাই, বিনির্মাণ করতে চাই, যেখানে ভিন্ন ধর্ম, বিশ্বাস, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয়ের কারণে কেউ যেন বঞ্চিত না হয়।’
সাইফুল হক বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য থাকবে মানুষের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করা। সকলের আলোচনার ভিত্তিতে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা, যাতে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার মৌলিক তিন ভিত্তি সাম্য, মানবিক অধিকার ও ন্যায়বিচার বাস্তবায়নের পথে আমরা হাঁটতে পারব।’
আরও পড়ুনরাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও জাতীয় স্বার্থে ঐক্য ধরে রাখতে হবে: সাইফুল হক২৫ এপ্রিল ২০২৫বেশি টানাটানি করলে ‘রশি ছিড়ে যাবে’—এমন মন্তব্য করে সাইফুল হক বলেন, ‘গণতান্ত্রিক অধিকার ও সুনাগরিকের অধিকারের দিকে দৃষ্টি রেখে প্রতিটি রাজনৈতিক দল মানুষের কাছে নানা বিষয়ে অঙ্গীকার করেছে। তাই আমরা মনে করি, জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা নিশ্চিতে সংস্কার ও নির্বাচন একই সঙ্গে চলতে পারে।’
বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। এটা বাংলাদেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা। আমরা গণমানুষের এই আকাঙ্ক্ষাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে হাতছাড়া যেন না করি, এমন মন্তব্য করে আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘আমাদের সবার উদ্দেশ্য এক। সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এমন একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারা, যেখানে গণতান্ত্রিক অধিকার থাকবে। ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের, ধর্মের, পরিচয়ের কারণে কেউ সাংবিধানিক অধিকার হারাবে না।’
আরও পড়ুনসংস্কারের প্রশ্নে ব্যক্তি–দলের স্বার্থের চেয়ে দেশকে প্রাধান্য দিতে হবে: নুরুল হক২৮ এপ্রিল ২০২৫আলী রীয়াজ বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট আমলে বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিক অধিকারবঞ্চিত হয়েছে। মানুষ সাংবিধানিক অধিকার হারিয়েছে। গুম ও খুন মোকাবিলা করতে হয়েছে। ২০২৪ সালে ১ হাজার ৪০০ শহীদের রক্তের ওপর অভূতপূর্ব গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা এক বিশেষ স্বাধীনতা অর্জন করেছি। ফলে আমরা আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে একসঙ্গে বসতে পেরেছি।’
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা জাতীয় ঐক্যের ওপর নির্ভর করবে বলে মনে করছেন আলী রীয়াজ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার ভিত্তিতেই জাতীয় ঐক্য গঠিত হবে। আমরা কতটুকু সফল হলাম, তা আমাদের জাতীয় ঐক্যই বলে দেবে।’
আরও পড়ুনদ্বিমতের বিষয় নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে: জোনায়েদ সাকি২৭ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্য জাতীয় সনদ তৈরি করা: আলী রীয়াজ২৬ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ঐকমত য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক হয়। খবর বাসসের।
বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকে সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যেসব আলোচনা হয়েছে, সে ব্যাপারে কমিশনপ্রধানকে অবহিত করেন। কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, বিচারপতি এমদাদুল হক এবং সফর রাজ হোসেনও তাতে অংশ নেন। সেই আলোকে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।