সুপারিশ নিয়ে বিতর্ক, কতটা যৌক্তিক
Published: 31st, October 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের যে সুপারিশ করেছে, তার কিছু বিষয় নিয়ে বিতর্ক ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতের উল্লেখ না থাকা, বিকল্প একটি সুপারিশ অনুযায়ী একপর্যায়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রস্তাবগুলো সংবিধানে যুক্ত হবে—এমন বিষয়ে আপত্তি ও প্রশ্ন উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি কিছু মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত দিয়েছে। দলটির ভিন্নমত অনুসারে সংস্কার বাস্তবায়ন করা হলে খুব বেশি মৌলিক পরিবর্তন আসবে না। অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংস্কার প্রস্তাব সংবিধানে যুক্ত করার সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবসম্মত নয়।
গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিকল্প দুটি সুপারিশ জমা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে।
শুরু থেকেই জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কয়েকটি দলের দাবি ছিল, ভিন্নমত অনুসারে নয়, ঐকমত্য কমিশন যেভাবে প্রস্তাব দিয়েছে বা সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেভাবেই এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।ভিন্নমত নিয়ে বিতর্কজুলাই জাতীয় সনদের ৮৪টি প্রস্তাবের ৪৮টি সংবিধান-সম্পর্কিত। ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে অন্তত ৩৬টিতে কোনো কোনো দলের ভিন্নমত আছে। ১৭ অক্টোবর যে জুলাই জাতীয় সনদ সই হয়েছে, সেখানে কোন প্রস্তাবে কার ভিন্নমত আছে, তা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘অবশ্য কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখপূর্বক যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সেইমতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’
কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে সংস্কার প্রস্তাবগুলোই শুধু উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ভিন্নমতের উল্লেখ নেই। আদেশে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ ‘আদেশের তফসিল-১-এ বর্ণিত জুলাই জাতীয় সনদ’ অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন করবে। এর আগে গণভোটও হবে সনদের তফসিলে থাকা প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন প্রশ্নে। অর্থাৎ সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভিন্নমত গুরুত্ব পাবে না।
কমিশন মনে করে, রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যই চূড়ান্ত নয়। এখানে জনগণের মতও প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতের সুরক্ষা থাকে।মূল সনদে ভিন্নমত থাকলেও বাস্তবায়নের সুপারিশে এটা না রাখাকে প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেছে বিএনপি। অন্যদিকে শুরু থেকেই জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশ কয়েকটি দলের দাবি ছিল, ভিন্নমত অনুসারে নয়, ঐকমত্য কমিশন যেভাবে প্রস্তাব দিয়েছে বা সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেভাবেই এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে।
জুলাই সনদে ভিন্নমতের কথা উল্লেখ আছে, বাস্তবায়নের সুপারিশে তা না রাখা ঠিক হয়নি বলে মনে করেন সংসদ বিষয়ে গবেষক নিজাম উদ্দিন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন যেকোনো দল বলতে পারে, এটা উল্লেখ না থাকলে তারা জুলাই সনদে সই করত না। ভিন্নমতের উল্লেখ ছিল বলেই তারা সই করেছে। এখন তারা সুপারিশ না মানলে হয়তো কিছু করার থাকবে না।
ভিন্নমত বাদ কেনঐকমত্য কমিশন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলো এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের সমন্বয়ে কমিশন সনদ বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ করেছে। রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের বড় অংশের মতামত ছিল ভিন্নমত রেখে সনদ বাস্তবায়ন করা হলে মৌলিক কোনো পরিবর্তন আসবে না। কমিশনও সেটাই মনে করে। তা ছাড়া নোট অব ডিসেন্ট হলো একটি সিদ্ধান্তে কারও ভিন্নমতের উল্লেখ। এতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয় না।
সংবিধান সংস্কারের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো কিছু মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তন আনা। যেমন ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা; সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি কঠিন করা, যাতে কোনো দল ইচ্ছেমতো তা পরিবর্তন করতে না পারে। এ জন্য বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। যার একটি হলো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন। এ পদ্ধতিতে সারা দেশে একটি দল যত ভোট পাবে, তার অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন পাবে। নিম্নকক্ষে (সংসদ) দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংবিধান সংশোধনী বিল অনুমোদিত হওয়ার পর উচ্চকক্ষে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এটি পাস হতে হবে। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ হলে একক দলের ইচ্ছায় সংবিধান সংশোধন কঠিন হবে।
বিএনপি চায় নিম্নকক্ষে পাওয়া আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন। কিন্তু এভাবে উচ্চকক্ষ গঠন করা হলে সেটি হবে নিম্নকক্ষের অনুলিপি। এতে উচ্চকক্ষ গঠনের মূল লক্ষ্য পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এতে শুধু সংসদ সদস্যের সংখ্যা এবং রাষ্ট্রের ব্যয় বাড়বে। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনাতেও বিষয়টি এভাবে উঠে এসেছিল।
অনেকে মনে করেন, বেশির ভাগ দল ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় তাদের দলীয় অবস্থান ও আদর্শ বিবেচনায় প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু সংবিধান শুধু কোনো দলের চিন্তার বিষয় নয়। সংবিধান হলো জনগণের অভিপ্রায়। তাই এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার জনগণের হাতে ছেড়ে দিতে প্রস্তাবগুলো ভিন্নমত ছাড়া গণভোটে দেওয়ার সুপারিশ যৌক্তিক।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ৪৮টি প্রস্তাবের ৩০টির মধ্যে দলগুলোর একধরনের ঐকমত্য আছে। বাকিগুলোতে কোনো কোনো দলের ভিন্নমত আছে। কিন্তু কমিশন মনে করে, রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যই চূড়ান্ত নয়। এখানে জনগণের মতও প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতের সুরক্ষা থাকে।
সংবিধানে কিছু কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে পারেসংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে দুটি বিকল্প সুপারিশ করা হয়েছে। একটিতে বলা হয়েছে, প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করা হবে। এর ভিত্তিতে হবে গণভোট। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। এ সময়ে সংস্কার করতে সংসদ ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে। এর জন্য সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংবিধান সংস্কার বিল (সংবিধান সংশোধনে আইনের খসড়া) আকারে আদেশের তফসিলে থাকবে। আরেকটি বিকল্প সুপারিশের কাঠামোও একই। কিন্তু সেখানে ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন না হলে কী হবে, তার উল্লেখ নেই। এখানে তফসিলে থাকবে শুধু সংস্কার প্রস্তাব।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংবিধানে কোনো কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে পারে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। কোন প্রক্রিয়ায় এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে, সেটাও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে কোনো কিছু যুক্ত হওয়ার বিধানও বিদ্যমান সংবিধান অনুমোদন করে না। অবশ্য জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ গণভোটে পাস হলে এই বিধান গণভোটের মাধ্যমেও ভিত্তি পাবে।
তবে সুপারিশের এ অংশ বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করেন সংসদ বিষয়ে গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে কিছু যুক্ত হতে পারে—এমন বিধান কোথাও আছে বলে তাঁর জানা নেই। সংবিধানে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।
ঐকমত্য কমিশন গিলোটিন প্রসিডিউরের ধারণা থেকে এই বিধান সুপারিশ করেছে। এটি হলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিতর্ক শেষ না হলে আলোচনা বন্ধ করে দিয়ে বিল পাস করানো।
এ বিষয়ে নিজাম উদ্দিন আহমদ বলেন, গিলোটিনের চর্চা সাধারণত অর্থবিলে হয়ে থাকে। সংবিধান সংশোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এ ধারণা প্রয়োগ করা ঠিক হবে না।
বিল তৈরিতে জটিলতা হতে পারেসংস্কার প্রস্তাবগুলোকে বিল আকারে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রেও জটিলতা আছে। কারণ, সনদের কয়েকটি প্রস্তাব সুনির্দিষ্ট ও চূড়ান্ত নয়। যেমন বলা হয়েছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। সেখানে কী কী থাকবে, তা সুনির্দিষ্ট নয়। সনদে বলা আছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ-সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রস্তাবগুলো ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে, যাতে রাজনৈতিক দলের নেতারা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধিরা সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও আইনি বিধানাবলি পরিবর্তন করতে পারেন।
তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মৌলিক অধিকারের বিষয়টি কীভাবে গণভোটের বিলে যুক্ত করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। মৌলিক অধিকারে কী কী থাকবে, সেটা কে নির্ধারণ করবে, কীভাবে নির্ধারণ করবে?
প্রক্রিয়াগত জটিলতাসংসদে একটি বিল পাস হওয়ার পর তাতে সই করেন স্পিকার। এরপর সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠায় সংসদ সচিবালয়। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর তা আইনে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার বিধান হাস্যকর।
সংবিধান সংস্কারবিষয়ক প্রস্তাবগুলো গণভোটে পাস হলে সেগুলো যাবে সংসদে (সংবিধান সংস্কার পরিষদ)। বিল সংসদে পাস হবে কি না, তা মূলত নির্ভর করবে সরকারি দল তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ওপর। কারণ, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবেন না। সংসদের স্পিকারও হবেন সরকারি দল থেকে। রাষ্ট্রপতিও হবেন সরকারি দলের মনোনীত প্রার্থী।
সরকারি দল না চাইলে ২৭০ দিনের মধ্যে বিলটি পাস হবে না। ২৭০ দিন পর বিলটি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর উদ্যোগ কে নেবে, রাষ্ট্রপতি এটিতে সই করবেন কি না, গেজেট কীভাবে প্রকাশিত হবে—এ প্রক্রিয়া পরিষ্কার নয়।
তবে নানা প্রশ্ন থাকলেও সনদ বাস্তবায়ন হবে এ নিশ্চয়তা বিধান করতেই মূলত স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হবে—এমন সুপারিশ এসেছে। কারণ, অনেকে মনে করেন এ রকম বিধান না থাকলে সংস্কারের পরিণতি হবে নব্বইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের পর তিন জোটের রূপরেখার মতো। কয়েকটি দলও সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চেয়েছে।
এখানে আরেকটি বিকল্প আলোচনায় ছিল, সেটা হলো ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে সংসদ বিলুপ্ত হবে। কিন্তু এটি রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না এবং এটি ভবিষ্যতে সংকট তৈরি করতে পারে, এমন বিবেচনায় সেটা রাখা হয়নি বলে কমিশন–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, সুপারিশ বাস্তবায়নে কমিশন দুটি বিকল্প দিয়েছে। এর একটিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। যাতে দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করা যায়, সে জন্য এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আরেকটা বিকল্প পথও বলা হয়েছে। সরকার সেটাও নিতে পারে। তিনি বলেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় গিলোটিন প্রসিডিউরের ধারণা থেকে তাঁরা প্রথম বিকল্পের সুপারিশ করেছেন। তবে কমিশনের দৃঢ় বিশ্বাস, এত দূর যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। সংসদে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সংস্কার সম্পন্ন করবে দলগুলো।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স ক র প রস ত ব জ ল ই জ ত য় সনদ ত র উল ল খ প রস ত ব দ স প র শ কর জ ল ই সনদ র ভ ন নমত র ষ ট রপত য ক ত হব প রক র য় উল ল খ ন ত হওয় র র তফস ল জনগণ র ক দল র ব তর ক অন ম দ অন স র ম উদ দ ব কল প সনদ র ন করত বলছ ন প রথম গণভ ট ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চীনের পণ্যে শুল্ক কমালেন ট্রাম্প, ৫৭ থেকে কমে ৪৭%
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যে শুল্ক কমিয়েছে। চীনের পণ্যে মার্কিন শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমস।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ট্রাম্পকে উদ্ধৃত করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ও চীনের সঙ্গে এক বছরের বাণিজ্য চুক্তি আছে— এই চুক্তির মেয়াদ নিয়মিতভাবে বাড়ানো হবে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমাদের চুক্তি হয়েছে।’
ট্রাম্প আরও বলেছেন, তিনি আগামী এপ্রিল মাসে চীন সফর করবেন; চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তার পর যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। সেই সঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, বিরল খনিজ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে।
চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেছেন, এই শুল্কহার তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। এ ছাড়া চীনের ফেন্টানিলে যে ২০ শতাংশ শুল্ক ছিল, তাও কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে।
মূলত যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে দ্রুত বাণিজ্য চুক্তি করে ফেলতে চায়। দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই নেতার যে বৈঠক হচ্ছে, তাও মূলত যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহে। রয়টার্সের আগের এক সংবাদে এমন তথ্যই দেওয়া হয়।
এমনকি এই বৈঠকের আগে বাণিজ্য চুক্তি সংক্রান্ত কাঠামোগত ঐকমত্যের কথাও জানানো হয় রয়টার্সের এক সংবাদে। বলা হয়, পারস্পরিক বিরোধ আমলে নিয়ে বাণিজ্যচুক্তির কাঠামোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তারা। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং এই কাঠামোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। আজ ট্রাম্পের কথায় তার ইঙ্গিত পাওয়া গেল।
এই কাঠামো চূড়ান্ত হলে চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র সাময়িকভাবে শুল্ক বাড়াবে না। অন্যদিকে চীন বিরল খনিজ ধাতু রপ্তানির বিষয়ে যে বিধিনিষেধ জারি করেছিল, তা–ও সাময়িকভাবে স্থগিত করবে। আজকের বৈঠকের পর ট্রাম্প সে কথাও বলেছেন।
এর আগে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেন, আসিয়ান সম্মেলনের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে আগামী ১ নভেম্বর থেকে চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে শতভাগ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করার কথা, তা স্থগিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর আশা, চীন চৌম্বক পদার্থসহ বিরল খনিজ রপ্তানিতে যে লাইসেন্স নেওয়ার প্রথা চালু করেছে, তা বাস্তবায়নের মেয়াদ অন্তত এক বছর পিছিয়ে দেবে।
এর মধ্যে বাড়তি আগ্রহ দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উল্টো চীনের পণ্যে শুল্ক হ্রাস করল। বিশ্লেষকেরা ধারণা করছেন, এবার দুই দেশের পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তির পালে পাওয়া লাগতে পারে।
চলতি বছরের ২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে বিশ্বের ৫৭ টি দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেন। এরপর সেইসব দেশের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি করতে তিন মাসের জন্য এই সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। অনেকে দেশের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কিন্তু চীন ও ভারতসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে চুক্তি এখনো হয়নি।
চীনের সঙ্গে ট্রাম্প এখন শুল্ক বিরতির খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে রাশিয়ার তেল কিনে ইউক্রেন যুদ্ধে রসদ জোগানোর অভিযোগে ভারতের পণ্যে মোট ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প।
 মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
মোবাইল চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যা