ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে রাজধানীর আফতাবনগর এলাকা হতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৬ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৯ জুলাই দুপুর দুইটার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন উত্তর কুতুবখালী বউবাজার রোডে মাদ্রাসার সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মোহাম্মদ আরিফ (১৮) গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান। এই ঘটনায় ভিকটিমের পিতা মোহাম্মদ ইউসুফ বাদী হয়ে গত ২৬ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তারকৃত কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু ওই মামলার ১৪ নং এজাহারনামীয় আসামি।

যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হত্যা ও হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত চারটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি। যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর আফতাবনগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ব ক এমপ এমপ র ভ ত জ আওয় ম ল গ গ র প ত র কর

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু, জীবাণু ও জনজীবন

দেশে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ এখন ভয়াবহ সংকটে। একদিকে জনস্বাস্থ্যের হুমকি বাড়ছে, অন্যদিকে পরিবেশদূষণের প্রভাব ভয়াবহ আকার ধারণ করছে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য অন্তরায়। দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনা তার কারণ।  অথচ এ দুটি খাত রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের প্রধান ভিত্তি হওয়া উচিত। কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প ও ডিজিটাল হেলথ সল্যুশন বাস্তবায়নে রয়েছে সরকারের সীমাহীন ঘাটতি। জনবল সংকট, ওষুধ সরবরাহে দুর্নীতি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দুর্বল কাঠামো এবং গবেষণাভিত্তিক সিদ্ধান্তের অভাব এ খাতকে বারবার ব্যর্থ করছে।
ঢাকার বাতাসে ধুলাবালি, নালায় জমে থাকা প্লাস্টিক, সড়কে উন্মুক্ত নর্দমা নগরবাসীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। অথচ রাষ্ট্রীয় নীতিতে ‘পরিবেশ সুরক্ষা’ এবং ‘স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ’ দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চারিত। সাভার, নারায়ণগঞ্জ কিংবা গাজীপুরে শিল্পকারখানার পাশের গ্রামগুলোতে নদীর পানি দিয়ে কৃষি বা মাছ চাষ প্রায় অসম্ভব। ধলেশ্বরী নদীর পাশে থাকা অনেক চাষি এখন পানি সংগ্রহ করতে কয়েক কিলোমিটার দূরে যান। কারণ কলকারখানার বর্জ্যে সবকিছু হারিয়ে গেছে। সেখানকার শিশুদের মধ্যে বেড়েছে চর্মরোগ ও শ্বাসকষ্ট। কিন্তু স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেই প্রয়োজনীয় ডাক্তার কিংবা ওষুধ।
অন্যদিকে রংপুরের পীরগঞ্জ কিংবা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকায় এখনও শিশুদের ডায়রিয়া, টিকা গ্রহণ না করা এবং নিরাপদ পানি না পাওয়ার মতো সমস্যা এখনও নিরসন সম্ভব হয়নি। অনেক উপজেলায় নেই এমবিবিএস ডাক্তার, নার্স; নেই পর্যাপ্ত ওষুধ। সরকারি হাসপাতালে এসে চিকিৎসার বদলে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে হয়রান হতে হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের প্রায় ৪৮ শতাংশ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রেই পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। একই সঙ্গে রাজধানীতে প্রাইভেট হাসপাতালের সংখ্যা ও খরচ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে, যেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ প্রায় অসম্ভব।
পরিবেশ ও স্বাস্থ্য খাতের এ সংকটের পেছনে যেমন রয়েছে বাজেটস্বল্পতা, তেমনি রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উন্নয়ন বলতে বোঝেন রাস্তা বানানো, আর সরকারের বরাদ্দ যায় পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল কিংবা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বড় প্রকল্পে, যা জনগণের মৌলিক সমস্যা সমাধানে অপর্যাপ্ত। অথচ পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি এসব উন্নয়নের সবচেয়ে 
বড় অন্তরায়।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জলবায়ু পরিবর্তন কর্মপরিকল্পনা, স্বাস্থ্যনীতি ২০১১ কাগজে-কলমে চমৎকার হলেও বাস্তবে বারবার প্রশাসনিক দুর্বলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের ঘাটতিতে মুখ থুবড়ে পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ বিজ্ঞান, জনস্বাস্থ্য কিংবা মেডিকেল শিক্ষায় গবেষণা ও উদ্ভাবনের সুযোগ সীমিত এবং শিক্ষার্থীদের কমিউনিটি পর্যায়ে সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই বললেই চলে। অথচ স্বাস্থ্য ও পরিবেশ– এ দুটি ক্ষেত্রেই তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রবল 
সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাঙ্গনের দায়িত্ব শুধু পাঠদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে গবেষণা, মাঠ পর্যায়ের কাজ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করার দিকেই মনোনিবেশ করা উচিত। অন্যদিকে জাতীয় পর্যায়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়, রাজনৈতিক অঙ্গীকার এবং জনমুখী বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত না হলে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাতের উন্নয়ন কেবল ভাষণেই 
আটকে থাকবে।

সমন্বিতভাবে বলতে গেলে, দেশের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ খাত আজ যেভাবে জরাজীর্ণ কাঠামোয় দাঁড়িয়ে আছে, তার সংস্কার না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জর্জরিত হবে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, দুর্বিষহ পরিবেশ ও অনিরাপদ জীবনের ঝুঁকিতে। তাই আজ প্রয়োজন বাস্তবতানির্ভর প্রয়োগ, যেখানে গ্রামের মানুষটি অন্তত জানবে– কীভাবে পরিষ্কার পানি পাবে; শহরের শ্রমজীবী মানুষটি জানবে কোথায় কম খরচে চিকিৎসা পাবে এবং প্রত্যেক নাগরিক জানবে– তারা নিঃশ্বাসে নিচ্ছে বিষ নয়, বিশুদ্ধ বাতাস।

শাহরিয়ার মোহাম্মদ ইয়ামিন: যুগ্ম সদস্য সচিব, বাংলাদেশ 
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ