হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানসংলগ্ন সড়কে প্রাণ হারিয়েছে বিপন্ন প্রজাতির হনুমানশাবক। মঙ্গলবার সকালে উদ্যানের ভেতর দিয়ে ছুটে চলা দ্রুতগতির একটি গাড়ির ধাক্কায় হনুমান শাবকটি মারা যায়। শাবকের নিথর দেহ সামনে নিয়ে নীরবে অনেকক্ষণ বসে ছিল মা হনুমানটি। এমন দৃশ্য ছুঁইয়ে গেছে স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে এমন বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো বন্ধ করা জরুরি। সেই সঙ্গে পর্যটকদের বেপরোয়া প্রবেশ এবং প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে এসব বন্যপ্রাণীর জীবন আজ প্রচণ্ড হুমকির মুখে।
বন বিভাগ ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, গত কয়েক বছরে এমন একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যা প্রমাণ করে জাতীয় উদ্যানের ভেতরে প্রাণীর চলাচল নিরাপদ নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, চশমাপরা ও মুখপোড়া হনুমানের মধ্যে শংকরায়নের প্রবণতা বেড়েছে, যা প্রজাতির ভবিষ্যৎ অস্তিত্বের জন্য একটি বড় সংকেত। সাতছড়ি বন বিট কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ জানান, বন এলাকায় যানবাহনের গতিসীমা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যানের ভেতর দিয়ে যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় সাইনবোর্ড স্থাপন জরুরি। তারা বলেন, পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বন্যপ্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এমন করুণ মৃত্যুর ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করে, মানুষের অসতর্ক আচরণ এবং উদ্যান ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা প্রাকৃতিক প্রাণিজগতের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হন ম ন
এছাড়াও পড়ুন:
দাবানলে পুড়ছে গ্রিস, নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে দমকলবাহিনী
গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য ক্রিট দ্বীপে ইরাপেত্রা পৌরসভার কাছে বুধবার (২ জুলাই) বিকেল থেকে একটি ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। আগুনে বনভূমি পুড়ে গেছে এবং বাড়িঘর, জ্বালানি স্টেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
দেশটির দমকল কর্তৃপক্ষ বলছে, আগুন ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের অন্তত ছয়টি এলাকায় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আরো পড়ুন:
গ্রিসে ফের দাবানল, বাংলাদেশিদের নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান
ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল
গ্রিসের জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলোর মতে, আগুনের সম্মুখভাগ এখন কমপক্ষে ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত, যা নিয়ন্ত্রণ ক্রমশ কঠিন করে তুলছে। ঘন ধোঁয়া বিস্তৃত এলাকাকে গ্রাস করেছে, কিছু জায়গায় দৃশ্যমানতা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে।
লাসিথির আচলিয়া থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মাক্রি গিয়ালোস সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে, ওই এলাকায় আগুন নেভাতে দমকলকর্মীরা কাজ করছেন।
পুলিশ আগিয়া ফোটিয়ার বসতিস্থলের কাছের প্রধান রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে। একইসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদেরকে বাতাসের নিম্নমান, প্রচণ্ড তাপ ও ছাই পড়ার কারণে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়াতে অনুরোধ করেছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, দাবানলে আগিয়া ফোটিয়ায় বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও হোটেল পুড়ে গেছে ও এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টের কারণে কমপক্ষে চারজন বয়স্ক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গ্রিসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আগাম সতর্কতা হিসেবে ক্রিটের হাসপাতালগুলোকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে।
দাবালন ফেরমা পৌরসভাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঘরবাড়ি ও হোটেলগুলো থেকে মানুষজনকে ব্যাপকভাবে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে।
গ্রিসের দমকল পরিষেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩৮টি ইঞ্জিন ও জলবাহী ট্রাকের পাশাপাশি ৪টি হেলিকপ্টার দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে দায়িত্ব পালন করছেন অন্তত ১৫৫ জন দমকল কর্মী এবং ৮টি বিশেষায়িত পদাতিক দল।
দমকল বাহিনী আরো জানায়, অতিরিক্ত সাহায্যবাহী দল ও বিমান রাজধানী এথেন্স থেকে পাঠানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দমকলকর্মী ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আগুনের ভয়াবহতা অনেক বেশি এবং এটি এখনও নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যায়নি। ঝড়ো বাতাস এবং ভূ প্রকৃতির কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ জটিল হয়ে পড়েছে।
ইউরোপের দক্ষিণে অবস্থিত গ্রিসে গ্রীষ্মকালের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে প্রায়ই দাবানলের ঘটনা ঘটে। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, জলবায়ুর দ্রুত পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক দাবানলগুলো আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ