অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার পূর্বাপর
Published: 2nd, June 2025 GMT
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থান দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক খাতে যে অসাধ্য সাধনের সুযোগ এনে দেয়, অন্তর্বর্তী সরকার সেই সুযোগগুলো একে একে হেলায় হারাচ্ছে। দেড় দশক শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনে পিষ্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতি একদলীয় অবকাঠামোয় ঘুরপাক খাচ্ছিল; তার সমান্তরালে ফাঁপানো অর্থনৈতিক প্রবঞ্চনার ফাঁদে পড়েছিল দেশ। উন্নয়নের রূপকথাসদৃশ পরিসংখ্যান ও জিডিপির চোখ ধাঁধানো অঙ্ক আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই অন্তঃসারশূন্য প্রমাণ হয়ে যায়। ধারণা করা হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী বাজেট কাটছাঁট করে বাস্তবমুখী ও জনবান্ধব করে তুলবে। জনস্বার্থ বিবেচনায় অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো স্থগিত রেখে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াবে। যেহেতু এই সরকারের কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই; সুযোগ ছিল রাজনৈতিক সরকারের সামনে বাজেটে কৃচ্ছ্রসাধন ও জনকল্যাণকর উদাহরণ তৈরির। অর্থনীতিবিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার পতিত সরকারের বাজেট নিয়ে এগিয়েছে। পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো হলো কিনা; ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন কোন নীতি নেওয়া হলো– সংশোধনের সময় সরকার কিছুই বলল না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৪০ শতাংশই ভুয়া বলে আমরা শ্বেতপত্রে লিখেছি। এডিপি কোন নীতিমালায় সংশোধন হলো, মেগা প্রকল্প কোনটা বাদ দেওয়া হলো, কোনটার মূল্য সংশোধন করা হলো– সেগুলোও বুঝলাম না’ (সমকাল, ৩১ মে ২০২৫)।
অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনৈতিক সংস্কারে টাস্কফোর্স কমিটিও করেছিল। গত বছরের ১ ডিসেম্বর শ্বেতপত্র কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়; টাস্কফোর্স কমিটি জানুয়ারির শেষ দিকে জমা দিয়েছে। দুই কমিটিরই সদস্য সেলিম রায়হান বলেছেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই যে, এ দুটি প্রতিবেদন নিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো, বিশেষ করে অর্থ, বাণিজ্য ও পরিকল্পনার মতো যে মন্ত্রণালয়গুলো এ ক্ষেত্রে বেশি প্রাসঙ্গিক, তাদের মধ্যে এই প্রতিবেদনগুলো নিয়ে বড় কোনো আলোচনা দেখিনি’ (প্রথম আলো, ১ জুন ২০২৫)। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে সুদীর্ঘকাল যে অবহেলা-বঞ্চনা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার তা ভেঙে দিয়ে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারত। কেন করল না? আমলাতন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রাখলে যতই শ্বেতপত্র প্রণয়ন ও টাস্কফোর্স কমিটি করুন না কেন, শেষ পর্যন্ত ‘যেই লাউ, সেই কদু’! সরকার যায়, সরকার আসে– কার্যকর সামাজিক সুরক্ষা খাত দেখা দেয় না। রাষ্ট্রও তাই মানবিক হতে ব্যর্থ হয় শেষ পর্যন্ত।
২.
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত সপ্তাহের সর্বশেষ তথ্যে দেশে মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয় এখন ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার। এই সংখ্যা যদি চলতি অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকে, তবে তা হতে যাচ্ছে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের রেকর্ড। যদি দেশের মানুষের সম্মিলিত পরিশ্রমের স্মারক হতো এই রেকর্ড, নিশ্চয়ই তা উদযাপনের বিষয় হতো। এই গড় অঙ্ক প্রকৃত বাস্তবতা বোঝায় না। এটি দেশের বড় বাজারকে উপস্থাপন করে; কিন্তু অভ্যন্তরে রয়ে যায় শুভঙ্করের ফাঁকি। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ১০ শতাংশ মানুষ দেশের মোট আয়ের ৪০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। খাতাপত্রের প্রয়োজন নেই, চোখ মেললেই দেখা যায়, প্রান্তিক অঞ্চলে মানুষের কর্মহীনতা। কৃষি খাতে সরকারের সুদৃষ্টির অভাব অর্থনীতিকে আরও বিপর্যস্ত করছে।
গত ৯ মাসের উপাত্তের ভিত্তিতে পরিসংখ্যান ব্যুরো অন্তর্বর্তীকালীন জিডিপির যে অঙ্ক জানিয়েছে, সেখানে সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছর কৃষি প্রবৃদ্ধি অনেক কমেছে। উচ্চ মূল্যফীতির সময়ে নিজস্ব খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে ব্যর্থ হলে মূল্যস্ফীতি কমবার কোনো কারণ নেই। কৃষির নিম্নমুখী আবর্তনকে রক্ষায় সরকারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বিদেশি সহায়তা ভিক্ষার হাত বাড়াবে কেবল; আত্মবিশ্বাসী হাত তৈরি করবে না– সরকারকে এই সরল সত্য কে বোঝাবে! দেশের মানুষে মানুষে আয় ও সুযোগের যে পাহাড়প্রতিম দূরত্ব; কোনো পরিসংখ্যান বা আলোচনাই এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারছে না। না বিগত স্বৈরাচারী সরকার; না বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার– প্রত্যেকে কোনো রকমে বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টাতেই বাজেট-দর্শন অব্যাহত রেখেছে।
৩.
দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতির অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা সব ধরনের সৎ উদ্যোগকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করবার জন্য যথেষ্ট। বিশেষত রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতির স্বাভাবিক বিকাশ সম্ভব নয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ দিনের পর দিন দাবিদাওয়ায় রাজধানীর প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখছেন। রাজপথ বন্ধ থাকলে জনসাধারণের উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে যায়। দিন এনে দিন খাওয়াদের আর্থিক অবস্থা ৯ মাসে তলানিতে; সেই সঙ্গে রয়েছে যত্রতত্র মব সন্ত্রাস। উগ্রবাদীরা মব আতঙ্ক ছড়িয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতির সুবিধা নিচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি আইনের শাসন যেমন বিঘ্নিত করে, তেমনি বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়। যে কোনো বিনিয়োগকারীই সবার আগে চান নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা। কভিডের অর্থবছর বাদ দিলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সিকি শতাব্দীর মধ্যে সর্বনিম্ন; বিনিয়োগও গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। বিনিয়োগ না থাকায় কর্মসংস্থান কমে আসছে; পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও ক্রমবর্ধান রাজনৈতিক অস্থিরতায় সরকার বিশেষ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? শ্বেতপত্র কমিটি বা টাস্কফোর্সের সুপারিশ গ্রাহ্য না করে সরকার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার বদলে আজ এ দেশ, কাল সে দেশ থেকে অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি জানানো হচ্ছে। অদম্য অভ্যুত্থানজয়ী কোটি কোটি পরিশ্রমী মানুষের সামনে শুধু অর্থ সাহায্যের প্রতিশ্রুতি আশা জাগায় না। এ দেশের মানুষ পরিশ্রমী; তাদের সামনে কাজের সুযোগ তৈরির দায়িত্ব সরকারের। ভিক্ষার হাত তৈরি সরকারের কাজ হতে পারে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক রোডম্যাপও হাজির করতে হবে; সেখানে অর্থনৈতিক চিন্তারও সমন্বয় থাকবে। অর্থনৈতিক রোডম্যাপ ছাড়া রাজনৈতিক অভীষ্ট হাসিল সম্ভব নয়। আর এই দুই কাজ তখনই সম্ভব হবে, যখন জাতির সামনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বৃহস্পতিবার জাপানের টোকিওতে বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘ডিসেম্বরে ভোট চাইছে একটি দল।’ আগের দিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তারুণ্যের সমাবেশে জোর দিয়ে বলেছেন– নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে হবে। এমন পাল্টাপাল্টির মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফায় বৈঠক শুরু হয়েছে।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে বর্তমান সরকারের শম্বুকগতি ও অনির্দিষ্ট গন্তব্য দেশের পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত ও অস্থির করে তুলছে। সরকারকে অর্থনৈতিক অগ্রাধিকার সুনির্দিষ্ট এবং রাজনৈতিক পথনকশা সুস্পষ্ট করতে হবে। গণতন্ত্রের পথে নির্বিঘ্ন ও দ্রুত যাত্রা শুরুর ব্যাপারে সরকার দৃঢ়তা ও স্পষ্টতা যত দ্রুত দেখাবে; মানুষের সামনে থেকে অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা তত দ্রুত দূর হবে।
মাহবুব আজীজ: উপসম্পাদক, সমকাল; সাহিত্যিক
mahbubaziz01@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স খ য ন শ ব তপত র র জন ত ক পর স থ ত সরক র র ন শ চয়ত অন শ চ র স মন বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
দিন পার করার বাজেট
জাকির হোসেন
ছাত্রদের নেতৃত্বে গত বছরের জুলাই মাসে যে গণঅভ্যুত্থান হয়, তার অন্যতম কারণ ছিল কর্মসংস্থানের অভাব। প্রাথমিকভাবে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলেও এর পেছনে ছিল গভীরতর সামাজিক অসন্তুষ্টি। বিপুলসংখ্যক তরুণ কর্মসংস্থানের বাইরে। শিক্ষিত বেকারের হার অন্তত ২০ শতাংশ।
তরুণদের প্রত্যাশা ছিল, এই জায়গায় বড় উন্নতি হবে। তবে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটে সেই প্রত্যাশা পূরণে জোরালো পদক্ষেপ দেখা গেল না। শুধু কর্মসংস্থান নয়, প্রত্যাশিত অনেক খাতে সরকার গতানুগতিক থেকেছে। মনে হচ্ছে, দিন পার করার একটি বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
গত বছরের ছয় মাসে ৪ শতাংশ শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। চাকরি, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে নেই শ্রমশক্তির অন্তত ৩০ শতাংশের। ফলে দেশে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের যে প্রত্যাশা রয়েছে, বাজেটে সেভাবে মনোযোগ দেওয়া হয়নি। অবশ্য অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তব্যে কর্মসংস্থানের সামান্য তহবিল, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রকল্প এবং প্রশিক্ষণের উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তায় কয়েকটি জায়গায় নামমাত্র ভাতা বাড়ানো হয়েছে। টিসিবির বাদ পড়া ৪৩ লাখ পরিবারের কার্ড কবে হবে তার ঘোষণা নেই। ভাতা বাড়ানো হলেও সামাজিক নিরাপত্তার প্রকল্প কমিয়ে আনা হয়েছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাড়তি নজর দেওয়া হয়নি। আগে যেমন বরাদ্দ দেওয়া হতো, এবারও তেমন।
কর্মসংস্থানের সঙ্গে দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশের ৪ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বলেছে, দারিদ্র্য পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। দরিদ্রদের সুরক্ষায় বাজেটে কিছু কর্মসূচি ও প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানাননি অর্থ উপদেষ্টা।
বাজেটের আগে অর্থ উপদেষ্টা এবং এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হবে। বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর ঘোষণা রয়েছে। কিন্তু তা কার্যকর হবে ২০২৬-২৭ অর্থবছর থেকে। গত অর্থবছরের অর্থ আইনে দুই অর্থবছরের আয়করের হার নির্ধারণ করা হয়। বলা হচ্ছে, এ কারণে এখন সরকার পরিবর্তন করেনি।
কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক আইনে সংশোধন এনেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে করমুক্ত আয়ে আগামী অর্থবছরে ছাড় দেওয়া উচিত ছিল। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। এর মানে তাদের বেতন বাড়বে। মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দিতে সরকারি প্রায় ১৫ লাখ চাকরিজীবীর সুবিধা হবে।
অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’। বৈষম্যহীন ঘোষণা দিলেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ ধরনের সুযোগ রাখা সৎ করদাতাদের প্রতি বৈষম্যমূলক। অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তব্য সংক্ষিপ্ত, মাত্র ৬৬ পৃষ্ঠার। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য হলেও এর অনেকাংশ জুড়ে চলমান বিভিন্ন কর্মসূচি এবং উদ্যোগর বর্ণনা। নতুন উদ্যোগের কথা কম আছে।
বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার পদক্ষেপও আশানুরূপ নয়। অথচ গত অর্থবছরে জিডিপির অনুপাতে বেসরকারি বিনিয়োগ কমে গেছে। বিনিয়োগের বিষয়ে বলতে গিয়ে অর্থ উপদেষ্টা গত বিনিয়োগ সম্মেলনের গুণগান গেয়েছেন। নাসার সঙ্গে মহাকাশ গবেষণার চুক্তির কথা বলেছেন। এই চুক্তি দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতিকে কীভাবে উৎসাহ দেবে স্পষ্ট নয়। বিনিয়োগের বিভিন্ন অন্তরায় দ্রুততম সময়ে দূর করার চেষ্টার কথা জানিয়েছেন তিনি। বিডার ওয়ানস্টপ সার্ভিসের কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
এবারের বাজেটে আমদানি উদারীকরণের পথে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর অন্যতম লক্ষ্য ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক থেকে রেহাই পাওয়া। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয় এ রকম কিছু পণ্যকে মাথায় রেখে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় উৎপাদনে বিশেষত ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনে বিভিন্ন করছাড় কমানো হয়েছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য আমদানি বাণিজ্য উদারীকরণের দিকে অনেকটা এগোলেও দেশের রপ্তানিকারকরা যাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন, তার জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই।
ব্যয় কাঠামো
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেতন-ভাতা, সুদ পরিশোধসহ সরকারের পরিচালন ব্যয় তিন ভাগের দুই ভাগ। বাকি এক ভাগ উন্নয়ন ব্যয়। এভাবেই হয়ে আসছে দেশের বাজেট।
পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা। সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
এবার বাজেটে ব্যয়ের আকার এবং ঘাটতির আকার আগের চেয়ে কম ধরা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক ধরন থেকে সরে সরকার সামগ্রিক উন্নয়নে জোর দিতে চায়। এ কারণে ব্যয়ের আকার ছোট রাখা হয়েছে।