মৌলভীবাজারে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, পানিবন্দি ৫ হাজার মানুষ
Published: 3rd, June 2025 GMT
মৌলভীবাজারে কমেছে বৃষ্টি। ধীরে ধীরে কমছে নদীর পানি। স্বস্তি ফিরছে নদীপাড়ের মানুষের জীবনে। তবে, নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার কারণে পানিবন্দি হয়ে আছেন ৫ হাজার মানুষ।
কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগরে দেখা দেয় আকস্মিক বন্যা। অন্যান্য উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও রাজনগর উপজেলার কামারচাক ও টেংরা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
দুর্গতরা বলেছেন, মনু ও ধলাই নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে নদীপাড়ের মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তবে, ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আমাদের এলাকায় যে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে যাচ্ছে না। মানবসৃষ্ট নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে ছোট খাল ও নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের মশাজান, মৌলভীরচক, কড়াইয়া, ইসলামপুর, আদমপুর, জাঙ্গালী ও পঞ্চানন্দপুর এলাকার নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। টেংরা ইউনিয়নের দত্তগ্রাম, ইলাশপুর, দাসপাড়া ও টেংরা এলাকায় রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে সদ্য তোলা বোরো ধান নিয়ে বিপাকে আছেন চাষিরা। রোদের দেখা না পাওয়ায় ধান শুকাতে পারছেন না তারা। দুর্গত এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
কামারচাক ইউনিয়নের মৌলভীরচক গ্রামের আবদুল হান্নানের রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, নদীর পানি নামতে শুরু করেছে। এতে আমাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। সাত-আটটি গ্রাম এখনো জলমগ্ন আছে। প্রায় ৫ হাজার মানুষ এখনো পানিবন্দি আছেন।
মশাজান গ্রামের শামসুল ইসলাম বলেছেন, নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু, আমাদের এলাকার নিম্নাঞ্চলের রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। গ্রামীণ জনপদের মানুষ দুর্ভোগে আছেন।
টেংরা ইউনিয়নের দাসপাড়া গ্রামের শহিদ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, আখালি নদীর পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় আমরা জলাবদ্ধতার শিকার। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছি না।
টেংরা ইউনিয়নের একামধু গ্রামের মনু নদীর পাড়ের সোলেমান আহমদ বলেছেন, আমরা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। আতঙ্কে ছিলাম নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে। পানি কমতে শুরু করায় স্বস্তি ফিরেছে।
কামারচাক ইউনিয়নের মৌলভীরচক গ্রামের ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেছেন, উজানের পানি নামলেও নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ রাইজিংবিডিকে বলেছেন, জলাবদ্ধতার কারণ মানবসৃষ্ট। ছোট ছড়া ও নালা দিয়ে পানি নিষ্কাশনে প্রাকৃতিক প্রবাহকে মানুষ বাধাগ্রস্ত করে। এতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এসব রোধ করতে হলে কমিউনিটি লিডারদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজনগর উপজেলার আখালিয়া ছড়া খননের প্রকল্প পক্রিয়াধীন আছে।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা বলেছেন, সাম্প্রতিক বন্যায় রাজনগর উপজেলায় ৩ হাজার ১৫ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অনেক স্থানে শুকনো খাবার দিয়েছি। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
ঢাকা/আজিজ/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জনগর উপজ ল নদ র প ন বল ছ ন স বস ত
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস