মায়ার কারণে কোরবানির পর গরুর মাংস খেতে পারিনি
Published: 8th, June 2025 GMT
আমি তখন অনেক ছোট খুব সম্ভবত ক্লাস ওয়ানে পড়ি। তখন কুরবানি দেওয়ার জন্য একটা কালো গরু কিনে আনা হয়েছিল। তাও ঈদের প্রায় ২০ থেকে ২৫দিন আগে। এই ২০ দিনের মধ্যে গরুটির সঙ্গে আমাদের আত্মীক একটি সম্পর্ গড়ে উঠেছিল। ক্লাস অয়ানে পড়ুয়া একজন স্টুডেণ্টের কাছে গরুটি প্রথমত ছিল বিষ্ময়। প্রথমে দূর থেকে দেখতাম। তারপর একটু এটু কাছে যাওয়া শুরু করলাম। সাধারণ আমরা দেখি গরু একটু অ্যাগ্রেসিভ হয়, অচেনা মানুষ দেখলে তেড়ে আসে। কিন্তু ওই গরুটি ছিল একেবারেই আলাদা। শান্তু প্রকৃতির। আমি আর আমার ছোট বোন দিনের বেশির ভাগ গরুটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। একদিন দুই ভাইবোন মিলে গরুটাকে কাঁঠালপাতা খাওয়াতে গেলাম, গরুটা খেলো। আমরাতো ভীষণ খুশি। একজন আরেকজনকে বললাম, আরেক একি ব্যাপার গরুতো পাতা খাচ্ছে। দুই ভাইবোন পাতা এনে গরুকে দিতাম। গরু পাতাগুলো খাওয়া শেষ করলে আবার পাতা সংগ্রহ করতাম। এই কাজটি ছিল আমাদের কাছে সবচেয়ে খুশির ব্যাপার।
বিষয়টা এমন দাঁড়ালো যে স্কুলে থেকে ফেরার যেটুকু দেরি, এরপরে গরু নিয়ে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যেত। এরপর এমন একটা অবস্থা কুরবানির ঠিক দুই দিন আগে মাকে বললাম, গরুটা কুরবানি দিতে পারবা না। দুই ভাইবোন খুব কাঁদলাম।
মা ওই সময় প্রথমে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা করলো তারপর ছোট্ট করে বললো, আচ্ছা দেখি।
আরো পড়ুন:
সাবিলা নূরের ‘একাদশে বৃহস্পতি’!
ঈদ স্মৃতিতে দিলদার, শূন্যতায় ভাসে পরিবার
তো, দেখি মানে কি?-মা বললো, ঠিক আছে গরুটা কুরবানি দেবো না। আমরা খুশি হলাম। দুই ভাইবোন ঠিক করলাম, গরুটা আমরা পালবো। কিন্তু ঈদের দিন সকালেই দেখলাম বাড়ির উঠানে আর গরুটা নাই। তখনতো আর বুঝতাম না কুরবানির মানে কি? এটুকু বুঝতাম, মা বলছে মানে গরুটা আর কুরবানি দেওয়া হচেছ না। এটা আমাদের দুই ভাইবোনের কাছেই থেকে যাবে।
তখন আমরা বগুড়াতে থাকি। ঈদের দিন সকালে গরুটাকে না দেখে দৌড়ে মায়ের কাছে গেলাম। জানতে পারলাম যে, গরুটা কুরবানি দেওয়া হয়ে গেছে।
আমরা কাঁদছিলাম। মা কুরবানি শুরু গল্পটা আমাদের শোনালো। তারপর ভাবলাম গরুটা অটোমেটিক কুরবানি হয়ে গেছে।
অনেক কান্না কাটি করেছিলাম। আমরা দুই ভাইবোন ওই গরুর মাংস আর খাইনি। ঈদে বাড়িতে পোলাও রান্না হলো, পোলাওয়ের সুগন্ধ বাড়িতে ছড়িয়ে পড়লো। কত মানুষ আসলো, প্রতিবেশি আর গরীব মানুষকে গরুর মাংস দেওয়া হলো, বাড়িতে রান্না হলো-মাকে বললাম আমাকে শুধু পোলাও দেবে, গরুর মাংস দেবে না।
মা মুখটা ভারী করে রাখলো কিন্তু মাংস খাওয়ার জন্য জোর করেনি সেদিন। গরুটি কুরবানি করার পরে মায়ায় মাংস খেতে পারিনি।
অনুলিখন: স্বরলিপি
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ক রব ন
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
সংস্কার শেষে ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার চালু হয়েছে। আজ শনিবার সকালে বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ করার মধ্য দিয়ে এ কারার যাত্রা শুরু হয়। এতে চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি কারাগারের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ও ফেনী জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার আসামিদের রাখা হবে।
কারা সূত্র জানায়, দেশের পুরোনো চারটি কারাগারের মধ্যে ফেনী-২ কারাগার একটি। শত বছরের পুরোনো এ কারাগার ভবন ছিল জরাজীর্ণ। এ কারণে ২০১৯ সালে ১২ জানুয়ারি এ কারাগার থেকে বন্দীদের ফেনীর শহরতলির রানীরহাট এলাকার নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে কারাগারটি অনেকটা ‘পরিত্যক্ত’ অবস্থায় ছিল।
নতুন করে চালু হওয়া কারাগারটির অবস্থান ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায়। এটি ১৯১৫ সালে সাবজেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে জেলা এটিকে কারাগারে উন্নীত হয়। এ কারাগারের বর্তমান ধারণক্ষমতা ১৭২ জন। এর মধ্যে ১৭০ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। কারাগার চালু করার জন্য গতকাল কুমিল্লা জেলা কারাগার থেকে ২৪ জন ও চট্টগ্রাম থেকে চারজন বন্দীকে আনা হয়েছিল। তাঁরা সবাই সশ্রম সাজাপ্রাপ্ত। এ কারাগারে তাঁরা রান্নার দায়িত্বে থাকবেন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, ধাপে ধাপে সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দীদের ফেনীর দ্বিতীয় কারাগারে আনা হবে। আপাতত এতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২৬ জন, কুমিল্লা থেকে ৭৪ জন, নোয়াখালী থেকে ১৫ জন, লক্ষ্মীপুর থেকে ৪ জন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ৩৩ জন বন্দী এখানে স্থানান্তর করা হবে। এতে সেল, রান্নাঘর, কিশোর ওয়ার্ড, মসজিদসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা রয়েছে। এ কারাগার নিয়ে বর্তমানে দেশে কারার সংখ্যা ৭১।
জানতে চাইলে ফেনী-২–এর জেল সুপার মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘রাষ্ট্র চায়, কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, সংশোধনের কেন্দ্র হোক। এরই অংশ হিসেবে সংস্কার শেষে ফেনী কারাগার-২ চালু হয়েছে।’
কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার ফেরদৌস মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ কারাগারে স্থানান্তরিত বন্দীদের সব সুযোগ-সুবিধা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্সও যোগদান করেছেন। বেশির ভাগ পদে কর্মচারীরাও কাজ শুরু করেছেন।’