এরশাদকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল পুরো পরিবার, অকালমৃত্যুতে আবার অনিশ্চয়তা
Published: 15th, June 2025 GMT
অভাবের সংসারে সংগ্রাম করেই বড় হয়েছিলেন এরশাদ হোসেন (২৫)। রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি করেছেন পড়াশোনা। প্রায় সাত বছর আগে যোগ দিয়েছিলেন সেনাবাহিনীতে। এরপর বিয়ে করে হয়েছেন একটি ছেলেসন্তানের বাবা। বৃদ্ধ মা–বাবা তাঁর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এরই মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিভে গেল এরশাদের জীবনপ্রদীপ। তাঁর মাত্র ১৫ মাস বয়সী ছেলেটিকে নিয়ে এখন দিশাহারা পুরো পরিবার।
এরশাদ হোসেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের বোয়ালমারী-টুনিরহাট এলাকার আবদুল খালেকের ছেলে। তিনি সাভার সেনানিবাসে সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার নূরজাহানপুর এলাকায় দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনায় যে পাঁচজন বাসযাত্রী মারা যান, তাঁদের মধ্যে এরশাদ হোসেন একজন। পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের ওই বাসে ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরছিলেন এরশাদ।
গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে এরশাদ হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় স্বজনদের ভিড়। ভেতর-বাইরের উঠানে বসে লাশের অপেক্ষা করছেন তাঁরা। ঘরের ভেতর বিছানায় বসে আহাজারি করছেন এরশাদের পক্ষাঘাতগ্রস্ত মা তহমিনা বেগম (৬০)। তাঁকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনেরা। এরশাদের ছেলে আরাফাত হোসেনকে কোলে নিয়ে পাশে বসে কাঁদছেন তাঁর বড় ভাইয়ের স্ত্রী মুক্তা বেগম (৩০)। অবাক দৃষ্টিতে সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে অবুঝ শিশুটি। এরশাদের বাবা, বড় ভাই, স্ত্রীসহ কয়েক স্বজন রংপুরে গেছেন লাশ আনতে।
আহাজারি করতে করতে এরশাদের মা তহমিনা বেগম বলছিলেন, ‘যাবার সময় খালি কহে (বলে) গেল, “মা, মুই গেনুগে (মা, আমি গেলাম)।” মোর বাপটার এইডায় শেষ কথা বাপু। মোর মানিকটা আসলে চলে গেল গে বাপু। এ্যাল (এখন) মোর কী হবে, মুই প্যারালাইসিসের রুগি। ওর অবুঝ বাচ্চাডার কী হবে?’
তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন এরশাদ হোসেন। দিনমজুর বাবার প্রায় দুই বিঘার ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কোনো জমিজমা নেই। এরশাদের তিন বোনের বিয়ে হয়েছে। দিনমজুর বড় ভাই তাহের হাসানও বিয়ে করে সংসার করছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, কষ্ট করে পড়ালেখার পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন এরশাদ। প্রায় সাত বছর আগে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পরপরই সেনাবাহিনীতে চাকরি হয় এরশাদ হোসেনের। এর পর থেকেই সংসারের সুখ ফেরানোর চেষ্টায় নামেন তিনি। তিন বছর আগে বিয়ে করেন। বাবার ভিটায় তিন কক্ষের একটি টিনশেড আধা পাকা ঘর দিয়েছেন। বৃদ্ধ বাবাকে ছাড়িয়েছেন দিনমজুরের কাজ থেকে। আর সম্প্রতি বড় ভাইকে ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যান কিনতেও সহযোগিতা করেছেন তিনি। পক্ষাঘাতগ্রস্ত মায়ের চিকিৎসাসহ প্রায় সব দ্বায়িত্বই পালন করতেন এরশাদ। ৪ জুন ১০ দিনের ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। গতকাল তাঁর কর্মস্থলে যোগদানের কথা ছিল।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সেনাসদস্য এরশাদ হোসেনের মাসহ স্বজনদের আহাজারি। গতকাল শনিবার রাতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের বোয়ালমারী-টুনিরহাট এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এরশ দ হ স ন এরশ দ র ন এরশ দ বড় ভ ই
এছাড়াও পড়ুন:
বাউফলে বেদখল সরকারি ৭ গণমিলনায়তন
পটুয়াখালীর বাউফলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় সরকারি ৭টি গণমিলনায়তন বেদখল হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব গণমিলনায়তনে দোকান তুলে ভাড়া দেওয়াসহ নানা কাজে ব্যবহার করছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের নির্মিত এসব গণমিলনায়তনের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তদারকির অভাবে এগুলো স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগ নেতারা দখল করেন। পরে দোকান তুলে ভাড়া দেন। অনেকে গণমিলনায়তনের জমিতে লাগানো গাছও কেটে বিক্রি করেন। এ ছাড়া পরিত্যক্ত ভবনে মাদক ও জুয়ার আসর বসে।
১৯৮৯ সালে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও কর্মঠ করে তোলার লক্ষ্যে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ ও জনসচেতনতা তৈরিতে গণমিলনায়তন কেন্দ্র তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে উপজেলার কালাইয়া বন্দর, বীরপাশা, কালিশুরি বাজার, চন্দ্রপাড়া, মমিনপুর, বগাবাজার ও পৌরসভার কালীবাড়ি এলাকায় গণমিলনায়তন নির্মাণ করা হয়। আধাপাকা টিনশেড ভবনে গণমিলনায়তন নির্মাণে জমিও অধিগ্রহণ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
সরেজমিন দেখা যায়, চন্দ্রদ্বীপের চেয়ারম্যান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক আলকাছ কালাইয়া বন্দরের গণমিলনায়তনটি দলীয় সাইন বোর্ড লাগিয়ে দখলে নিয়েছেন। স্থানীয়রা জানান, এনামুল হক সেখানে দুটি দোকান ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া সেখানে তাস ও ক্যারম বোর্ডের নামে জুয়ার আসর জমে। গত বছরের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চেয়ারম্যান এনামুল এলাকা ছেড়ে চলে যান। পরে কালাইয়া বিএনপির আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন তুহিনের সমর্থিত নেতাকর্মীরা মিলনায়তনটি দখল করে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জসিম উদ্দিন তুহিন বলেন, তিনি মিলনায়তনটি দখল করেননি। স্থানীয় তরুণ ও যুবকরা সেখানে ক্যারাম বোর্ড খেলে।
চন্দ্রপাড়ার আবদুল খালেক মাতুব্বর বাড়ির সামনে ১৫ শতাংশ জমিতে গণমিলনায়তন নির্মিত হয়। কয়েক বছর বিভিন্ন প্রশিক্ষণও হয়েছে সেখানে। কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কেন্দ্রটিকে ওই বাড়ির এক ব্যক্তি গোয়াল ঘর হিসেবে ব্যবহার করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় প্রভাবশালীরা গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ইট ও টিন খুলে নেয়। এ ছাড়া সেখানে থাকা চারটি পুরোনো রেইন্ট্রি গাছ কেটে নিয়ে যায় তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন মৃধা বলেন, যুবলীগ নেতা মো. জহির মাতুব্বর গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ইট ও টিন খুলে নেওয়ার পাশাপাশি চারটি রেইন্ট্রি গাছ কেটে বিক্রি করেন। ওই চারটি গাছের মূল্য লক্ষাধিক টাকা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জহির মদনপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন। অভিযোগ অস্বীকার করে জহির মাতুব্বর বলেন, কে বা কারা এ কাজ করেছে তা তিনি জানেন না।
কনকদিয়ার বীরপাশা এলাকার বাসিন্দা ফোরকান মাস্টার বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বীরপাশা গ্রামের গণমিলনায়তনটি বখাটেদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
কেশবপুরের মমিনপুরের গণমিলনায়তনটিরও একই দশা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) শাহজাহান বলেন, তাঁর এলাকার গণমিলনায়তন ভবনটির নিয়ন্ত্রণ নিতে তিনি উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তারা কর্ণপাত করেন না।
এদিকে বাউফল পৌরসভার বাজার রোড এলাকায় গণমিলনায়তন কেন্দ্রের ৫ শতাংশ জমি রয়েছে। সেখানে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গণশৌচাগার নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, তিনি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছেন। এসব বিষয়ে তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন তিনি।
পটুয়াখালী জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. শাহজাদা বলেন, এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।