পাচার অর্থ ফেরাতে যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে সরকার: গভর্নর
Published: 15th, June 2025 GMT
পাচার করা অর্থ ফেরতের বিষয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সবচেয়ে গভীরভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে কয়েকটি দেশে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স (এমএলএ) করা হয়েছে। আমাদের সরবরাহ করা তথ্যে সন্তুষ্ট হয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে কিছু সম্পত্তি জব্দ হয়েছে। শিগগিরই আরও কিছু সম্পদ সংযুক্ত করা যাবে। ব্রিটেনে যাদের সম্পদ জব্দ হচ্ছে দেশটির সরকার চাইলে তাদের অন্য যে কোনো দেশের সম্পদ সংযুক্ত করতে পারে। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন গভর্নর ড.
বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই মধ্যে যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জান চৌধুরী জাভেদের বিপুল সম্পদ এবং সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান এফ রহমান ও তার ভাতিজার ফ্ল্যাট জব্দ করেছে দেশটির ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ)। গত ১০ থেকে ১৩ জুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরসহ একটি টিম দেশটিতে সফর করেন। পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা করা এই সফরের প্রধান লক্ষ্য।
যুক্তরাজ্যের এই সম্পত্তি কিসের ভিত্তিতে ফ্রিজ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, আমরা মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স (এমএলএ) চেয়েছি। পাচারকারীদের সম্পত্তির বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দিচ্ছি। বাংলাদেশ থেকে কে কত টাকা লুট করেছে, কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা নিয়ে গেছে এসবের ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আরও নতুন আবেদন যাচ্ছে।
তিনি বলেন, পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সময় সাপেক্ষ। তবে সম্পদ ফ্রিজ না হলে তা বিক্রি করে অন্য দেশে নিয়ে যায়। এখন বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হতে যত বছরই লাগুক বিক্রি করতে পারবে না। এটা একটা প্রাথমিক অর্জন। এই সম্পদ আর স্থানান্তর হবে না। শিগগিরই আরও কিছু সম্পদ সংযুক্ত করা যাবে। আরেকটি বিষয় হলো– কিছু ব্যক্তি ও পরিবারের ওপর বাংলাদেশের অর্থ আত্মসাতের যে ক্লেইম বা দাবি আমরা করেছি, সেটার যথার্থতা আছে তার প্রমাণ।
গভর্নর বলেন, পাচারকারীদের বিষয়ে দেওয়ানি মামলা হবে নাকি ফৌজদারি সেটা নির্ভর করবে সরকারের ওপর। আবার এই সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায়। ফৌজদারি মামলা প্রমাণের জন্য অনেক বেশি তথ্য-উপাত্ত দিতে হয়। পর্যাপ্ত সাক্ষ্য–প্রমাণ না থাকলে তখন দেওয়ানি মামলা করা হয়। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে কিছু আইনজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে। তবে একবার ফৌজদারি মামলা করলে সেটিকে আর ফেরানো যায় না। ফলে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
অর্থ ফেরতের বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ধাপে ধাপে এগোতে হবে। অর্থ ফেরত আনার দু’টি উপায় আছে। তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণের ভিত্তিতে অর্থ ফেরত আনা। আরেকটি হলো– সমঝোতার ভিত্তিতে অর্থ ফেরত আনা। তবে এসব হবে কেইস টু কেইস ভিত্তিতে। সরকার আদালতের বাইরে সমঝোতা করতে চাইলে তখন দুই পক্ষের আইনজীবী বসে সমঝোতার চেষ্টা করবেন।
গভর্নর আরও বলেন, লুটকারীদের বিরুদ্ধে দেশীয় সম্পদের জন্য দেশের আদালতে মামলা হবে। আর বিদেশি সম্পদের জন্য দেশের বাইরে মামলা হবে। এজন্য সরকার চাইলে এখনই আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারে।
কবে নাগাদ মামলা হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া তার নিজস্ব গতিতে চলে। এখন চাইলে আমরা আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারব। তবে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় আছে।
যুক্তরাজ্যে সম্পদ জব্দ হলেও অন্য দেশে কেন হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে আহসান এইচ মনসুর বলেন, খুব বেশি দেশে এমএলএ পাঠানো হয়নি। অন্য অনেক দেশের সঙ্গে আমাদের আলোচনা রয়েছে। তবে সবচেয়ে গভীর আলোচনা রয়েছে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে। এর দু’টি কারণ দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক গভীর। আবার ডকুমেন্ট প্রস্তুতিতে তারা আমাদের সহায়তা দিচ্ছে। ৬ মাসের জন্য তারা এখানে এসে কীভাবে ডকুমেন্ট প্রস্তুত করতে হবে সেই সহযোগী দিচ্ছে। সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য এ ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও আমাদের আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছিল। তবে সরকার পরিবর্তনের পর এখন অনেক সংস্থায় পরিবর্তন এসেছে। অনেক জায়গায় লোক নিয়োগ হয়নি। যে কারণে আবার নতুন করে আলোচনা করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যে সম্পদ জব্দের আরেকটি ভালো দিক রয়েছে। সেটা হলো ব্রিটিশ সরকার চাইলে এসব ব্যক্তিদের অন্য যে কোনো দেশের সম্পদ সংযুক্ত করতে পারে।
গভর্নর বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আমরা একটি তহবিল করতে পারি। আবার অর্থ উদ্ধারে সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানও তহবিল আনতে পারে। এখন তারাই অর্থ আনার বিষয়ে উৎসাহী। এভাবে অর্থ উদ্ধার হলে পরে তাদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দিয়ে বাকিটা আমাদের ফেরত দেবে। টাকা উদ্ধারের ওপর নির্ভর করবে কত শতাংশ তারা নেবে।
গভর্নরকে ব্যক্তিগত আক্রমণ
সন্দেহভাজন অর্থ পাচারকারীদের অনেকেই আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছে এমন প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, যখনই আমি ইউকে যাচ্ছি তখনই ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে পাচারকারীরা হয়তো সবার দৃষ্টি তাদের দিক থেকে আমার দিকে ফেরাতে চায়। সেই চেষ্টায় তারা সফলও হয়। তবে আমার বক্তব্য পরিষ্কার। এটা বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে করা। এখানে কোনো সত্যতা নেই। আমার প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েরা কে কোথায় বাড়ি করবে, কোথায় বিয়ে করবে এটা তাদের বিষয়। এই জিনিসটা নিয়ে আলোচনা একটি অযাচিত চর্চা। আমি একটি পয়সা বাইরে নিয়েছি কেউ প্রমাণ করতে পারলে নিয়ে আসেন। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি। বরং আইএমএফে চাকরির টাকায় বিদেশে করা সম্পদ দেশে এনেছি।
কিছু ব্যাংক একীভূত হবে, কর্মীদের আতঙ্কের কিছু নেই
আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, কিছু ব্যাংক একীভূত হবে। এতে কর্মীদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেননা এক জায়গায় শাখা বন্ধ হবে। আরেক জায়গায় হয়তো শাখা খোলা হবে। ব্যাংক একীভূতকরণের বিষয়টি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা একটি বিভাগই খোলা হচ্ছে। যাদের কাজ হবে যদি কোনো ব্যাংক নিজেদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যায় আগেই ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকারিকরণের মাধ্যমে একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণ করা হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের আগে একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শেষ হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার মিলে একীভূতকরণ করে থাকে। এ জন্য অর্থের দরকার হয়। তা সরকার দিয়ে থাকে। সরকার পরিবর্তন হবে। তবে আমরা আশা করব তারাও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। এই প্রক্রিয়াকে তারা চলমান রাখবে।
তিনি আরও বলেন, একীভূতকরণের সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। অর্থনীতিকে সচল রাখতে হবে, ব্যাংক খাতকে শক্তিশালী রাখতে হবে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যখন যেখানে হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন তা করবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আহস ন এইচ মনস র য ক তর ষ ট র য ক তর জ য আম দ র স অর থ ফ র প চ রক র প চ র কর প রক র য় র জন য র বল ন রক র র রক র দ এক ভ ত
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের আগেই পাঁচ ব্যাংক এক হবে: গভর্নর
বেসরকারি খাতের পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে একীভূত (মার্জার) করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে এই একীভূতকরণের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা আশা করি, আগামী সরকারও এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেবে। তবে নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পাঁচটি ইসলামী ব্যাংক একীভূত হবে।’
আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি ব্যাংককর্মীদের আশ্বস্ত করেন, এই একীভূতকরণের ফলে কোনো কর্মীকে চাকরি হারাতে হবে না।
গভর্নর বলেন, কর্মীদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রয়োজনে কিছু শাখা পুনর্বিন্যাস করা হবে। যেসব ব্যাংকের শাখা শহর এলাকায় বেশি, সেগুলোর কিছু শাখা গ্রামাঞ্চলে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
এ সময় পাচার করা সম্পদ উদ্ধার করা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘সম্পদ উদ্ধারের বিষয়টি একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়ার প্রক্রিয়া। আদালতের চূড়ান্ত রায় ছাড়া এসব অর্থ উদ্ধার সম্ভব নয়। এ জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা চাই, আদালতের মাধ্যমে যাচাই হোক, আমাদের দাবি কতটা সঠিক। আদালতের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই অর্থ উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।’
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, আদালতের বাইরে সমঝোতার মাধ্যমে অর্থ ফেরতের পথও খোলা আছে। সে ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজবেন। সরকার যে পথ নির্ধারণ করবে, আদালত কিংবা এডিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে।
গভর্নর আরও বলেন, দেশীয় সম্পদ উদ্ধারে দেশের আদালতে এবং বিদেশি সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে।