ভালোবাসা পেলে আমার চোখ ভিজে আসে, ছলছল চোখে বললেন জাহিদ হাসান
Published: 19th, June 2025 GMT
‘আজকে আমার ঈদ। কারণ ঈদের আগের দিন থেকে আমি অসুস্থ ছিলাম। হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলাম। এর মধ্যেই ছবি মুক্তি পেয়েছে।’ বলছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা জাহিদ হাসান।
এবারের ঈদুল আজহায় পর্দায় এসেছে তানিম নূর পরিচালিত চলচ্চিত্র উৎসব। এই সিনেমায় 'খাইস্টা জাহাঙ্গীর' চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। তার চরিত্রটি দারুণভাবে গ্রহণ করেছেন দর্শক। তবে তাকে নিয়ে দর্শকদের উচ্ছ্বাস হলে হলে গিয়ে উপভোগ করতে পারেননি তিনি। কারণ । ঈদের আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। পরিস্থিতির অবনতি হলে স্থান হয় হাসপাতালের আইসিইউতে। একদিকে শরীরের ক্লান্তি, অন্যদিকে বহু প্রতীক্ষিত সিনেমার মুক্তি—দুইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি হয়ে ওঠেন যেন এক নিঃশব্দ যোদ্ধা।
অবশেষে গতকাল শরীরের সঙ্গে আপস করে নয়, যেন এক লড়াই জিতে, তিনি হাজির হলেন সিনেমা হলে। সঙ্গে ছিলেন নির্মাতা, সহশিল্পী আর তাঁর প্রাণের দর্শকেরা। পর্দা জ্বলে ওঠার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের হৃদয়ের দরজা খুলে দিলেন তিনি,‘আজকে আমার ঈদ। কারণ ঈদের আগের দিন থেকে আমি অসুস্থ ছিলাম। হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলাম। এর মধ্যেই ছবি মুক্তি পেয়েছে।’
একটু থেমে, আরেকটু নরম হয়ে, বললেন কৃতজ্ঞতার কথা, ‘আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনারা যে এত ভালো ভালো মন্তব্য করেছেন, দর্শকদের ছবিটি দেখানোর চেষ্টা করেছেন, সেটা আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। আমি নিজে আসতে পারছিলাম না, কিন্তু আমার সহযোদ্ধারা, ভাই-ব্রাদার, পরিবার। সবাই পাশে ছিল। তাদের উৎসাহে মনে শান্তি পেয়েছি।’
ঠিক তখনই কেউ বলে ওঠে, ‘আজ আপনার দিন, আপনি আরও কিছু বলেন।’ এই ছোট্ট আহ্বান, এই মমতামাখা ভালোবাসা যেন ছুঁয়ে যায় তাঁর হৃদয়ের গভীরতম সুরটিকে। চোখে জল আসে তাঁর। কণ্ঠে এসে জমে কাঁপা এক সত্য, ‘কেউ আমাকে ভালোবাসলে আমার কান্না পেয়ে যায়। কেউ আদর করলে চোখে জল আসে। এটা কোনো অভিনয় নয়, সত্যি কথা। আমি অনেক ছবি করেছি, ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। কিন্তু এভাবে কোনো ছবি আমার জীবনে আসেনি। এত ক্যামেরা, এত ভালোবাসা। এটা আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া।’
এই মুহূর্তটি যেন শুধু সিনেমার সাফল্য উদযাপন নয়, একজন শিল্পীর জীবনের গভীরতম আত্মপ্রকাশ। এক নিঃশব্দ যোদ্ধার আবেগঘন বিজয়। উৎসব এখন আর কেবল একটি সিনেমার নাম নয়। এটি হয়ে উঠেছে শিল্প ও ভালোবাসার এক অমলিন মিলনক্ষেত্র।
জাহিদ হাসানের পাশাপাশি ছবিটিতে অভিনয় করেছেন আমাদের অভিনয় ভুবনের রত্নেরা, জয়া আহসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সৌম্য জ্যোতি, সাদিয়া আয়মান প্রমুখ।
উৎসব যেন এক আবেগময় ক্যানভাস, যেখানে পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের ফাটল আর মানুষের গোপন অনুভবেরা রং হয়ে ঝরে পড়ে। আর ঠিক সেখানেই জাহিদ হাসানের ‘খাইস্টা জাহাঙ্গীর’ হয়ে উঠেছেন একটি আলাদা সুর, যা শেষ দৃশ্য পেরিয়েও হৃদয়ে বাজতেই থাকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র স ন ম কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’