রাজধানীর মগবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে এক দম্পতি ও তাদের সন্তানের রহস্যজনক মৃত্যুর পর লাশের ময়নাতদন্ত শেষে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

নিহতরা হলেন, রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মনির হোসেন, তার স্ত্রী স্বপ্না আক্তার ও তাদের শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ছেলে নাঈম হোসেন। মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়।

হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত শনিবার (২৮ জুন) বিকালে মনির হোসেন তার প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে ১০৩ নম্বর রুমে ওঠেন। মনির হোসেনের সঙ্গে এনআইডি কার্ড না থাকায় তার চাচা রফিকুল ইসলামের এনআইডি দিয়ে হোটেল বুকিং দেয়া হয়। পরে রফিকুল বাইরে থেকে খাবার নিয়ে এসে চলে যায়। রাতেই পরিবারটি অসুস্থ হয়ে পড়লেও হোটেল কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি। রোববার (২৯ জুন) সকাল ১১টার দিকে রফিকুল তার মেয়েকে নিয়ে হোটেলে আসেন এবং প্রথমে স্বপ্না আক্তারকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর মনির হোসেনকে এবং পরে চিৎকার শুনে হোটেল কর্মীরা নাইমকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

আরো পড়ুন:

বরগুনায় ডেঙ্গুতে ব্যবসায়ীর মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৯৩

এক শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে মারা গেল ২ জনই

পরে ময়নাতদন্ত শেষে তাদের লাশ রামগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের নিজ বাড়িতে পৌঁছায়। মঙ্গলবার (১ জুলাই) জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পুলিশ ধারণা করছে, বিষক্রিয়া অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে এই মৃত্যু হতে পারে। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মরদ হ মন র হ স ন তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

নাম–ঠিকানা বদলে এনআইডি–পাসপোর্ট, উড়াল দেওয়ার আগেই ধরা সাজাপ্রাপ্ত দুই ভাই

শাহিনুর রহমান ওরফে সুমন (৪৮) ও সাদিকুর রহমান (৪৫)—দুই ভাই। তাঁরা একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বাড়ি রাজশাহী নগরের কেশবপুর ভেড়ীপাড়া এলাকায়। ঠিকানা পাল্টে তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন। নিজেদের নামও পরিবর্তন করেছেন। নতুন নাম-ঠিকানা দিয়ে পাসপোর্টও করেছেন। এবার শুধু উড়ে যাওয়া বাকি। এমন সময় খবর পায় র‌্যাব-৫। বুধবার সকালে নগরের শাহ মখদুম থানার চকপাড়া বড় বনগ্রাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার দুজনের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেছিলেন শফিকুল ইসলাম নামে পাবনার একজন ট্রাকচালক। মামলায় তাঁকে (চালকের) গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যাচেষ্টা ও তাঁর সহকারী মো. আনজুকে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছিল। ওই মামলায় দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। সাজা এড়াতে তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে বিদেশে পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে দুই যুবক এসে পাবনার দাসুড়িয়ায় কালো পাথর নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাকচালক শফিকুল ইসলামের ট্রাকটি ভাড়া করেন। গাড়ির ভাড়া মেটানো হয় ৬ হাজার ৩০০ টাকা। পথিমধ্যে আরও ১০০ বস্তা সিমেন্ট তোলার কথা হয়। কিছু দূর এসে তাঁদের সঙ্গে আরও একজন গাড়িতে ওঠেন। তাঁদের কথাবার্তায় একজনের নাম সুমন বলে জানতে পারেন চালক। কিছু দূর যাওয়ার পর তাঁরা দুজন নারী ও মুখে দাড়িওয়ালা ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে গাড়িতে তোলেন। সুমন জানান, বয়স্ক ব্যক্তিটি তাঁর বাবা, দুই নারীর একজন তাঁর মা ও অন্যজন তাঁর বোন। তাঁরা রাজশাহীতে যাবেন। সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে এসে তাঁরা পাশের এক বাড়িতে নেমে কী যেন সলাপরামর্শ করেন। রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা দেন। গোদাগাড়ীর ডাইংপাড়ার মোড়ে ট্রাক থামিয়ে তাঁরা পেপসি কেনেন। তাঁকে খেতে দিলে সন্দেহবশত তিনি সামান্য একটু খান। এরপর ফাঁকা রাস্তায় আসতেই তাঁর পাশে বসা বয়স্ক দাড়িওয়ালা লোকটি তাঁর গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বাঁ হাত দিয়ে দড়ি ছাড়িয়ে কৌশলে ডান দিকে লাফ দিয়ে ধানখেতে পালিয়ে যান। তিনি বুঝতে পারেন, তাঁরা তাঁকে হত্যা করে অন্য কোনো অপরাধ সংঘটন করবেন। তিনি ভোরে বের হয়ে এসে গোদাগাড়ীর বিজয়নগর এলাকায় এসে ট্রাকটি পান। সেখানে পুলিশ উপস্থিত ছিল। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তাঁর সহকারী আনজুমকে গলায় ফাঁস ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাঁরা নির্মমভাবে হত্যা করে চলে গেছেন।

র‍্যাব সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ৮ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রেজাউল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলার পরপরই পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করে। আসামি দুই ভাই পাঁচ বছর জেলে থাকার পর ২০১০ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যান। আদালত আসামিদের অনুপস্থিতিতে তাঁদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। আসামিরা নিজেদের নাম পরিবর্তন করে নতুন এনআইডি কার্ড বানিয়ে সাজা এড়াতে বিদেশে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেন। তাঁরা ঢাকায় গাড়ি মেরামত ও বেচাকেনার কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাম–ঠিকানা বদলে এনআইডি–পাসপোর্ট, উড়াল দেওয়ার আগেই ধরা সাজাপ্রাপ্ত দুই ভাই