তিব্বতি বৌদ্ধদের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা শুধু একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নন, তিনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তিত্ব। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী চতুর্দশ দালাই লামা চলতি বছরের ৬ জুলাই ৯০ বছরে পদার্পণ করছেন। তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন, এই প্রশ্ন এখন শুধু ধর্মীয় অনুসারীদের জন্য নয়, বরং চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

চতুর্দশ দালাই লামা যেভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন

তিব্বতি ঐতিহ্য অনুযায়ী, একজন জ্যেষ্ঠ ভিক্ষুর আত্মা মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভ করে। এই বিশ্বাস থেকেই দালাই লামার উত্তরসূরি খোঁজার প্রক্রিয়া চলে। বর্তমান চতুর্দশ দালাই লামা ১৯৩৫ সালে চীনের কিংহাই প্রদেশে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম তেনজিন গিয়াৎসো (সংক্ষেপে লামো থোন্ডুপ)।

তিব্বত সরকারের পাঠানো এক অনুসন্ধানী দল মাত্র দুই বছর বয়সে তাঁকে ত্রয়োদশ দালাই লামার পুনর্জন্ম হিসেবে শনাক্ত করে। দালাই লামার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট অনুযায়ী, দলটি কয়েকটি চিহ্নের ভিত্তিতে তেনজিন গিয়াৎসোকে পরবর্তী দালাই লামা হিসেবে শনাক্ত করে। এর মধ্যে একটি ছিল, একজন জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু তাঁকে স্বপ্নে দেখেছিলেন। ত্রয়োদশ দালাই লামার কিছু জিনিস দেখে শিশু তেনজিন বলে ওঠে, ‘এটা আমার, এটা আমার।’

তেনজিনের এ কথা শোনার পর অনুসন্ধানী দলটি তাঁর ব্যাপারে নিশ্চিত হয় যে তিনিই দালাই লামার উত্তরসূরি। স্বায়ত্তশাসিত তিব্বতের রাজধানী লাসার পোতালা প্রাসাদে ১৯৪০ সালে তেনজিন গিয়াৎসো আনুষ্ঠানিকভাবে দালাই লামা হিসেবে অধিষ্ঠিত হন।

দালাই লামার উত্তরসূরি কীভাবে নির্ধারিত হবেন

১৯৫৯ সালে চীনে মাও–সেতুংয়ের কমিউনিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে ব্যর্থ বিদ্রোহের পর দালাই লামা ভারতের উত্তরাঞ্চলে ধর্মশালায় নির্বাসনে যান এবং তখন থেকেই সেখানেই বসবাস করছেন।

২০২৫ সালের মার্চে প্রকাশিত নিজের বই ‘ভয়েস ফর দ্য ভয়েসলেস’-এ দালাই লামা লিখেছেন, তাঁর উত্তরসূরি চীনের বাইরে জন্ম নেবেন। ৯০তম জন্মদিনের কাছাকাছি সময়ে তিনি উত্তরাধিকার–সংক্রান্ত বিস্তারিত জানাবেন। বছরের পর বছর ধরে চলা জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল বুধবার তিনি বলেন, শতাব্দীপ্রাচীন দালাই লামা প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে এবং তাঁর পুনর্জন্ম বা উত্তরাধিকার শনাক্তের একমাত্র অধিকার থাকবে ভারতভিত্তিক গাদেন ফোদরাং ট্রাস্টের হাতে।

২০১১ সালে বর্তমান দালাই লামাই এই ট্রাস্ট গঠন করেন। এটি তাঁর আধ্যাত্মিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডকে সহায়তা করে। এটি ধর্মশালায় নিবন্ধিত একটি অলাভজনক সংস্থা। এর সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন দালাই লামা, জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু সামধোং রিনপোচে এবং দালাই লামার দপ্তরে কর্মরত ঘনিষ্ঠ সহকারীরা।

তিব্বতের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার দোলমা সেরিং টেইখাং বলেন, ‘তিনি (দালাই লামা) বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে। তার মানে তাঁর পুনর্জন্ম হবে। আমাদের দালাই লামার পুনর্জন্ম হবে এবং এই প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে।’

দালাই লামার মতো তিব্বতের পার্লামেন্টও নির্বাসিত। ধর্মশালাভিত্তিক এই পার্লামেন্ট জানিয়েছে, গাদেন ফোদরাং ট্রাস্টের কর্মকর্তারা চতুর্দশ দালাই লামার উত্তরসূরি খোঁজার সময় নির্বাসিত সরকার যেন কাজ চালিয়ে যেতে পারে, সেই জন্য একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।

আরও পড়ুনতাহলে দালাই লামার মৃত্যুর পর একজন উত্তরসূরি থাকছেন০২ জুলাই ২০২৫

চীন কী বলছে

চীন অবশ্য দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। দেশটি বলছে, তাদের নেতাদের দালাই লামার উত্তরসূরি অনুমোদনের অধিকার আছে। ১৭৯৩ সালে কুইং রাজবংশের সময় থেকে প্রচলিত সম্ভাব্য উত্তরসূরির নাম সোনালি পাত্র (গোল্ডেন আর্ন) থেকে তোলার যে প্রথা রয়েছে, তা অনুসরণ করতে হবে। চীনের ভূখণ্ডের ভেতরে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে উত্তরসূরি নির্বাচিত হতে হবে। চীন জানায়, এ নির্বাচনপ্রক্রিয়া চীনের আইন, ধর্মীয় রীতি ও ঐতিহাসিক প্রথা অনুযায়ী হতে হবে।

কিন্তু দালাই লামা ও তিব্বতিরা চীনের এই হস্তক্ষেপকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করেন। দালাই লামা বলেছেন, ধর্মে অবিশ্বাসী চীনা কমিউনিস্টদের পক্ষে ‘ভিক্ষুদের পুনর্জন্ম প্রথায় হস্তক্ষেপ করাটাই অপ্রাসঙ্গিক, দালাই লামার ক্ষেত্রে তা আরও অনুচিত।’ তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক স্বার্থে নির্বাচিত প্রার্থী, বিশেষ করে চীনা সরকারের মনোনীত কাউকে তিব্বতিদের গ্রহণ করা উচিত নয়।

চীন সরকার দালাই লামাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। তিব্বতের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য ১৯৮৯ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ছবি প্রকাশ্যে দেখানো বা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করা চীন সরকার নিষিদ্ধ করেছে।

২০২৫ সালের মার্চে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, দালাই লামা একজন রাজনৈতিক নির্বাসিত ব্যক্তি। তিব্বতি জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করার কোনো অধিকার তাঁর নেই।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র কী ভূমিকা রাখতে পারে

দালাই লামা ছাড়াও ভারতে এক লাখের বেশি তিব্বতি বৌদ্ধ বসবাস করেন বলে ধারণা করা হয়। তাঁরা সেখানে স্বাধীনভাবে পড়াশোনা ও কাজ করতে পারেন।

অনেক ভারতীয় দালাই লামাকে শ্রদ্ধা করেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভারতে তাঁর উপস্থিতি ভারতকে প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রেখেছে।

ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও তিব্বতিদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে সরব। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমন একটি আইন স্বাক্ষর করেন, যা চীনকে তিব্বতের স্বায়ত্তশাসন–সংক্রান্ত বিরোধের সমাধানের জন্য চাপ দেয়। মার্কিন কংগ্রেস বহুবার বলেছে, তারা দালাই লামার উত্তরসূরি নির্বাচনে চীনের হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না।

আরও পড়ুনপরবর্তী দালাই লামা কে হবেন, সেটি কেন ঠিক করতে চায় চীন২৩ জুন ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এই প র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন

র‍াস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। 

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা

রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।” 

দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।” 

তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” 

পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোররাতে রণক্ষেত্র: নরসিংদীতে নিহত ১, গুলিবিদ্ধ ৫
  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন