নতুন আপদের নাম ‘মব সন্ত্রাস’, আতঙ্কে সারা দেশ
Published: 4th, July 2025 GMT
‘মব সন্ত্রাস’ জাতীয় জীবনে নতুন আপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মন্তব্য করে একটি সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এখন প্রধান কাজ ‘মব’ বন্ধ করা। এটা বন্ধ করা না গেলে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও মুক্তচিন্তার মানুষের ওপর হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এ কর্মসূচির আয়োজন করে ‘সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন’ ও ‘মুক্তচিন্তা পরিষদ বাংলাদেশ’ নামের দুটি সংগঠন।
সমাবেশ থেকে ভিত্তিহীন মামলায় লালমনিরহাটের পরেশ চন্দ্র শীল ও তাঁর ছেলে বিশু চন্দ্র শীল এবং রাজবাড়ীর আহম্মদ আলীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে বেআইনিভাবে কারাবন্দী ব্যক্তিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া সমাবেশ থেকে কুমিল্লা, ভোলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত এবং দেশব্যাপী লাগাতার সাম্প্রদায়িক হামলা ও মব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। সেই সঙ্গে মৌলবাদের আস্ফালনের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের জন্য দেশ ও জাতির প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্যে ‘সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন’-এর প্রধান উপদেষ্টা মুজিব রহমান বলেন, ‘এখন একটি নতুন আপদের নাম মব সন্ত্রাস। সারা দেশে আজ মব আতঙ্ক। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাব, সরকারের এখন প্রধান কাজ মব বন্ধ করা, মানুষের আইনের অধিকার নিশ্চিত করা, বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা আওয়ামী শাসনামলের চেয়ে বেশি শোষণ করছেন বলে অভিযোগ করেন ‘সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন’-এর উপদেষ্টা মিজান হাকিম। তিনি বলেন, ‘হত্যা, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ এমন কী নেই, যা এ সময়ে হয়নি।’ এসব বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
সংগঠনটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এলিজা রহমান বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ যেভাবে চলছে, এভাবে আমরা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছি, এভাবে চলতে থাকলে আমরা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হব। এভাবে চলতে পারে না, এসব বন্ধ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ‘সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন’-এর সভাপতি শাহাদাৎ হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ফরহাদ ইবনে ইকবাল, সমাজকল্যাণ সম্পাদক মুশফিকুল ইসলাম শিমুল, মুক্তচিন্তা পরিষদ-বাংলাদেশের উপদেষ্টা হারুন-উর রশিদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও শিল্প শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অলক চৌধুরীসহ আরও অনেকে। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মুক্তচিন্তা পরিষদ-বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন সাদী।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৫ জুলাইয়ের পর আর কোনো আলোচনা নয়, আপনি বিদায় নেন
পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে চলমান আন্দোলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদকে উদ্দেশে করে বলেছেন, ‘আপনি সরকারকে ভুল ম্যাসেজ দিচ্ছেন। কারো সঙ্গে আলোচনা না করে যা ইচ্ছা তাই করছেন। ক্রাশার মিল গুড়িয়ে দিচ্ছেন, অন্ধ কল্যাণ সমিতির স্থাপনা ভেঙে দিচ্ছেন। দু’এক নেতাকে বশ করে আপনি যদি মনে করেন, পার পেয়ে যাবেন তা হলে ভুল করবেন। ৫ জুলাইয়ের পর আপনার সঙ্গে আর কোনো আলোচনা নয়। আপনি বিদায় নেন।’
আজ বুধবার দুপুরে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় জেলা প্রশাসককে ‘সিলেট বিদ্বেষী’ বলে অ্যাখ্যা দেন আরিফুল হক।
পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ আজ এ সমাবেশের আয়োজন করে। সংগঠনটি সিলেট জেলা পাথর ও পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে আগামী শনিবার থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সমাবেশে পরিবহন নেতারা জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেন। যখন সমাবেশে জেলা প্রশাসকের যখন অপসারণ দাবি হচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে বিএনপি-জামায়াত নেতাসহ অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করছিলেন তিনি। বৈঠকে সিলেটের পাথর কোয়ারিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন রাজনৈতিক নেতাসহ অংশীজনেরা।
সমাবেশে আরিফুল হক চৌধুরী আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেন, শ্রমিক-মালিকদের দাবিগুলো ন্যায্য ও যৌক্তিক। সরকার যদি দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সিলেটের অর্থনীতি থমকে যাবে।
সম্প্রতি পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে সিলেট জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। গত কয়েক মাস ধরে বিচ্ছিন্নভাবে স্মারক লিপি ও মিছিল মিটিংয়ের পর গত সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেছে সংগঠনটি। গত শনিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টা লোড-আনলোডের কর্মবিরতি ও গত রোববার থেকে সিলেট জেলা সকল পণ্য পরিবহনে ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করা হয়। এ অবস্থায় আগামী শনিবার থেকে নতুন করে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
বুধবার সমাবেশে তারা ৫ দফা দাবি উপস্থাপন করে। দাবিগুলো হচ্ছে- বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারিগুলো খুলে দেওয়া, ক্রাশার মেশিন ধ্বংসের অভিযান বন্ধ করা, পাথর পরিবহনকারী ট্রাক আটকের অবসান, চালকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ, প্রাইভেট কোম্পানিকে গাড়ির ফিটনেস না দেওয়া ও ডাম্পিং আইন স্থগিত রাখা।
সমাবেশে আরিফুল হক ছাড়াও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, পরিবহন শ্রমিক নেতা মইনুল ইসলাম প্রমুখ।
অপর দিকে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মহানগর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজউল হাসান লোদী কয়েস, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, জামায়াতের জেলা আমির হাবিবুর রহমান, মহানগর আমির ফখরুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।
সভায় উপস্থিত থাকা নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সনাতন পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারি চালু, ক্রাশার মিলে অভিযান বন্ধ ও অন্ধ কল্যাণ সমিতির জায়গা থেকে উচ্ছেদ বন্ধের দাবি করেছি। জেলা প্রশাসক পজিটিভ। তিনি পাথর কোয়ারি ইজারা বন্ধের বিষয়টি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। ক্রাশার মিলে যাদের বৈধতা আছে তাদের সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক রয়েছে। উনি (আরিফুল হক) কি জন্য আমাকে নিয়ে এত কথা বলেছেন তা তিনি ভালো বলতে পারবেন। পাথর কোয়ারিসহ বিভিন্ন দাবির ক্ষেত্রে সবার কথা শোনা হচ্ছে। দাবিগুলো ভেবে দেখা হচ্ছে।’