‘প্রতি বছর শুনি বালুর বস্তা ফেলবে কিন্তু ফেলা আর হয় না’
Published: 4th, July 2025 GMT
কুমিল্লার তিতাসে গোমতী নদীর পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক সময় কিছু কিছু ভাঙন দেখা যায়। তবে স্রোত বাড়লেও ভারী বৃষ্টিপাতের সময় বেশি ভাঙন দেখা দেয়। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিন কাটছে ভাঙনকবলিত নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের।
স্থানীয়দের দাবি, গত দুই বছরে কয়েকশ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। বর্ষা এখনও পুরোদমে শুরু না হতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। গোমতীর ভাঙন রোধে প্রয়োজন যথাযথ ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং খনন কার্যক্রম। এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোমতী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুমুর থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লার বিবির বাজার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগর, তিতাস হয়ে দাউদকান্দি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। গোমতী নদী তিতাস উপজেলার মানিকনগর গ্রাম দিয়ে ১৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে লালপুর ও দাউদকান্দি দিয়ে মেঘনায় পতিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রতি বছরই গোমতীর ভাঙন দেখা যায়। ভাঙনে বিলীন হয় বসতভিটা ও ফসলি জমি। বাস্তুচ্যুত হয় বহু মানুষ। এই ভাঙন থেকে নিস্তার চায় এলাকাবাসী। এজন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মানিকনগর ঘোষকান্দি, দাসকান্দি, জগতপুর, আসমানিয়া বাজার, দক্ষিণ নারান্দিয়া এলাকায় গিয়ে নদী ভাঙন দেখা গেছে। এসব এলাকায় বিশেষ করে দক্ষিণ নারান্দিয়ায় নদীর দুই পাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আসমানিয়া বাজারের অনেক দোকান নদীতে বিলীন হয়েছে, অনেক দোকান ও বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব এলাকায় গত কয়েক বছর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
দক্ষিণ নারান্দিয়া গ্রামের আমেনা বেগম বলেন, ‘আমাদের চার কানি বাড়ি ছিল, যা গোমতী নদীর ভাঙনে কয়েক শতকে এসে ঠেকেছে। এটা যদি ভেঙে যায়, তাহলে আমাদের থাকার জায়গা থাকবে না। প্রতি বছর শুনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বালুর বস্তা ফেলবে, কিন্তু বস্তা আর ফেলা হয় না। আমাদের দুঃখ কেউ শোনে না।’
ঘোষকান্দি গ্রামের কাইয়ুম মিয়া জানান, এখন গোমতী যে স্থানে আছে, তাঁর মাঝখানে তাদের বাড়ি ছিল। দাদার বাড়ি ভেঙেছে, বাবার বাড়ি ভেঙেছে, এখন তাদের বাড়িও হুমকিতে। বহু বছর ধরে নদী ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার নদীর তীরে ব্লক ও বালুর বস্তা ফেলে ব্যবস্থা নিলে অন্তত বসতভিটা রক্ষা পেত।
আসমানিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, প্রতি বছর বর্ষা এলেই ভাঙন দেখা দেয়। বাজারের অনেক অংশ ভেঙে গেছে, হুমকির মধ্যে রয়েছে আরও অনেক বাড়ি ও দোকানঘর। কিন্তু ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
নারান্দিয়া ইউপি সদস্য ছবির আহমেদের ভাষ্য, প্রতি বছর বর্ষার সময় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। গত দুই বছরে প্রায় ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ বছরও যে অবস্থা, তাতে আরও অনেক পরিবার গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোনো আশা দেখছি না। এভাবে চললে নারান্দিয়ার দুটি গ্রাম গোমতী নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান জানান, তাদের পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই, জরুরি প্রয়োজনে যা বরাদ্দ পান তা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সে কারণে এখানে কাজ করা সম্ভব হয় না। আলাদা একটি প্রকল্প নিয়ে পূর্ণাঙ্গ বাঁধ নির্মাণ ও নদীর তীরে ব্লক ও বালুর বস্তা ফেলতে হবে। নদীর তীর রক্ষার জন্য আলাদা প্রকল্প দরকার। বিষয়টির কথা বলছেন তারা, আশা করছেন এ ধরনের একটি প্রকল্প এখানে নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ল র বস ত ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
চাকসু নির্বাচন: চার হলের ভিপি-জিএস হলেন যারা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এ গণনার কার্যক্রম শুরু হয়। গণনার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ হচ্ছে সিসি ক্যামেরায়, প্রদর্শন করা হচ্ছে সব কেন্দ্রের এলইডি স্কিনে।
আরো পড়ুন:
প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে রাকসু, রাত পোহালেই ভোট
চাকসুর ফল: এক কেন্দ্রে ভিপি-এজিএসে এগিয়ে ছাত্রদল, জিএসে বাম
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ি, পাঁচটি কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার তথা ডিন কার্যালয়ে ভোট গণনা শেষে সেখান থেকেই আলাদাভাবে হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আর চাকসুর ফল ঘোষণা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ মিলনায়তনে।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বলেছিলেন, “ভোট গণনার পুরো বিষয়টি সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিটি কেন্দ্রের এলইডি স্কিনে প্রদর্শন করা হচ্ছে। কোনো কারণে স্কিন বন্ধ হয়ে গেলে ভোট গণনাও বন্ধ রাখা হবে।”
তিনি বলেন, “ওএমআর পদ্ধতিতে ভেন্ডর মেশিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেল- এই দুই প্রক্রিয়ায় ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। পুরোদমে ভোট গণনার কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব ফলাফল ঘোষণা করা হবে।”
ইতোমধ্যে হল সংসদের ভোটের ফলাফল ঘোষণা শুরু হয়েছে।
মাস্টার দ্য সূর্যসেন হল
চাকসু নির্বাচনে মাস্টার দ্য সূর্যসেন হল সংসদের ফলাফল রাত পৌনে ১টায় ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
ফলাফলে ১৮২ ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি (ভিপি) হয়েছেন তাজিন ইবনে হাবিব, ১৪৪ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) হয়েছেন সাদমান আল-তাছিন এবং ২৯০ ভোট পেয়ে সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) হয়েছেন শাখাওয়াত হোসেন।
হলটিতে মোট ভোটার ছিলেন ৫১৬ জন। হলটির কেন্দ্র ছিল বিজ্ঞান অনুষদে।
সোহরাওয়ার্দী হল
সোহরাওয়ার্দী হল সংসদের ফলাফল রাত ১টার পর ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
ঘোষিত ফলাফলে ভিপি হয়েছেন নেয়ামত উল্লাহ ফারাবি, জিএস হয়েছেন নুরন্নবী সোহান এবং এজিএস হয়েছেন রেসালাতুর রহমান।
এ হলে ছাত্রশিবিরের পুরো প্যানেল বিজয়ী হয়েছে।
এফ রহমান হল
এরপর এফ রহমান হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, ৩৬৯ ভোট পেয়ে ভিপি হয়েছেন শাহরিয়ার সোহাগ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রবিউল পেয়েছেন ৩৪৩ ভোট।
৩৭৯ ভোট পেয়ে জিএস হয়েছেন মো. তামিন চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. জাবের আহমদ পেয়েছেন ৩২ ভোট।
এছাড়া ২৯৮ ভোট পেয়ে এজিএস হয়েছেন সাইদুল ইসলাম। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাইফুর রহমান পেয়েছেন ২৬০ ভোট।
শাহজালাল হল
শাহজালাল হল সংসদের ফলাফল রাত দেড়টার দিকে ঘোষণা করা হয়েছে।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, হলটিতে ভিপি পদে ৯৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আলাউদ্দিন। তার নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী মামুনুর রশিদ পেয়েছেন ৭৩৪ ভোট।
৬৯৭ ভোট পেয়ে জিএস হয়েছেন রায়হান চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াহিদুল ইসলাম পেয়েছেন ৬৭৩ ভোট।
এছাড়া ১১০১ ভোট পেয়ে এজিএস হয়েছেন ইমতিয়াজ জাবের। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুল্লাহ আল নোমান পেয়েছেন ৫৯১ ভোট।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী