কুমিল্লার তিতাসে গোমতী নদীর পানি বাড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক সময় কিছু কিছু ভাঙন দেখা যায়। তবে স্রোত বাড়লেও ভারী বৃষ্টিপাতের সময় বেশি ভাঙন দেখা দেয়। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্য দিন কাটছে ভাঙনকবলিত নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের।
স্থানীয়দের দাবি, গত দুই বছরে কয়েকশ পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। বর্ষা এখনও পুরোদমে শুরু না হতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে। গোমতীর ভাঙন রোধে প্রয়োজন যথাযথ ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং খনন কার্যক্রম। এ অবস্থায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোমতী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ডুমুর থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লার বিবির বাজার দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগর, তিতাস হয়ে দাউদকান্দি উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। গোমতী নদী তিতাস উপজেলার মানিকনগর গ্রাম দিয়ে ১৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে লালপুর ও দাউদকান্দি দিয়ে মেঘনায় পতিত হয়েছে। এসব এলাকায় প্রতি বছরই গোমতীর ভাঙন দেখা যায়। ভাঙনে বিলীন হয় বসতভিটা ও ফসলি জমি। বাস্তুচ্যুত হয় বহু মানুষ। এই ভাঙন থেকে নিস্তার চায় এলাকাবাসী। এজন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মানিকনগর ঘোষকান্দি, দাসকান্দি, জগতপুর, আসমানিয়া বাজার, দক্ষিণ নারান্দিয়া এলাকায় গিয়ে নদী ভাঙন দেখা গেছে। এসব এলাকায় বিশেষ করে দক্ষিণ নারান্দিয়ায় নদীর দুই পাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আসমানিয়া বাজারের অনেক দোকান নদীতে বিলীন হয়েছে, অনেক দোকান ও বসতবাড়ি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব এলাকায় গত কয়েক বছর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
দক্ষিণ নারান্দিয়া গ্রামের আমেনা বেগম বলেন, ‘আমাদের চার কানি বাড়ি ছিল, যা গোমতী নদীর  ভাঙনে কয়েক শতকে এসে ঠেকেছে। এটা যদি ভেঙে যায়, তাহলে আমাদের থাকার জায়গা থাকবে না। প্রতি বছর শুনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বালুর বস্তা ফেলবে, কিন্তু বস্তা আর ফেলা হয় না। আমাদের দুঃখ কেউ শোনে না।’
ঘোষকান্দি গ্রামের কাইয়ুম মিয়া জানান, এখন গোমতী যে স্থানে আছে, তাঁর মাঝখানে তাদের বাড়ি ছিল। দাদার বাড়ি ভেঙেছে, বাবার বাড়ি ভেঙেছে, এখন তাদের বাড়িও হুমকিতে। বহু বছর ধরে নদী ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকার নদীর তীরে ব্লক ও বালুর বস্তা ফেলে ব্যবস্থা নিলে অন্তত বসতভিটা রক্ষা পেত।
আসমানিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শাহ আলম জানান, প্রতি বছর বর্ষা এলেই ভাঙন দেখা দেয়। বাজারের অনেক অংশ ভেঙে গেছে, হুমকির মধ্যে রয়েছে আরও অনেক বাড়ি ও দোকানঘর। কিন্তু ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
নারান্দিয়া ইউপি সদস্য ছবির আহমেদের ভাষ্য, প্রতি বছর বর্ষার সময় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। গত দুই বছরে প্রায় ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। এ বছরও যে অবস্থা, তাতে আরও অনেক পরিবার গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেছি, কিন্তু কোনো আশা দেখছি না। এভাবে চললে নারান্দিয়ার দুটি গ্রাম গোমতী নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।’
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান জানান, তাদের পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই, জরুরি প্রয়োজনে যা বরাদ্দ পান তা দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। সে কারণে এখানে কাজ করা সম্ভব হয় না। আলাদা একটি প্রকল্প নিয়ে পূর্ণাঙ্গ বাঁধ নির্মাণ ও নদীর তীরে ব্লক ও বালুর বস্তা ফেলতে হবে। নদীর তীর রক্ষার জন্য আলাদা প্রকল্প দরকার। বিষয়টির কথা বলছেন তারা, আশা করছেন এ ধরনের একটি প্রকল্প এখানে নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ল র বস ত ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

আইফোন থেকে স্যাটেলাইটে জরুরি বিপদবার্তা পাঠিয়ে জীবন বাঁচালেন এক পর্বতারোহী

বিপদে পড়লে প্রযুক্তি যে জীবন রক্ষা করতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা তার উদাহরণ। সম্প্রতি দুর্গম এক পর্বত থেকে নামার সময় ১০ হাজার ফুট উঁচুতে আহত হন এক পর্বতারোহী। সে সময় ফোনের নেটওয়ার্ক না থাকায় তিনি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এরপর আইফোনের স্যাটেলাইট এসওএস সুবিধা কাজে লাগিয়ে জরুরি বিপদবার্তা পাঠান তিনি। আইফোন থেকে পাঠানো জরুরি বিপদবার্তায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবহারকারীর অবস্থানের তথ্য যুক্ত থাকায় উদ্ধারকারীরা সহজে তাঁকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ফলে প্রাণে বেঁচে যান সেই পর্বতারোহী।

৫৩ বছর বয়সী ওই পর্বতারোহী স্নোমাস পর্বতশৃঙ্গে অভিযান চালাচ্ছিলেন। সফলভাবে শৃঙ্গে পৌঁছানোর পর তিনি নিচে নামার জন্য ‘গ্লাইডিং’ নামের একধরনের কৌশল অবলম্বন করেন। এ পদ্ধতিতে সাধারণত পর্বতারোহীরা নিয়ন্ত্রিতভাবে ও দ্রুত নিচে নামেন। কিন্তু নামার সময় একটি দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। গুরুতর আঘাতের কারণে তিনি আর চলাফেরা করতে পারছিলেন না। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন দেখা যায়, ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। এমন এক পরিস্থিতিতে আইফোনের স্যাটেলাইট এসওএস সুবিধার মাধ্যমে তিনি স্যাটেলাইট সংযোগ ব্যবহার করে পরিবারের একজন সদস্যকে বার্তা পাঠান। বার্তা পাওয়ার পরপরই দ্রুত উদ্ধারকারী দল সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী শহরে নিয়ে আসে।

অ্যাপল ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন ১৪ সিরিজের মাধ্যমে স্যাটেলাইট এসওএস সুবিধা চালু করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চল বা নেটওয়ার্কবিহীন স্থান থেকেও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে জরুরি বার্তা পাঠানো সম্ভব। গ্লোবাল স্টার নামের একটি স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান এই সেবা পরিচালনা করে থাকে।

সূত্র: নিউজ১৮

সম্পর্কিত নিবন্ধ