Prothomalo:
2025-07-05@07:03:00 GMT

আর কতদিন আইনহীনতায় বসবাস

Published: 5th, July 2025 GMT

গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত আইনের শাসন। গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে?  

আমরা যেদিকে তাকাই, আইনের শাসনের বদলে জবরদস্তির শাসন দেখি। ‘মব ভায়োলেন্স’ প্রত্যক্ষ করি। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অসহায়। আবার তাদের কেউ কেউ অতীতের মতো চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হচ্ছে।

২৮ জুন কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠে। কয়েকজন ব্যক্তি সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। মানুষ কতটা নীচ হতে পারলে এ কাজ করে! একই দিন ভোলার তজুমদ্দিনে আরেক নারী সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হওয়া স্বামীকে উদ্ধার করতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। কুমিল্লার ঘটনায় রাজনীতির যোগ না থাকলেও ভোলার ঘটনার সঙ্গে শ্রমিক দল ও যুবদলের নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.

ফরিদ উদ্দিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মুরাদনগরে নারী ধর্ষণের রেশ না কাটতেই সেখানে একই পরিবারের তিন সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেন স্থানীয় লোকজন। ওই পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে এলাকাবাসীকে মাইকে উসকে দিয়ে বৃহস্পতিবার তাঁদের খুন করা হয়। মাদকব্যবসা করা অপরাধ। তাই বলে কেউ মাদকব্যবসা করলে তাকে পিটিয়ে মারা যায়? দেশে আইন কোথায়, থানা–পুলিশ আছে কেন?

সোমবার রাতে খোদ ঢাকায় বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক মনির হোসেনের নেতৃত্বে মহাখালীর জাকারিয়া হোটেলে দল বেঁধে ঢুকে দুই নারীর ওপর হামলা করেন একদল লোক। বনানী থানায় করা মামলায় বলা হয়, মনির নামের এক ব্যক্তি এসে ভিআইপি কেবিন চান; কিন্তু কেবিনটি তখন অন্য অতিথির জন্য বরাদ্দ থাকায় তাঁকে সেটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরের দিন ১ জুলাই রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে মনির ২০-২৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢোকেন। তাঁরা ঢুকেই গ্লাস ছুড়ে ভাঙচুর শুরু করেন। এই হলো যু্বদল নেতার কাণ্ড।

একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য ছিনতাই–চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আইন যথাযথ প্রয়োগ করতে গিয়ে মব ভায়োলেন্সর শিকার হচ্ছেন। রাজনৈতিক দলের নেতাদের কেউ কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হচ্ছেন। আবার কেউ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে থানা থেকে দণ্ডিত আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছেন। এটা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থার লক্ষণ নয়।

সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যেমন বিএনপির নেতা–কর্মীদের নাম আসছে, তেমনি অঘটনের শিকারও হচ্ছেন তাঁরা। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে দুর্বৃত্তদের হামলায় মো. মিন্টু নামের এক বিএনপি নেতা খুন হন। তিনি ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ৩ নম্বর ইউনিটের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে মারামারিতে লিপ্ত হয় এলাকার কিশোরদের দুটি পক্ষ। তাদের থামাতে গিয়ে খুন হন সাবেক যুবদল নেতা মুহাম্মদ আলমগীর। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি গ্রামে আসতে পারেননি। গত বছর ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর  গ্রামে আসেন। ১১ মাসের মাথায় তাঁকে জীবন দিতে হলো কিশোর গ্যাংয়ের হাতে।

আরেকটি চাঞ্চল্যকর খবর হলো থানা–হাজত থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া।  চাঁদা আদায়ের অভিযোগে ইজারাদারের দুই কর্মচারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ২০০ থেকে ২৫০ জনের একটি দল থানায় ঢুকে ভাঙচুর করে সাজাপ্রাপ্ত ওই দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে থানার সামনে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

আরও পড়ুন‘মব ভায়োলেন্স প্রশ্রয় দেওয়া হবে না’, কিন্তু প্রশ্রয় দিচ্ছে কে৩০ জুন ২০২৫

রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় এক নারীকে মারধরের অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী মামলায় অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকির হোসেন তাঁকে মারধর করেছেন। পরে ভুক্তভোগী নারী মামলা করার জন্য শনিবার রাত ১০টার পর শাহ আলী থানায় আসেন।

সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইন রক্ষার নসিয়ত করা হয়। কিন্তু সেই আইন রক্ষা করতে গিয়ে  চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে শাস্তি ভোগ করতে হলো। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের দীপঙ্কর দে নামের এক কর্মীকে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা পটিয়া থানায় নিয়ে যান। তাঁর নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। কিন্তু একে কেন্দ্র করে পটিয়ায় পুলিশ ও আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের মধ্যে যে ঘটনা ঘটল তা অনাকাঙ্খিতই বলতে হবে।

মানুষ অপরাধের শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যান; কিন্তু সেই বাহিনী কী করছে, সেটিও দেখা দরকার। রাজধানীর মতিঝিলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৩০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে মতিঝিল থানা-পুলিশ। এ সময় ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হাইয়েস মাইক্রোবাস ও ৮৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

২৬ জুন দুপুরে ওয়ারীর নবাবপুর এলাকার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে মো. খলিল মিয়া ও ইব্রাহীম হোসেন রিফাত নামের দুই কর্মচারী ৩০ লাখ টাকা নিয়ে মতিঝিলের সিটি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। বেলা পৌনে একটার দিকে মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেলের সামনে পৌঁছালে ছয়–সাত ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁদের একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে তুলে নেন। পরে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে তাঁদের কাছে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেন।

বগুড়ায় আটকের ভয় দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানোর সময় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এক সদস্যসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এপিবিএনের সদস্য আল হাদীর গ্রামের বাড়ি সোনাতলা উপজেলার চারালকান্দি গ্রামে। পাশের কাতলাহার গ্রামের শফিকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিবারের বিরোধ আছে। গ্রেপ্তার ছয়জন এপিবিএনের একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে কাতলাহার গ্রামে গিয়ে পুলিশ পরিচয়ে অনলাইন জুয়া খেলার অভিযোগে শফিকুরের ছেলে ওয়ালিদকে আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় শফিকুর রহমান ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেন। পরে শফিকুর রহমান জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে পুলিশ পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানালে গাবতলী ও সদর থানা-পুলিশ পিকআপটি আটকে অভিযানে নামে।

একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য ছিনতাই–চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আইন যথাযথ প্রয়োগ করতে গিয়ে মব ভায়োলেন্সর শিকার হচ্ছেন। রাজনৈতিক দলের নেতাদের কেউ কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হচ্ছেন। আবার কেউ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে থানা থেকে দণ্ডিত আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছেন। এটা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থার লক্ষণ নয়।

মুরাদনগরে নারী ধর্ষণ ও নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘এই দেশে কি আমি নিরাপদ। উত্তরটা সহজ নয়। এখানে বেঁচে থাকার জন্য আমরা জী (সব কিছু মেনে নেওয়া) করি। আমরা সহ্য করি, মানিয়ে নিই।’

এ মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কেবল ব্যক্তির নয়, পুরো সমাজের। সমাজের সীমাহীন নীরবতা ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের কারও কারও আইন হাতে তুলে নেওয়ায়ই দেশে নিরাপত্তাহীন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী।

সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক ও কবি
*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মব ভ য় ল ন স রক ষ ক র মত ঝ ল ছ নত ই র ঘটন ব এনপ ঘটন র র একট ব যবস সদস য আইন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জনসাধারণের সমস্যা নিয়ে সরকার কতটা চিন্তিত

গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের পর যখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের আশা ছিল, দেশে স্থিতিশীলতা ও স্বস্তি ফিরে আসবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক পরিচিতি, অরাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল সহজ-সরল ও বাস্তবঘনিষ্ঠ: হয়তো জীবন কিছুটা সহজ হবে। বাস্তবে সে প্রত্যাশার ফল মিলছে না।

দেশের জনসাধারণের প্রতিদিনের বাস্তবতা– খাবার জোগাড়, বাসা ভাড়া, সন্তানের পড়ালেখা, অসুখ হলে চিকিৎসা, মাস শেষে ধার না করে চলার চেষ্টা। এসবই তাদের জীবনের মুখ্য বিষয়; শহর-পল্লি নির্বিশেষে। কোথাও হয়তো বাসা ভাড়ার প্রশ্নটি নেই; আছে অন্যান্য খরচের বিষয়। লেখাপড়ার কারণে বাড়ি থেকে দূরে থাকা সন্তানের হোস্টেল বা মেস ভাড়া দেওয়ার চিন্তা।

এমন বাস্তবতায় আম জনতা রাজনীতিতে সরাসরি আগ্রহ না দেখালেও রাজনীতির যে কোনো পট পরিবর্তন তাদের জীবনে প্রবল প্রভাব ফেলে। গত এক বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আয় না বাড়া, খরচের চাপ মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন আরও সংকটময় হয়ে উঠেছে। টিসিবির পণ্যের লাইনে ভিড় বেড়েছে, অথচ স্বস্তির আশা কমেছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত তিনটি লক্ষ্য– সংস্কার, বিচার এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলোরও দাবি। সাধারণ মানুষও এগুলোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। কিন্তু এসব উদ্যোগ তাদের জীবনের বাস্তব সংকট দূর করার সঙ্গে কতটা যুক্ত– তা নিয়ে এখন সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পার হয়েছে, কিন্তু স্বস্তির দেখা মেলা ভার।

দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ও মূল্য ক্রেতার নাগালে নিয়ে আসা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন– এসব বিষয়ে জনগণ যে ধরনের অগ্রগতি দেখতে চেয়েছিল, তা হচ্ছে না। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের বড় তিনটি কাজের ঘোষণা সাধারণ মানুষের কাছে ‘বিমূর্ত ছবি’ হয়ে উঠছে। আম জনতার প্রাথমিক চাওয়া– নিরাপদ জীবন, শান্তিতে ঘুমানো, সঞ্চয়ের সামান্য সুযোগ, আত্মমর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকা। এই মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণেও যদি সরকার ব্যর্থ হয়, তাহলে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন কেবল রাজনৈতিক শব্দ হয়েই থাকবে।

১২ মাসের মাথায় দাঁড়িয়ে স্পষ্টভাবে বলা যায়– অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় ঘাটতি হলো স্বচ্ছতা ও নিয়মিত জনসংযোগের অভাব। শুরু থেকেই যদি সরকারের পক্ষে প্রতি সপ্তাহে কিংবা অন্তত ১৫ দিন অন্তর জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়া হতো; তাদের কাজের অগ্রগতি, উদ্দেশ্য এবং সাধারণ মানুষের জীবনে সরকারের কাজের প্রভাব ব্যাখ্যা করা হতো; তাহলে অনিশ্চয়তা, গুজব ও ভুল ব্যাখ্যার জায়গা তৈরি হতো না।

পাশাপাশি আরেকটি সংকট জনমানসে জায়গা করে নিচ্ছে। সরকার যেন কেবল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবি পূরণেই বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছে। এতে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বিশেষত বেসরকারি খাত, খেটে খাওয়া, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ নিজেদের বঞ্চিত মনে করছে। এ বঞ্চনা থেকে তৈরি হচ্ছে গভীর বিচ্ছিন্নতাবোধ, যা দীর্ঘস্থায়ী হলে সরকারের জন্য আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

এই প্রেক্ষাপটে এখন সবচেয়ে জরুরি সরকারের এমন একটি রোডম্যাপ, যা জনগণের মৌলিক চাহিদার প্রতিফলন ঘটায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থানমুখী আর্থিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখানো না গেলে সংস্কার-বিচার-নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অর্থহীন হয়ে যাবে। এমনিতেই এই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশের অন্যতম বৃহত্তম আবাসন খাত স্থবির হয়ে পড়ায় সংশ্লিষ্ট শিল্পকারখানা ও নির্মাণ প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ লক্ষাধিক মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। টাকার হাতবদল কমে যাওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে কর্মসংস্থানের অন্যান্য খাত। এ নিয়ে সরকারের দিক থেকে কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।  

অন্তর্বর্তী সরকারকে এখন যা করতে হবে: জনগণের বাস্তব সমস্যার সঙ্গে সরকারের পরিকল্পনাকে যুক্ত করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দৃঢ় পদক্ষেপ এবং মানুষের অর্থনৈতিক কষ্ট লাঘবে কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রকৃত সাফল্য বিচার হবে এই প্রশ্নে– সাধারণ মানুষের কতটা পাশে দাঁড়িয়েছে; তাদের কতটা শোনার চেষ্টা করেছে এবং তাদের কতটা মর্যাদা দিয়েছে।

জনগণ বড় বড় প্রতিশ্রুতি চায় না। তারা চায় দেশের সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন আয়োজনের আড়ালে যেন তাদের বেঁচে থাকার মতো জীবন বিনষ্ট বা বিপর্যস্ত না হয়। তারা চায় যেন বেঁচে থাকার মতো পরিবেশ বহাল থাকে। যেখানে খাদ্যের নিশ্চয়তা থাকবে, শোনার মতো সরকার থাকবে এবং সম্মান নিয়ে বাঁচার সুযোগ থাকবে। যদি সরকার সেই মৌলিক মানবিক শর্তগুলোও পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হতে পারে। কারণ জনগণ যদি পাশে না থাকে, তাহলে কোনো সরকারই টিকতে পারে না। সেটা অন্তর্বর্তী হোক বা নির্বাচিত।

মোহাম্মদ গোলাম নবী: কলাম লেখক; প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইট টার্ন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তসহ ৭০০ বন্দী এখনো পলাতক, উদ্ধার হয়নি ২০ আগ্নেয়াস্ত্র
  • এ. কে. আজাদের বাড়িতে মিছিল নিয়ে চড়াও হওয়ার ঘটনায় গণসংহতি আন্দোলনের ক্ষোভ
  • এ. কে. আজাদের বাড়িতে চড়াও হওয়ার ঘটনায় গণসংহতি আন্দোলনের ক্ষোভ
  • ‌‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা অন্তর্বর্তী সরকারের বিশাল ব্যর্থতা: গণসংহতি আন্দোলন
  • আইনশৃঙ্খলার অবনতি স্পষ্ট
  • অব্যাহত ‘মব সন্ত্রাস’ করে বিচার-সংস্কার ও নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস চলছে: বাম গণতান্ত্রিক জোট
  • ঢাকাসহ সারা দেশে গত এক সপ্তাহে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ৩৮০
  • জনসাধারণের সমস্যা নিয়ে সরকার কতটা চিন্তিত