তরুণ ব্যবসায়ী আসিফ তাঁর স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে রাজধানীর ডেমরার মুসলিমনগরে নিজেদের ছয়তলা বাড়ির তৃতীয় তলায় বসবাস করেন। ঈদুল আজহার দুই দিন পর (৯ জুন) আসিফ তাঁর স্ত্রী, বাবা-মাকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে যান। এক দিন শ্বশুরবাড়িতে থেকে ১০ জুন রাত আটটায় মা খালেদা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে আসিফ ডেমরার নিজের বাসায়। আসিফ দেখতে পান শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগে দরজার তালা যেমন লাগিয়ে গিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই রয়েছে। কিন্তু ঘরে ঢুকে তাঁরা দেখতে পান, ড্রয়িং রুমের মেঝেতে এলোমেলোভাবে জামাকাপড় পড়ে আছে।

আসিফের মা দেখতে পান, তাঁর কক্ষের আলমারি ভাঙা। তখন আলমারির বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালংকার খুঁজতে থাকেন তিনি। কোথাও স্বর্ণালংকারের ব্যাগ খুঁজে না পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেন। আসিফ তখন মাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। পরে আসিফ নিজের শয়নকক্ষে গিয়ে দেখতে পান, বাসার কাপড়চোপড় এলোমেলোভাবে পড়ে আছে। আলমারির দরজার তালা ভাঙা। তখন আলমারিতে রাখা স্ত্রীর স্বর্ণালংকারের ব্যাগ দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আসিফ তখন বাসার অন্য আরেকটি আলমারির দিকে খেয়াল করেন। দেখতে পান সেই আলমারির তালাও ভাঙা। আলমারির বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালংকারের সেই ব্যাগও সেখানে নেই। স্ত্রী, মা, নানি, মামির সব স্বর্ণালংকার চুরি হওয়ায় আসিফ তখন আরও হতাশ হয়ে পড়েন।

একপর্যায়ে আসিফ বাসার তৃতীয় তলার আরেকটি শয়নকক্ষের জানালার একটি গ্রিল কাটা অবস্থায় দেখতে পান। আসিফের মা সেখানে এসে তাঁকে বলেন, ‘আসিফ, আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেছে…।’

আসিফ তখন মুন্সিগঞ্জে অবস্থান করা তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে বাসায় চোর ঢোকার তথ্য জানান। আসিফের ফোন পেয়ে তাঁর স্ত্রী ওই রাতেই মুন্সিগঞ্জ থেকে ডেমরার বাসায় চলে আসেন। আলমারিতে বিশেষ জায়গায় লুকিয়ে রাখা স্বর্ণালংকারের ব্যাগটি দেখতে না পেয়ে কাঁদতে থাকেন তিনি। আসিফের স্ত্রীর কান্না দেখে তাঁর মা খালেদাও তখন আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। পুত্রবধূকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন তিনি।

এ বিষয়ে আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈদের সময় আমার শ্বশুরবাড়ি যাওয়াটাই কাল হয়েছে। আমার ভাবনাতেই ছিল না, আমরা বাসায় না থাকলে বাসার গ্রিল কেটে চোর ঢুকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর ২৮ ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছে। আর মায়ের ২১ ভরি। আমার নানির সাড়ে চার ভরি আর মামির সাড়ে ছয় ভরি স্বর্ণ চুরি হয়েছে। মোট আমাদের বাসা থেকে এক কোটি টাকা (৬০ ভরি স্বর্ণ) মূল্যের স্বর্ণালংকার চুরি হয়েছে।’

আসিফদের শয়নকক্ষের যে জানালার গ্রিল কাটা, সেখানে আর কোনো ভবন নেই। বেশ দূরে রয়েছে একটা ভবন। আসিফ বলেন, ‘আমাদের বাসার প্রবেশপথে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) রয়েছে। কিন্তু সেটি যে নষ্ট ছিল, সেটা আমাদের জানা ছিল না। আর বাসার পেছনে থাকা তৃতীয় তলার শয়নকক্ষের জানালার গ্রিল কেটে চোর ঢুকেছে। ওই পাশে কোনো সিসি ক্যামেরা নেই।’

চোর শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ

ঘরে চুরি হওয়ার তিন দিনের মাথায় গত ১৩ জুন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে ডেমরা থানায় মামলা করেন আসিফ। এরপর এক মাস হতে চললেও কোটি টাকার স্বর্ণ চুরির সঙ্গে জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এতে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন আসিফ।

আক্ষেপ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চুরির এত দিন পার হয়ে গেল, পুলিশ কাউকে ধরতে পারল না। চুরি যাওয়া স্বর্ণালংকার উদ্ধার না হওয়ায় আমার স্ত্রী ও মায়ের মন অনেক খারাপ। প্রায় সময় মা আমার কান্নাকাটি করেন। স্ত্রীর মনেও অনেক ক্ষোভ জন্মেছে, কেন পুলিশ চোর ধরতে পারছে না?’

আসিফ জানান, ১০ জুন রাতে বাসায় ঢুকে যখন তাঁরা বুঝতে পারেন স্বর্ণালংকার চুরি হয়ে গেছে, তখন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করেন। ডেমরা থানা থেকে পুলিশ সদস্যরা আসেন রাত ১০টার পর। তিনতলার যে কক্ষের জানালার গ্রিল কাটা হয়েছে, সেটির ছবি তোলেন তাঁরা। পরে চুরি যাওয়া ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার আর নগদ ৫ লাখ টাকা চুরি হওয়ার তথ্য লিখে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।

এ মামলা তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মাহমুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাসা থেকে ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। বাসার কাছের একটি সিসিটিভির ফুটেজ জোগাড় করে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তাতে একজন যুবকের উপস্থিতি দেখা গেছে। তাঁকে শনাক্ত করা এবং চোর খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র চ র স বর ণ ল ক র র শয়নকক ষ র স বর ণ আলম র র আস ফ র আম দ র আস ফ ত

এছাড়াও পড়ুন:

হোয়াইট হাউসে ‘ভূত’ দেখার দাবির কতটা সত্য

হোয়াইট হাউস—যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি আবাস। রাজধানী ওয়াশিংটনের ঐতিহাসিক এ ভবনে প্রেসিডেন্ট কেবল তাঁর পরিবার নিয়েই থাকেন না; বরং প্রেসিডেন্টের সরকারি দপ্তরও এটি। হোয়াইট হাউসের দোতলায় একটি বিশেষ শয়নকক্ষ (বেডরুম) রয়েছে। নাম ‘লিংকন বেডরুম’। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের নামে এ কক্ষের নাম।

এ শয়নকক্ষটি বিশেষ কেন, সেটা জানার আগে আসুন, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন সম্পর্কে কিছু দরকারি তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

আব্রাহাম লিংকন যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম প্রেসিডেন্ট। তাঁর জন্ম কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যে, ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। তাঁর বাবা–মা ভার্জিনিয়ায় জন্মেছিলেন। লিংকনের বয়স যখন আট বছর, তখন তাঁরা সপরিবার ইন্ডিয়ানায় পাড়ি জমান। ১০ বছর বয়সে মাকে হারান লিংকন। পরে লিংকন ইলিনয় অঙ্গরাজ্যে চলে যান।

একসময় খামারে কাজ করতেন লিংকন। যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ইলিনয়ের আইনসভায় আট বছর কাজ করেছেন। আইন পেশায় যুক্ত ছিলেন। পরে রিপাবলিকান দলের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ইলিনয় থেকেই প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

আব্রাহাম লিংকন নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হন ১৮৬১ সালের ৪ মার্চ। সাফল্যের সঙ্গে প্রথম দফা কাটান তিনি। মার্কিন সমাজ থেকে দাসপ্রথার চূড়ান্ত বিলোপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল প্রেসিডেন্ট লিংকনের। নিজ দল রিপাবলিকান দলকে জাতীয় পর্যায়ে শক্ত ভিত্তি গড়ে দিতেও ভূমিকা ছিল তাঁর।

১৮৬৪ সালের নির্বাচনে আবারও জয় পান লিংকন। দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে যান তিনি। সঙ্গী হন ফার্স্ট লেডি ম্যারি অ্যান টড লিংকন। কিন্তু এবার আর বেশি দিন হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা থাকতে পারেননি আব্রাহাম ও মেরি লিংকন।

১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল। দিনটা ছিল শুক্রবার। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম কালো একটি দিন হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে দিনটি। ওই দিন ওয়াশিংটনের ফোর্ড থিয়েটারে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট লিংকন। সেখানে আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।

এর পর থেকে বছরের পর বছর ধরে হোয়াইট হাউসে বসবাস করা ও কর্মরত অনেকেই বলেছেন, তাঁরা সাদা এ বাড়িতে ভূতের দেখা পেয়েছেন। ভুতুড়ে ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত যাঁর নাম, তিনি প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ‘ভূত’!

হোয়াইট হাউসে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন জেরি স্মিথ। তিনিই প্রথমবারের মতো আব্রাহাম লিংকনের ‘ভূত দেখার’ কথা প্রকাশ্যে জানান। ১৯০৩ সালের এ ঘটনা পত্রপত্রিকায় শোরগোল ফেলেছিল। ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

আরও পড়ুনঘরে বসে হোয়াইট হাউস ঘুরে দেখার সুযোগ২৮ অক্টোবর ২০২৩যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হোয়াইট হাউসে ‘ভূত’ দেখার দাবির কতটা সত্য