রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, আসলে এটা সরকার আরও দায়িত্বশীল এবং মানবিক আচরণ করতে পারত। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, সরকার দায়িত্বশীল আচরণ এবং সঠিক সময় সঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারায় পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আজ সারা দিনে অনেক ধরনের ঘটনা, আপনারা সচিবালয়ের ঘটনা দেখেছেন।’

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ব্যক্তিদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘প্রথমত, মাইলস্টোন কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যে ছয় দফা দাবি, সেই ছয় দফা দাবির সঙ্গে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি সংহতি প্রকাশ করছি। তারা খুবই যৌক্তিক কিছু দাবি উপস্থাপন করেছে এবং এই দাবিগুলো আসলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারের বাস্তবায়ন করা উচিত।’

এ ঘটনায় কিছু কিছু উপদেষ্টা দায়িত্বহীন আচরণ করছেন বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু কিছু উপদেষ্টার খুবই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ দেখেছি। বিশেষত শিক্ষা উপদেষ্টার। গতকাল রাত তিনটা থেকে চারটার সময় আমাদের জানতে হচ্ছে যে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করতে হবে এবং অন্য উপদেষ্টারা তাঁকে ফোন দিয়ে পাচ্ছেন না। তাহলে একটা সরকারের যদি এ ধরনের অবস্থা হয়, নিজেদের উপদেষ্টাদের মধ্যে সমন্বয় নেই এবং এ দেশের একটা ইমারজেন্সি সিচুয়েশন (জরুরি পরিস্থিতি), যেখানে পুরো ছাত্রসমাজ ট্রমাটাইজড (মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত)। এই পুরো ঘটনা নিয়ে সেখানে একটা সিদ্ধান্ত নিতে রাত তিনটা–চারটা বাজচ্ছে। এটা নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা যদি দায়িত্বশীল আচরণ করতেন, তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতো না।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা গতকাল রাত থেকে দেখছি যে লাশ গুম করার একধরনের প্রচারণা। সেই জায়গায় সরকারের থেকে আসলে সঠিক বক্তব্য আসা উচিত ছিল। আসলে ঘটনা কী এবং এ ধরনের কোনো ঘটনা যাতে ঘটার সুযোগ না থাকে। সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আসলে ওই স্কুলে ওই সময়ে শিক্ষার্থী, স্টাফ, শিক্ষকসহ কতজন ছিলেন, সেটা প্রকাশ করা উচিত। কতজন হতাহত আছেন এটা এবং রেগুলার আপডেট করা উচিত সরকারের পক্ষ থেকে, যাতে এ ধরনের কোনো গুজব না হয় এবং এ ধরনের লাশ গুম করার কোনো ঘটনা আসলেই যদি না ঘটে থাকে, সরকারকে সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে হবে এবং এটা প্রচার করতে হবে ব্যাপকভাবে। সেটার জন্য নিহত ও আহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা নিরীক্ষণ করতে হবে।’

পুরো ঘটনার একটা নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত বলে উল্লেখ করেন নাহিদ। তিনি বলেন, কেন আসলে এ ধরনের বিমান দুর্ঘটনা ঘটল। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তদন্ত কমিটি করা উচিত এবং সেই জায়গায় সরকারের বাইরের বিশেষজ্ঞদের থাকা উচিত, স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি থাকা উচিত। নাহিদ ইসলাম বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সে জন্য দীর্ঘ মেয়াদে রেসকিউ টিমসহ (উদ্ধারকারী দল) মেডিকেল টিম তৈরি করাসহ এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

সর্বোপরি, শিক্ষার্থীসমাজ ও জনগণ—সবাইকে ধৈর্য ধরার ও শান্ত হওয়ার আহ্বান জানান নাহিদ ইসলাম। সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন যাতে ভুক্তভোগী পরিবার ও ছাত্রদের পাশে থাকে এবং সরকারের পদক্ষেপগুলোর পাশে দাঁড়ায় ও সহযোগিতা করে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে যাতে কেউ সুযোগ–সুবিধা নিতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। আরও কথা বলেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম ব পর স থ ত এ ধরন র উপদ ষ ট সরক র র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের