‘লুকোচুরি শেষ হলো, আয় রে আয় খোকা/ খুঁজে তোকে ঘুরে ঘুরে, ক্লান্ত এবার তোর মা’—উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় অকালে হারিয়ে যাওয়া সন্তানের জন্য মায়ের আকুতি গানে তুলে এনেছেন তরুণ সংগীতশিল্পী মল্লিক ঐশ্বর্য। গানটিতে উঠে এসেছে সন্তানহারা মায়ের হাহাকার আর কষ্ট। ‘আয় রে আয় খোকা’ শিরোনামের গানটি বলিউডের রং দে বাসন্তী সিনেমার ‘লুকাছুপ্পি’ গানের ভাবানুবাদ। যার মূল সুরকার এ আর রাহমান। হিন্দি গানটির লেখক প্রসূন যোশী ও নাসিম। সেই লেখাটিকেই ভাবানুবাদ করেছেন মল্লিক ঐশ্বর্য। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন তরুণ সংগীতশিল্পী ইন্নিমা রশ্মি। গানটির শব্দ প্রকৌশলে ছিলেন শুভ। ফেসবুকে প্রকাশের ২১ ঘণ্টায় গানটির ভিউ ছাড়িয়েছে ১১ লাখ, আর শেয়ার হয়েছে ৭ হাজার।

আরও পড়ুন‘জুলাই বিপ্লবে আমার পুরোনো একটা গানকে সবাই আপন করে নিয়েছে’২৫ মার্চ ২০২৫

গানটি নিয়ে মল্লিক ঐশ্বর্য বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার পর শুধু আমি কেন, দেশের কোনো মানুষই স্বাভাবিক থাকতে পারেনি। পরদিন গানটিকে এভাবে লেখার বিষয়টা মাথায় আসে। “লুকাছুপ্পি”র আক্ষরিক অর্থ লুকোচুরি, তবে আমার দেওয়া নাম “আয় রে আয় খোকা”। এক দিনেই লেখা, পরিকল্পনা ও রেকর্ড। প্রতিভাবান তরুণ সংগীতশিল্পী ইন্নিমা রশ্মিকে পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে গানটি তুলে আমাকে পাঠায় ও। গানটিতে বাচ্চাদের অংশগ্রহণ চেয়েছিলাম। আমার গানের স্কুল জাদুর কাঠির বাচ্চারা গানটিতে অংশ নিয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই গানটি সাড়া ফেলেছে। তবে মল্লিকের কথা, জনপ্রিয়তা পেতে নয়, গানটির মাধ্যমে মানুষের ভেতরের হাহাকার তুলে ধরতে চেয়েছেন। মল্লিক বলেন, ‘গানটি সবার হৃদয় ছুঁতে পেরেছে, এটাই প্রাপ্তি। মাইলস্টোনের দুর্ঘটনায় নিহত সবার আত্মা শান্তি পাক।’

গানটিতে রশ্মির গায়কি শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছে। এ তরুণ সংগীতশিল্পীও মনে করছেন, এ গান একজন শিল্পীর দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। রশ্মি বলেন, ‘মল্লিক দাদা গানের কথাগুলো পাঠানোর পর সারা রাত কেঁদেছি। মন এতটা ভার হয়েছিল, গান কি রেকর্ড করব, একেকটা লাইন পড়ার পর চোখ ভিজেছে। এরপর গানটি রেকর্ড ও ভিডিও করে দাদাকে পাঠাই। প্রকাশের পর থেকেই অনেকেই কল দিচ্ছেন, তাঁদের ভেতরের কষ্ট ও যন্ত্রণা শেয়ার করছেন। এ গানের মাধ্যমে এ ঘটনায় একজন শিল্পীর দায় পূরণ করার চেষ্টা করেছি।’

ফেসবুকে গানটি প্রকাশের পর অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, নাজনীন হাসান চুমকি, সংগীতশিল্পী পান্থ কানাইসহ শোবিজের অনেকেই মন্তব্য করেছেন। একেকটা মন্তব্য যেন একেকটা শোকবার্তা। চঞ্চল চৌধুরী ও পান্থ কানাই কান্নার ইমোজি দিয়েছেন, আর নাজনীন চুমকি লিখেছেন, ‘ওরে কলিজার সন্তানেরা।’ অভিনেত্রী পারভীন পারু লিখেছেন, ‘উফফফ, বুকের ভেতর বাতাস বন্ধ হয়ে যায়, চোখের পানি শুকায় না, আহ সন্তান আগুনে পোড়া ছোট পাখিগুলো! ওরা তো পাপ করার বয়সেও পৌঁছাতে পারেনি।’ সংগীতশিল্পী অন্তু দাস লিখেছেন, ‘ফুলগুলো ছিল আমাদের।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ নট ত গ নট র প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’

পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির