Prothomalo:
2025-11-02@17:21:36 GMT

এই শহরটা শুধু মানুষের নয় 

Published: 25th, July 2025 GMT

পথের পাশের কুকুর-বিড়ালের প্রতি রাজধানীর মানুষের নিষ্ঠুরতার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়। পা ভেঙে দেওয়া, গরম পানি দিয়ে শরীর পুড়িয়ে দেওয়া; এমনকি মানুষের মার খেতে খেতে কুকুর-বিড়ালের প্রাণ হারানোর ঘটনা এই শহরেই ঘটেছে প্রকাশ্যে। অবশ্য এর মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে।

গত শনিবার দুপুরে মিরপুর-১০ নম্বর সংযোগ সড়কের পাশে দেখা যায়, একটি অসুস্থ কুকুরকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছেন তাওহিদুর রহমান বৃত্ত ও সিয়াম চৌধুরী নামের দুই তরুণ। একজন অসুস্থ কুকুরটিকে কোলে তুলে নিয়ে স্যালাইন পুশ করছেন। আরেকজন একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় ধরে রেখেছেন স্যালাইনের ব্যাগটি। রোদ ও গরম উপেক্ষা করে কষ্টসাধ্য কাজটি দুই তরুণ মিলে করছিলেন পরম মমতায়।

কথা হয় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির শিক্ষার্থী তাওহিদুর রহমান বৃত্তর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কুকুরটি নিউরো সমস্যায় ভুগছে। মুখের ভেতরেও জখম রয়েছে। পশুর চিকিৎসক আবদুর রহমানের পরামর্শমতো আমরা দুজন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কুকুরটিকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি, এই শহরটা শুধু মানুষের নয়। কুকুর, বিড়াল, ফুল, পাখি-প্রজাপতি যদি এই শহর থেকে বিলুপ্ত হয়, তাহলে মানুষ কখনো ভালো থাকতে পারবে না।’

রাকিবুল ও সিয়ামের মতো অসংখ্য পশুপ্রেমী তরুণ-তরুণী সারা শহরেই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছেন। এঁদের কেউ পথের এই পশুদের নিয়মিত খাওয়ানোর দায়িত্ব নেন, কেউবা অসুস্থ কুকুর-বিড়ালকে সুস্থ করে পরিবারের সদস্য করে নেন।

দেশে করোনা মহামারি চলার সময় দোকানপাট, রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। ঢাকার অলিগলির কুকুর–বিড়ালের খাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছিলেন চিকিৎসক রাফিয়া আলম। তিনি বলেন, ‘আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটে। প্রাণ-প্রকৃতির কাছাকাছি থাকায় পশুপাখির প্রতি সহজাত মমতা শৈশব থেকে আমার মধ্যে কাজ করেছে। করোনার সময় কুকুর-বিড়ালের খাদ্যসংকট, তাদের নিদারুণ কষ্ট আমাকে স্পর্শ করে। সেই সময় বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতায় আমি কুকুর-বিড়ালদের নিয়মিত খাবার দিয়েছি। এখন চাকরি ও লেখালেখির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। সময় বের করা কঠিন। এরপরও আমি সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরে যাই। সারমেয়দের খাবার দিয়ে আসি।’

এদিকে অসুস্থ কুকুর-বিড়ালদের সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা নিশ্চিত করার কাজটি কৈশোর থেকেই শুরু করছিলেন রাকিবুল হক। সময়ের পরিক্রমায় প্রাণীর অধিকার রক্ষায় দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকের ভূমিকা পালন করছেন তিনি। সমমনা বন্ধুদের নিয়ে ২০১৫ চালু করেন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (প–ফাউন্ডেশন)। অসুস্থ-আঘাতপ্রাপ্ত বেওয়ারিশ প্রাণী উদ্ধার, চিকিৎসা ও আশ্রয়দান করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ঢাকার বিরুলিয়া এলাকায় রয়েছে তাঁদের নিজস্ব উদ্ধারকেন্দ্র। স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটির লালমাটিয়া, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় রয়েছে ‘প লাইফ কেয়ার’ নামে তিনটি প্রাণী চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। 

প্রাণী অধিকারকর্মী ও স্থপতি রাকিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৃথিবীর সব প্রাণীর সুখ-দুঃখ নৈতিকভাবে সমান গুরুত্ব পাওয়া দরকার। এই বোধ আমাদের সমাজ থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা সাংগঠনিকভাবে প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করছি। অনেকেই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। আমরা বিশ্বাস করি, প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া

পূর্ব আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান। শনিবার (১ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, বুধবারের নির্বাচনে তিনি ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। খবর বিবিসির। 

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা নির্বাচনে স্বচ্ছতার অভাব এবং ব্যাপক অস্থিরতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন ঘিরে দেশটিতে গত কয়েক দিনে সহিংসতায় কয়েক শ’ মানুষ নিহত ও বহু আহত হয়েছে। দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে নিহতের সঠিক সংখ্যা যাচাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

সরকার সহিংসতার মাত্রা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অস্থিরতা দমনে দেশজুড়ে কারফিউও বাড়ানো হয়েছে।

ক্ষমতাসীন চামা চা মাপিন্দুজি (সিসিএম) দলের প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানের প্রশাসনের বিরুদ্ধে ভোটের আগে ভিন্নমত পোষণকারী ও বিরোধীদের ওপর কঠোর দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রধান দুই বিরোধী দলকেই নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া হয়নি।

ফলে নির্বাচনের পরই বৃহত্তম নগরী দার-এস-সালাম ও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবারও বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। অস্থিরতা বন্ধ করার জন্য সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা সামিয়ার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং অসংখ্য গাড়ি, পেট্রোল স্টেশন এবং থানায় আগুন দেয়। 

বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশিরভাগ তরুণ বিক্ষোভকারীরা, যারা নির্বাচনকে অন্যায্য বলে সমালোচনা করেছেন। তাদের অভিযোগ, সরকার প্রধান বিরোধী নেতাদের দমন করে গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করছে। প্রধান দুই বিরোধী নেতার মধ্যে একজন কারাগারে রয়েছেন এবং অন্যজনকে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী চাদেমা দলের একজন মুখপাত্র শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানান, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে তানজানিয়ার একটি কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, কমপক্ষে ৫০০ জন মারা যাওয়ার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কম্বো থাবিত এই সহিংসতাকে ‘এখানে-সেখানে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপত্তা বাহিনী খুব দ্রুত ও দৃঢ়তার সাথে কাজ করেছে।”

প্রধান দুই বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যে চাদেমা দলের টুন্ডু লিসুকে নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগ আটক করা হয়, যদিও তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং এসিটি-ওয়াজালেনডো দলের নেতা লুহাগা এমপিনাকে আইনি কৌশল খাটিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।

১৬টি প্রান্তিক দল, যাদের কারোরই ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন ছিল না, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

সামিয়ার ক্ষমতাসীন দল সিসিএম, দেশটির রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে কখনও কোনো নির্বাচনে সিসিএম হারেনি।

নির্বাচনের আগে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিরোধী ব্যক্তিত্বদের জোরপূর্বক গুম, নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরকারের নিন্দা জানিয়েছিল।

প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলির মৃত্যুর পর ২০২১ সালে তানজানিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে সামিয়া ক্ষমতায় আসেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • সুদানের রাস্তায় শত শত মরদেহ, পালিয়েছে ৬০ হাজার বাসিন্দা