Prothomalo:
2025-09-18@01:18:39 GMT

এই শহরটা শুধু মানুষের নয় 

Published: 25th, July 2025 GMT

পথের পাশের কুকুর-বিড়ালের প্রতি রাজধানীর মানুষের নিষ্ঠুরতার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়। পা ভেঙে দেওয়া, গরম পানি দিয়ে শরীর পুড়িয়ে দেওয়া; এমনকি মানুষের মার খেতে খেতে কুকুর-বিড়ালের প্রাণ হারানোর ঘটনা এই শহরেই ঘটেছে প্রকাশ্যে। অবশ্য এর মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে।

গত শনিবার দুপুরে মিরপুর-১০ নম্বর সংযোগ সড়কের পাশে দেখা যায়, একটি অসুস্থ কুকুরকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছেন তাওহিদুর রহমান বৃত্ত ও সিয়াম চৌধুরী নামের দুই তরুণ। একজন অসুস্থ কুকুরটিকে কোলে তুলে নিয়ে স্যালাইন পুশ করছেন। আরেকজন একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় ধরে রেখেছেন স্যালাইনের ব্যাগটি। রোদ ও গরম উপেক্ষা করে কষ্টসাধ্য কাজটি দুই তরুণ মিলে করছিলেন পরম মমতায়।

কথা হয় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির শিক্ষার্থী তাওহিদুর রহমান বৃত্তর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কুকুরটি নিউরো সমস্যায় ভুগছে। মুখের ভেতরেও জখম রয়েছে। পশুর চিকিৎসক আবদুর রহমানের পরামর্শমতো আমরা দুজন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কুকুরটিকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি, এই শহরটা শুধু মানুষের নয়। কুকুর, বিড়াল, ফুল, পাখি-প্রজাপতি যদি এই শহর থেকে বিলুপ্ত হয়, তাহলে মানুষ কখনো ভালো থাকতে পারবে না।’

রাকিবুল ও সিয়ামের মতো অসংখ্য পশুপ্রেমী তরুণ-তরুণী সারা শহরেই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছেন। এঁদের কেউ পথের এই পশুদের নিয়মিত খাওয়ানোর দায়িত্ব নেন, কেউবা অসুস্থ কুকুর-বিড়ালকে সুস্থ করে পরিবারের সদস্য করে নেন।

দেশে করোনা মহামারি চলার সময় দোকানপাট, রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। ঢাকার অলিগলির কুকুর–বিড়ালের খাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছিলেন চিকিৎসক রাফিয়া আলম। তিনি বলেন, ‘আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটে। প্রাণ-প্রকৃতির কাছাকাছি থাকায় পশুপাখির প্রতি সহজাত মমতা শৈশব থেকে আমার মধ্যে কাজ করেছে। করোনার সময় কুকুর-বিড়ালের খাদ্যসংকট, তাদের নিদারুণ কষ্ট আমাকে স্পর্শ করে। সেই সময় বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতায় আমি কুকুর-বিড়ালদের নিয়মিত খাবার দিয়েছি। এখন চাকরি ও লেখালেখির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। সময় বের করা কঠিন। এরপরও আমি সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরে যাই। সারমেয়দের খাবার দিয়ে আসি।’

এদিকে অসুস্থ কুকুর-বিড়ালদের সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা নিশ্চিত করার কাজটি কৈশোর থেকেই শুরু করছিলেন রাকিবুল হক। সময়ের পরিক্রমায় প্রাণীর অধিকার রক্ষায় দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকের ভূমিকা পালন করছেন তিনি। সমমনা বন্ধুদের নিয়ে ২০১৫ চালু করেন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (প–ফাউন্ডেশন)। অসুস্থ-আঘাতপ্রাপ্ত বেওয়ারিশ প্রাণী উদ্ধার, চিকিৎসা ও আশ্রয়দান করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ঢাকার বিরুলিয়া এলাকায় রয়েছে তাঁদের নিজস্ব উদ্ধারকেন্দ্র। স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটির লালমাটিয়া, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় রয়েছে ‘প লাইফ কেয়ার’ নামে তিনটি প্রাণী চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। 

প্রাণী অধিকারকর্মী ও স্থপতি রাকিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৃথিবীর সব প্রাণীর সুখ-দুঃখ নৈতিকভাবে সমান গুরুত্ব পাওয়া দরকার। এই বোধ আমাদের সমাজ থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা সাংগঠনিকভাবে প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করছি। অনেকেই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। আমরা বিশ্বাস করি, প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে