Prothomalo:
2025-07-29@21:09:11 GMT

এই শহরটা শুধু মানুষের নয় 

Published: 25th, July 2025 GMT

পথের পাশের কুকুর-বিড়ালের প্রতি রাজধানীর মানুষের নিষ্ঠুরতার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়। পা ভেঙে দেওয়া, গরম পানি দিয়ে শরীর পুড়িয়ে দেওয়া; এমনকি মানুষের মার খেতে খেতে কুকুর-বিড়ালের প্রাণ হারানোর ঘটনা এই শহরেই ঘটেছে প্রকাশ্যে। অবশ্য এর মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে।

গত শনিবার দুপুরে মিরপুর-১০ নম্বর সংযোগ সড়কের পাশে দেখা যায়, একটি অসুস্থ কুকুরকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছেন তাওহিদুর রহমান বৃত্ত ও সিয়াম চৌধুরী নামের দুই তরুণ। একজন অসুস্থ কুকুরটিকে কোলে তুলে নিয়ে স্যালাইন পুশ করছেন। আরেকজন একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় ধরে রেখেছেন স্যালাইনের ব্যাগটি। রোদ ও গরম উপেক্ষা করে কষ্টসাধ্য কাজটি দুই তরুণ মিলে করছিলেন পরম মমতায়।

কথা হয় শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির শিক্ষার্থী তাওহিদুর রহমান বৃত্তর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কুকুরটি নিউরো সমস্যায় ভুগছে। মুখের ভেতরেও জখম রয়েছে। পশুর চিকিৎসক আবদুর রহমানের পরামর্শমতো আমরা দুজন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কুকুরটিকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি, এই শহরটা শুধু মানুষের নয়। কুকুর, বিড়াল, ফুল, পাখি-প্রজাপতি যদি এই শহর থেকে বিলুপ্ত হয়, তাহলে মানুষ কখনো ভালো থাকতে পারবে না।’

রাকিবুল ও সিয়ামের মতো অসংখ্য পশুপ্রেমী তরুণ-তরুণী সারা শহরেই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছেন। এঁদের কেউ পথের এই পশুদের নিয়মিত খাওয়ানোর দায়িত্ব নেন, কেউবা অসুস্থ কুকুর-বিড়ালকে সুস্থ করে পরিবারের সদস্য করে নেন।

দেশে করোনা মহামারি চলার সময় দোকানপাট, রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। ঢাকার অলিগলির কুকুর–বিড়ালের খাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছিলেন চিকিৎসক রাফিয়া আলম। তিনি বলেন, ‘আমার শৈশব-কৈশোর কেটেছে ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটে। প্রাণ-প্রকৃতির কাছাকাছি থাকায় পশুপাখির প্রতি সহজাত মমতা শৈশব থেকে আমার মধ্যে কাজ করেছে। করোনার সময় কুকুর-বিড়ালের খাদ্যসংকট, তাদের নিদারুণ কষ্ট আমাকে স্পর্শ করে। সেই সময় বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতায় আমি কুকুর-বিড়ালদের নিয়মিত খাবার দিয়েছি। এখন চাকরি ও লেখালেখির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। সময় বের করা কঠিন। এরপরও আমি সপ্তাহে তিন দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ চত্বরে যাই। সারমেয়দের খাবার দিয়ে আসি।’

এদিকে অসুস্থ কুকুর-বিড়ালদের সংকটময় পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা নিশ্চিত করার কাজটি কৈশোর থেকেই শুরু করছিলেন রাকিবুল হক। সময়ের পরিক্রমায় প্রাণীর অধিকার রক্ষায় দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকের ভূমিকা পালন করছেন তিনি। সমমনা বন্ধুদের নিয়ে ২০১৫ চালু করেন পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন (প–ফাউন্ডেশন)। অসুস্থ-আঘাতপ্রাপ্ত বেওয়ারিশ প্রাণী উদ্ধার, চিকিৎসা ও আশ্রয়দান করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ঢাকার বিরুলিয়া এলাকায় রয়েছে তাঁদের নিজস্ব উদ্ধারকেন্দ্র। স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটির লালমাটিয়া, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় রয়েছে ‘প লাইফ কেয়ার’ নামে তিনটি প্রাণী চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র। 

প্রাণী অধিকারকর্মী ও স্থপতি রাকিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৃথিবীর সব প্রাণীর সুখ-দুঃখ নৈতিকভাবে সমান গুরুত্ব পাওয়া দরকার। এই বোধ আমাদের সমাজ থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা সাংগঠনিকভাবে প্রাণীদের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করছি। অনেকেই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। আমরা বিশ্বাস করি, প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা না থাকলে মানুষ হওয়া যায় না।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার

বরগুনার বিষখালী নদীর পাড়ে বেড়ে উঠেছেন লাইলী বেগম। বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কন্যা হয়েও লাইলী সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। অভাব, ক্ষুধা আর সমাজের অবহেলা তার নিত্যসঙ্গী হয়। তারপরও থেমে যাননি লাইলী।  

জীবনের চাকা ঘুরাতে, মাছ ধরা থেকে বর্গাচাষ—সবই করেছেন লাইলী। গত ২১ বছর ধরে নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বরগুনা জেলার সরকারিভাবে নিবন্ধিত একমাত্র নারী জেলে তিনি। এই লাইলীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘উত্তরের বৈঠা’। এটি নির্মাণ করেছেন আনোয়ার হোসেন।

পরিচালক আনোয়ার হোসেন

আরো পড়ুন:

জসীমের কবরে রাতুলকে সমাহিত করে দুই ভাইয়ের আবেগঘন পোস্ট

নীনার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে কী বলেছিলেন ক্রিকেটার ভিভ?

এ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক আনোয়ার হোসেন। তরুণ এই নির্মাতা বলেন, “এই চলচ্চিত্র শুধু একজন নারী জেলের গল্প নয়, এটি একজন মানুষের বেঁচে থাকার অদম্য চেষ্টা, একাকিত্বে গড়ে ওঠা সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। লাইলী বেগম যখন নদীতে জাল ছুঁড়ে দেন, সেই মুহূর্তে তিনি শুধু মাছ খোঁজেন না—তিনি খুঁজে ফেরেন নিজের অবস্থান, নিজের সম্মান, আর অস্তিত্বের উত্তর।” 

লাইলীর চোখ দিয়ে বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতা। তার ভাষায়, “এই ফিল্মে আমি কোনো কৃত্রিম কণ্ঠ বা নাটকীয় ভাষা ব্যবহার করিনি। কারণ আমি চেয়েছি দর্শক যেন লাইলীর চোখ দিয়েই এই বাস্তবতা দেখেন। তার নীরবতা, তার কথাবার্তা, তার দৃষ্টি—সবই যেন একেকটি দৃশ্যপট হয়ে ওঠে। একজন নির্মাতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল শুধু একটি ফ্রেম তৈরি করে দেওয়া, বাকিটা বলে গেছেন লাইলী নিজেই—তার জীবনযাত্রা, নদী এবং অব্যক্ত যন্ত্রণা দিয়ে।” 

‘লাইলী’-কে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান পরিচালক। তা জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই ফিল্মটি তাদের জন্য, যারা নিঃশব্দে লড়াই করেন এবং যারা কখনো আলোয় আসেন না। এখানে আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরি করেছি, পূর্ণদৈর্ঘ্য আকারে তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। আপনাদের সহযোগিতা ও আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। এই জীবন সংগ্রামের কথা বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চাই।” 

সমাজের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে লাইলী প্রমাণ করেছেন, নারীর স্থান কেবল ঘরে নয়, সাহস আর সংগ্রামেও। লাইলী কেবল একজন নারী জেলে নন, এক অনুপ্রেরণার নাম। নারী চাইলে সব পারে—লাইলী তা নিঃশব্দে প্রমাণ করেছেন বলেও মনে করেন নির্মাতা।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু
  • ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ
  • কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে গেল যাত্রীবাহী বাস
  • নিউ ইয়র্কে নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে যা জানা গেলো
  • পাঁচ দ্বীপে বাড়ি কিনলেই পাবেন পাসপোর্ট, দেড় শতাধিক দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশ সুবিধা
  • মানুষকে জড়িয়ে ধরল হস্তীশাবক
  • ‘একজন শিল্পীকে ভীষণভাবে অসম্মানিত করা হচ্ছে’
  • ‘শফিউল বারী বাবু ছিলেন আন্দোলনের প্রেরণা’ 
  • লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার