‘আমি ফিরে আসব’—মাত্র তিনটি শব্দ। কিন্তু বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি চলচ্চিত্রপ্রেমীর কাছে এ তিনটি শব্দ একটি বিশ্বাসের নাম, একটি প্রতিশ্রুতির প্রতীক। আর সেই প্রতীকের জীবন্ত রূপ আরনল্ড শোয়ার্জনেগার। আশির দশকের ভিসিআর কাঁপানো ‘টার্মিনেটর’ থেকে আজকের ডিজিটাল যুগের অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব। তিনি কেবল একজন নায়ক নন, তিনি একজন কিংবদন্তি। সিনেমায় তিনি ছিলেন ভবিষ্যতের যন্ত্রমানব, আর বাস্তব জীবনে হয়ে উঠেছেন হার না–মানা এক মানুষ, যাঁর জীবন কেবল রূপকথা নয়, অনুপ্রেরণার এক অফুরন্ত মহাসাগর। ভক্তরা এমনটাই মনে করেন।
আজ ৩০ জুলাই এই তারকার ৭৮তম জন্মদিন। এই দীর্ঘ জীবনে তিনি যা কিছু স্পর্শ করেছেন, তা সোনা, রুপা ও হীরা হয়ে কিংবদন্তিতে রূপ নিয়েছে। শরীরের গঠন, অভিনয়, রাজনীতি, ব্যবসা—সাফল্যের এমন নানা শিখর তিনি জয় করেছেন, যা সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্নেরও অতীত। তাঁর জীবনের গল্প যেন এক মহাকাব্য, যেখানে দারিদ্র্য, প্রতিকূলতা আর শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে পরাজিত করে এক তরুণ নিজের ভাগ্য নিজেই লিখেছেন। চুল–দাড়ি সাদা হয়েছে বটে; তবে আগের মতোই যেন যুবক সাবেক বডিবিল্ডার।

শিকড়ের সন্ধানে ‘অস্ট্রিয়ান জীবন’
আরনল্ডের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৩০ জুলাই অস্ট্রিয়ার থাল নামের এক ছোট্ট গ্রামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সেই সময়ে তাঁর পরিবার ছিল বেশ সাধারণ, যেখানে বিলাসিতা ছিল এক অচেনা শব্দ। তিনি নিজেই তাঁর শৈশবের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের ঘরে শৌচাগার ছিল না, গরম পানি ছিল না। কয়েক শ গজ দূরের কুয়া থেকে বালতিতে করে পানি টেনে আনতে হতো। কিন্তু নিজেদের কখনো গরিব মনে হয়নি, কারণ আমাদের চারপাশে সবাই একই রকম ছিল।’
আরনল্ডের বাবা গুস্তাভ শোয়ার্জনেগার ছিলেন স্থানীয় পুলিশপ্রধান এবং একজন কঠোর প্রকৃতির মানুষ। শৈশবে বাবার কঠোর অনুশাসনে বড় হয়েছেন আরনল্ড। বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বেশ জটিল। গুস্তাভ চাইতেন, তাঁর ছেলেরাও খেলাধুলায় নাম করুক, কিন্তু শরীরচর্চার প্রতি আরনল্ডের তীব্র আকর্ষণকে তিনি কখনোই সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। এই প্রতিকূলতাই হয়তো আরনল্ডের ভেতরে লুকিয়ে থাকা জেদকে আরও উসকে দিয়েছিল। তিনি বুঝেছিলেন, এই গ্রাম ও পরিচিত পরিবেশের বাইরে তাঁর জন্য এক বিশাল পৃথিবী অপেক্ষা করছে। সেই পৃথিবীর টিকিট হবে তাঁর শরীর।

‘টার্মিনেটর: ডার্ক ফেট’ ছবিতে আরনল্ড শোয়ার্জেনেগার.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আরনল ড র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে