আটাত্তরে হার না–মানা ‘টার্মিনেটর’
Published: 30th, July 2025 GMT
‘আমি ফিরে আসব’—মাত্র তিনটি শব্দ। কিন্তু বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি চলচ্চিত্রপ্রেমীর কাছে এ তিনটি শব্দ একটি বিশ্বাসের নাম, একটি প্রতিশ্রুতির প্রতীক। আর সেই প্রতীকের জীবন্ত রূপ আরনল্ড শোয়ার্জনেগার। আশির দশকের ভিসিআর কাঁপানো ‘টার্মিনেটর’ থেকে আজকের ডিজিটাল যুগের অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব। তিনি কেবল একজন নায়ক নন, তিনি একজন কিংবদন্তি। সিনেমায় তিনি ছিলেন ভবিষ্যতের যন্ত্রমানব, আর বাস্তব জীবনে হয়ে উঠেছেন হার না–মানা এক মানুষ, যাঁর জীবন কেবল রূপকথা নয়, অনুপ্রেরণার এক অফুরন্ত মহাসাগর। ভক্তরা এমনটাই মনে করেন।
আজ ৩০ জুলাই এই তারকার ৭৮তম জন্মদিন। এই দীর্ঘ জীবনে তিনি যা কিছু স্পর্শ করেছেন, তা সোনা, রুপা ও হীরা হয়ে কিংবদন্তিতে রূপ নিয়েছে। শরীরের গঠন, অভিনয়, রাজনীতি, ব্যবসা—সাফল্যের এমন নানা শিখর তিনি জয় করেছেন, যা সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্নেরও অতীত। তাঁর জীবনের গল্প যেন এক মহাকাব্য, যেখানে দারিদ্র্য, প্রতিকূলতা আর শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে পরাজিত করে এক তরুণ নিজের ভাগ্য নিজেই লিখেছেন। চুল–দাড়ি সাদা হয়েছে বটে; তবে আগের মতোই যেন যুবক সাবেক বডিবিল্ডার।
শিকড়ের সন্ধানে ‘অস্ট্রিয়ান জীবন’
আরনল্ডের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৩০ জুলাই অস্ট্রিয়ার থাল নামের এক ছোট্ট গ্রামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সেই সময়ে তাঁর পরিবার ছিল বেশ সাধারণ, যেখানে বিলাসিতা ছিল এক অচেনা শব্দ। তিনি নিজেই তাঁর শৈশবের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের ঘরে শৌচাগার ছিল না, গরম পানি ছিল না। কয়েক শ গজ দূরের কুয়া থেকে বালতিতে করে পানি টেনে আনতে হতো। কিন্তু নিজেদের কখনো গরিব মনে হয়নি, কারণ আমাদের চারপাশে সবাই একই রকম ছিল।’
আরনল্ডের বাবা গুস্তাভ শোয়ার্জনেগার ছিলেন স্থানীয় পুলিশপ্রধান এবং একজন কঠোর প্রকৃতির মানুষ। শৈশবে বাবার কঠোর অনুশাসনে বড় হয়েছেন আরনল্ড। বাবার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল বেশ জটিল। গুস্তাভ চাইতেন, তাঁর ছেলেরাও খেলাধুলায় নাম করুক, কিন্তু শরীরচর্চার প্রতি আরনল্ডের তীব্র আকর্ষণকে তিনি কখনোই সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। এই প্রতিকূলতাই হয়তো আরনল্ডের ভেতরে লুকিয়ে থাকা জেদকে আরও উসকে দিয়েছিল। তিনি বুঝেছিলেন, এই গ্রাম ও পরিচিত পরিবেশের বাইরে তাঁর জন্য এক বিশাল পৃথিবী অপেক্ষা করছে। সেই পৃথিবীর টিকিট হবে তাঁর শরীর।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আরনল ড র
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫