কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত লেখা যায়। আর তাই বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, প্রবন্ধ, ই–মেইল থেকে শুরু করে গবেষণাপত্র, পত্রিকার কলাম লেখায় এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে অনেক এআই মডেল মানুষের লেখার মতোই সাবলীলভাবে লিখতে পারায় সেগুলো মানুষ না এআই লিখেছে, তা সহজে বোঝা যায় না। তবে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে এআই দিয়ে লেখা বার্তা বা লেখা শনাক্ত করা সম্ভব। এআই দিয়ে তৈরি লেখা চেনার পদ্ধতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।

এম ড্যাশ ব্যবহার

বিভিন্ন এআই টুলে যে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রায়ই এম ড্যাশের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণ লেখার ক্ষেত্রে আমরা এম ড্যাশ ব্যবহার করি না। সে ক্ষেত্রে কোনো লেখায় এম ড্যাশের উপস্থিতি থাকলে তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই মডেলগুলো মূলত নিজস্ব তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এম ড্যাশ সাধারণত বই বা লেখা ছাপানোর সময় বিরতি বা অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য প্রকাশে ব্যবহার করা হয়। এআই বিভিন্ন প্রকাশিত বইপত্রের লেখার শৈলী অনুকরণ করে বলে এম ড্যাশ বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর তাই লেখায় অতিরিক্ত এম ড্যাশ ব্যবহার হলে তা এআই দিয়ে তৈরি বলে ধারণা করা যেতে পারে।

আরও পড়ুনএআই দিয়ে বানানো ছবি চিনবেন কীভাবে২২ আগস্ট ২০২৪যান্ত্রিক শব্দচয়ন

এআই মডেলগুলো প্রায়ই কিছু প্যাটার্ন ও শব্দকে পুনরাবৃত্ত করে, আর তাই এআই দিয়ে লেখায় পুনরাবৃত্তিমূলক বাক্য গঠন ও শব্দচয়ন বেশি দেখা যায়। শুধু তা–ই নয়, এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় একই ধরনের বাক্য গঠন বেশি চোখে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের সংযুক্তমূলক শব্দ যেমন এ ছাড়া, অতএব, ফলস্বরূপ বেশি ব্যবহার করে এআই মডেলে। আবার বিশেষ কিছু বিশেষণ বারবার ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আর তাই লেখায় যান্ত্রিক শব্দচয়ন বেশি থাকলে বুঝতে হবে সেটি এআই দিয়ে লেখা।

গভীরতার অভাব

এআই তথ্য সংগ্রহে পারদর্শী হলেও মানুষের মতো জটিল বা মৌলিক বিশ্লেষণ করতে পারে না। আর তাই এআইয়ের তৈরি লেখায় গভীরতা ও বিশ্লেষণের অভাব দেখা যায়। এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় তথ্য উপস্থাপন বেশি থাকলেও লেখকের ব্যক্তিগত মতামত বা মানবীয় ভাব অনুপস্থিত থাকে। এআই দিয়ে তৈরি লেখাতে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, আবেগ বা গভীর চিন্তার অভাব থাকে। ফলে লেখাগুলোতে তথ্যের সারসংক্ষেপ বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেখা যায়। এআই প্রায়ই এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে, যা ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও মানুষের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন আলাপে অনুপস্থিত থাকে।

আরও পড়ুনএআই দিয়ে কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা শনাক্ত করবেন যেভাবে২৫ মে ২০২৫মানবিক দিক অনুপস্থিত

খুব স্বাভাবিকভাবে এআই দিয়ে লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা আবেগের অনুপস্থিতি থাকে। কিন্তু মানুষের লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, হাস্যরস বা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। এআই মডেল গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন সমাধান করতে পারলেও মানবিক স্পর্শ তৈরি করতে পারে না। যখন লেখা নিরপেক্ষ বা আবেগহীন মনে হয়, তখন তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই দিয়ে তৈরি লেখায় বেশ অনাকাঙ্ক্ষিত অসংগতি বা তথ্যের ভুল দেখা যায়।

আরও পড়ুনএআই প্রযুক্তি দিয়ে প্রতারণা বাড়ছে জিমেইলে, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এআই দিয়ে লেখা চেনার একাধিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পরও নিজের বিচার–বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু তা–ই নয়, বিষয়ে সঙ্গে লেখার প্রাসঙ্গিকতাও বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে ছোট একটি পরীক্ষা করা যাক। দুটি অনুচ্ছেদ পড়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কোন লেখাটি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে।

ক.

সুন্দরবনের শ্বাসমূল থেকে কক্সবাজারের বেলাভূমি—বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত এই ব-দ্বীপ সুজলা-সুফলা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে এটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ভূমি সত্যিই মন মুগ্ধ করে তোলে।

খ. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ, যেখানে সবুজ গ্রাম আর নদীর ঢেউয়ে জীবন প্রবাহিত হয়। এখানকার মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা, আর সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।

লেখাগুলো পড়ে অনেকেই বলবেন ‘ক’ অনুচ্ছেদের লেখাটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কেউ বলবেন ‘খ’ অনুচ্ছেদের কথা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে  ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি অনুচ্ছেদই গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে। আর তাই এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনতে বেশ সতর্ক থাকতে হবে।

সূত্র: সেলজি ও ইস্ট সেন্ট্রাল কলেজ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর এম ড য শ ব অন চ ছ দ এআই দ য় এআইয় র আর ত ই

এছাড়াও পড়ুন:

সম্পর্কের মতো জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতেও এআইয়ে ঝুঁকছে মানুষ, পরিণতি কী

চলতি বছরের এপ্রিলে কেটি মোরান প্রেমিকের সঙ্গে তাঁর ছয় মাসের সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি এমন এক সাহায্যকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান, সচরাচর এমনটা দেখা যায় না। তাঁর কৃতজ্ঞতা পেয়েছে চ্যাটজিপিটি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) চ্যাটবট।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ৩৩ বছর বয়সী এই নারী চ্যাটবটটিকে স্নেহের সঙ্গে ‘চ্যাট’ নামে ডাকেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাকে কিছু বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে এবং নিজের সঙ্গে আলাপে বাধ্য করেছে, যা আমি এড়িয়ে যাচ্ছিলাম।’

মোরান তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যদের কাছেও মনের কথা খুলে বলেছিলেন। এরপরও তিনি মনে করেন, চ্যাটজিপিটিই তাঁকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছিল যে, তাঁর সম্পর্কের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তাঁর দুশ্চিন্তার মূল কারণ। চ্যাটবটটির সঙ্গে এক সপ্তাহ কথা বলার পর, তিনি সম্পর্কটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে।

বিচ্ছেদ, চাকরি পরিবর্তন বা অন্য দেশে চলে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই সাধারণত বন্ধুবান্ধব, পরিবার বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে অভ্যস্ত। তবে এখন কিছু মানুষ নিজের অনুভূতির বিষয়ে তাৎক্ষণিক নির্মোহ মূল্যায়ন পেতে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছেন।

মোরানের মতো কেউ কেউ কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস জোগানোর কৃতিত্ব এআইকে দিচ্ছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে বলছেন, এআইয়ের তোষামুদে স্বভাব কখনো কখনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

নিখুঁত নয়

জুলি নাইসকে চ্যাটজিপিটির কাছে মনের কথা খুলে বলতে বাধ্য করেছিল মূলত অবসাদ। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর প্রযুক্তি শিল্পে তিন বছর কাজ করার পর তিনি দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা এবং ক্রমাগত ক্লান্তিতে ভুগতে শুরু করেন।

গত বছরের শেষের দিকের সেই সময়টি সম্পর্কে জুলি বলেন, ‘অবশেষে আমি এমন একটা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছি, যেখানে মনে হচ্ছিল— আমাকে কিছু একটা করতেই হবে, পরিবর্তন আনতেই হবে। আমি তখন একটা মানব-খোলস মাত্র ছিলাম (নিষ্প্রাণ)।’

জুলি সিদ্ধান্ত নিলেন— স্থান পরিবর্তন করবেন, বিশেষত ফ্রান্সে চলে যাবেন। আর এ বিষয়ে পরামর্শের জন্য তিনি দ্বারস্থ হন চ্যাটজিপিটির। তিনি তাঁর চাওয়াগুলো (একটি শান্ত শহর, যেখানে ভালো সংখ্যক প্রবাসীর বসবাস থাকবে) এবং তাঁর অপছন্দগুলো (প্যারিসের মতো ব্যস্ত শহর নয়) বিশদভাবে উল্লেখ করলেন। চ্যাটবটটি তাঁকে ফ্রান্সের দক্ষিণের একটি ছোট্ট শহর ইউজেস সুপারিশ করল। সেখানকার বাসিন্দা ৮ হাজার ৩০০ জনের মতো।

জুলি চলতি বছরের এপ্রিলে সেখানে চলে যান। তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের এই প্রক্রিয়াটি চ্যাটজিপিটির হাতে তুলে দেওয়ায় পুরো ব্যাপারটি নিয়ে তাঁর অতিরিক্ত চাপ অনেক কমে গিয়েছিল। যদিও তিনি এখন বলছেন, সিদ্ধান্তটি নিখুঁত ছিল না। ইউজেসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আছে ঠিকই। তবে চ্যাটজিপিটি যে তথ্যটি দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, সেটি হলো এই প্রবাসীদের বেশিরভাগই অবসরপ্রাপ্ত। আর জুলির বয়স ৪৪ বছর।

তরুণদের মধ্যে জিজ্ঞাসার প্রবণতা বেশি

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআইয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, চ্যাটজিপিটিতে দেওয়া বার্তার প্রায় অর্ধেকই ‘জিজ্ঞাসা’ বিভাগে পড়ে। ওপেনএআই এটিকে ‘সিদ্ধান্ত নিতে তথ্য খোঁজা বা যাচাই’ বিভাগে রেখেছে। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান উল্লেখ করেছেন, এই প্রবণতাটি তরুণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

গত মে মাসে ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সিকোইয়া ক্যাপিটালের ‘এআই অ্যাসেন্ট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বয়সে ২০ থেকে ৩০ বছরের কোঠায় থাকা ব্যবহারকারীদের বিষয়ে অল্টম্যান বলেন, ‘তাঁরা চ্যাটজিপিটির কাছে জিজ্ঞাসা না করে আসলেই জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্তগুলো নেন না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘তাঁদের জীবনে আসা প্রতিটি ব্যক্তি এবং তাঁদের আলাপের সম্পূর্ণ প্রেক্ষাপট এআইয়ের কাছে আছে।’ (এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি)।

আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও, ফস্টার স্কুল অব বিজনেস, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন

তবে এভাবে তরুণেরাই শুধু এআইয়ের শরণাপন্ন হচ্ছেন, ব্যাপারটা তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কানসাস সিটির বাসিন্দা মাইক ব্রাউন। ২০২৩ সালে ৫২ বছর বয়সে এসে নিজের ৩৬ বছরের বিবাহিত জীবন নিয়ে কী করা উচিত, সেই পরামর্শের জন্য একটি চ্যাটবটের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি। তাঁর বন্ধু, যাজক এবং বিবাহ পরামর্শক সবাই তাঁকে বিচ্ছেদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তিনি বলেন, ওই বছরই চালু হওয়া একটি ইন্টারেকটিভ চ্যাটবট ‘পাই.এআই’-এর সঙ্গে ৩০ মিনিটের কথোপকথনের পরই তিনি তাঁর সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হন।

ব্রাউন বলেন, ‘আমার এই ভাবনাগুলো যাচাই করে নেওয়া দরকার ছিল এবং এই পথে এগোনোই যে সঠিক, সেটির জন্য নিশ্চয়তা পাওয়াটা দরকার ছিল।’ তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে একটি ‘বিশ্বাসযোগ্য’ দৃষ্টিভঙ্গি পেতে তিনি চ্যাটবটটির ওপর আস্থা রেখেছিলেন।

আরও পড়ুনচ্যাটবট কি মানুষের মতো বুদ্ধিমান হতে পারবে২৯ মে ২০২৪

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ফস্টার স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক লিওনার্ড বুসিও কীভাবে মানুষ ও এআইয়ের মধ্যে সহযোগিতায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের যথার্থতা বাড়ানো যায়, তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বুঝতে পারছেন, কেন মানুষ এভাবে এআইয়ের দিকে ঝুঁকছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো সার্বক্ষণিক এটি হাতের কাছে পাওয়া যায়, বেশিরভাগ মানুষের চেয়ে অনেক দ্রুত উত্তর দিতে পারে এবং এটিকে তুলনামূলক বেশি নিরপেক্ষ বলেও মনে করা হয়।

বুসিও বলেন, ‘এআই সাধারণত অনেকটাই কূটনৈতিক ভাষায় অভ্যস্ত, পক্ষান্তরে মানুষ বিশেষত ব্যক্তিগত পরামর্শের ক্ষেত্রে নিজের চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মতামত দিয়ে থাকে।’

তবে বুসিও সতর্ক করে বলেন, বেশিরভাগ এআই মডেলের ‘তোষামোদী’ প্রবণতা থাকায় তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করার বিষয়ে যতটা আগ্রহী, ততটা সেরা পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহী নয়। তিনি আরও বলেন, ‘তাদের (চ্যাটবট) এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ব্যবহারকারীকে খুশি করতে পারে। কারণ, ব্যবহারকারী খুশি হলে, তারা আবার ফিরে আসে।’

কেটি মোরানের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছিল। চ্যাটজিপিটি বন্ধুর মতো করে কথা বলায় তিনি অবাক হয়েছিলেন বলে জানান। চ্যাটবটটি তাঁকে এ রকম বলেছিল, ‘আপনি এমন কাউকে পাওয়ার যোগ্য, যে আপনাকে আশ্বস্ত করবে; এমন কাউকে নয়, যার নীরবতা আপনাকে দুশ্চিন্তার গোলকধাঁধায় ফেলে দেবে।’

আরও পড়ুনকিশোরকে আত্মহত্যায় উৎসাহ দিয়েছে চ্যাটবট, নির্মাতার বিরুদ্ধে মায়ের মামলা২৪ অক্টোবর ২০২৪

রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা ব্যক্তিদের কেউই এআইয়ের ওপর নির্ভর করার জন্য অনুতপ্ত নন বলে জানিয়েছেন। মাইক ব্রাউনের মতে, এআই ‘আবেগী, নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের’ মতো কাজ করেছে। কেটি মোরানের কাছে এটি ছিল ‘সবচেয়ে কাছের বন্ধুর’ মতো। আর জুলি নাইস বলেন, এআই তাঁকে তিনি আসলে কী চান, তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।

এরপরও, অধ্যাপক বুসিও একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা এআইয়ের হাতে ছেড়ে দিলে, সমস্যা সমাধানের আমাদের নিজস্ব দক্ষতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।’

এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমি বলব, একটু পিছিয়ে আসুন এবং নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে, তা নিয়ে ভাবুন। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করার জন্য যে, আমরা নিজেরাও চিন্তাভাবনার কাজটা করছি।’

আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটিসহ অন্য এআই চ্যাটবটকে যে ৭ তথ্য দেওয়া যাবে না৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিভিতে অতিরিক্ত এআই ব্যবহার করছেন, সাবধান...
  • এআইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা চালাচ্ছে হ্যাকাররা
  • সম্পর্কের মতো জীবনঘনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতেও এআইয়ে ঝুঁকছে মানুষ, পরিণতি কী