এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনবেন যেভাবে
Published: 30th, July 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত লেখা যায়। আর তাই বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, প্রবন্ধ, ই–মেইল থেকে শুরু করে গবেষণাপত্র, পত্রিকার কলাম লেখায় এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে অনেক এআই মডেল মানুষের লেখার মতোই সাবলীলভাবে লিখতে পারায় সেগুলো মানুষ না এআই লিখেছে, তা সহজে বোঝা যায় না। তবে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে এআই দিয়ে লেখা বার্তা বা লেখা শনাক্ত করা সম্ভব। এআই দিয়ে তৈরি লেখা চেনার পদ্ধতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।
এম ড্যাশ ব্যবহারবিভিন্ন এআই টুলে যে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রায়ই এম ড্যাশের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণ লেখার ক্ষেত্রে আমরা এম ড্যাশ ব্যবহার করি না। সে ক্ষেত্রে কোনো লেখায় এম ড্যাশের উপস্থিতি থাকলে তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই মডেলগুলো মূলত নিজস্ব তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এম ড্যাশ সাধারণত বই বা লেখা ছাপানোর সময় বিরতি বা অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য প্রকাশে ব্যবহার করা হয়। এআই বিভিন্ন প্রকাশিত বইপত্রের লেখার শৈলী অনুকরণ করে বলে এম ড্যাশ বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর তাই লেখায় অতিরিক্ত এম ড্যাশ ব্যবহার হলে তা এআই দিয়ে তৈরি বলে ধারণা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনএআই দিয়ে বানানো ছবি চিনবেন কীভাবে২২ আগস্ট ২০২৪যান্ত্রিক শব্দচয়নএআই মডেলগুলো প্রায়ই কিছু প্যাটার্ন ও শব্দকে পুনরাবৃত্ত করে, আর তাই এআই দিয়ে লেখায় পুনরাবৃত্তিমূলক বাক্য গঠন ও শব্দচয়ন বেশি দেখা যায়। শুধু তা–ই নয়, এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় একই ধরনের বাক্য গঠন বেশি চোখে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের সংযুক্তমূলক শব্দ যেমন এ ছাড়া, অতএব, ফলস্বরূপ বেশি ব্যবহার করে এআই মডেলে। আবার বিশেষ কিছু বিশেষণ বারবার ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আর তাই লেখায় যান্ত্রিক শব্দচয়ন বেশি থাকলে বুঝতে হবে সেটি এআই দিয়ে লেখা।
গভীরতার অভাবএআই তথ্য সংগ্রহে পারদর্শী হলেও মানুষের মতো জটিল বা মৌলিক বিশ্লেষণ করতে পারে না। আর তাই এআইয়ের তৈরি লেখায় গভীরতা ও বিশ্লেষণের অভাব দেখা যায়। এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় তথ্য উপস্থাপন বেশি থাকলেও লেখকের ব্যক্তিগত মতামত বা মানবীয় ভাব অনুপস্থিত থাকে। এআই দিয়ে তৈরি লেখাতে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, আবেগ বা গভীর চিন্তার অভাব থাকে। ফলে লেখাগুলোতে তথ্যের সারসংক্ষেপ বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেখা যায়। এআই প্রায়ই এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে, যা ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও মানুষের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন আলাপে অনুপস্থিত থাকে।
আরও পড়ুনএআই দিয়ে কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা শনাক্ত করবেন যেভাবে২৫ মে ২০২৫মানবিক দিক অনুপস্থিতখুব স্বাভাবিকভাবে এআই দিয়ে লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা আবেগের অনুপস্থিতি থাকে। কিন্তু মানুষের লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, হাস্যরস বা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। এআই মডেল গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন সমাধান করতে পারলেও মানবিক স্পর্শ তৈরি করতে পারে না। যখন লেখা নিরপেক্ষ বা আবেগহীন মনে হয়, তখন তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই দিয়ে তৈরি লেখায় বেশ অনাকাঙ্ক্ষিত অসংগতি বা তথ্যের ভুল দেখা যায়।
আরও পড়ুনএআই প্রযুক্তি দিয়ে প্রতারণা বাড়ছে জিমেইলে, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এআই দিয়ে লেখা চেনার একাধিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পরও নিজের বিচার–বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু তা–ই নয়, বিষয়ে সঙ্গে লেখার প্রাসঙ্গিকতাও বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে ছোট একটি পরীক্ষা করা যাক। দুটি অনুচ্ছেদ পড়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কোন লেখাটি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে।
ক.
খ. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ, যেখানে সবুজ গ্রাম আর নদীর ঢেউয়ে জীবন প্রবাহিত হয়। এখানকার মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা, আর সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।
লেখাগুলো পড়ে অনেকেই বলবেন ‘ক’ অনুচ্ছেদের লেখাটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কেউ বলবেন ‘খ’ অনুচ্ছেদের কথা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি অনুচ্ছেদই গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে। আর তাই এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনতে বেশ সতর্ক থাকতে হবে।
সূত্র: সেলজি ও ইস্ট সেন্ট্রাল কলেজ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর এম ড য শ ব অন চ ছ দ এআই দ য় এআইয় র আর ত ই
এছাড়াও পড়ুন:
এআই নিয়ে শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর গা ছাড়া মনোভাব, বললেন বিজ্ঞানী জিওফ্রি হিন্টন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খ্যাতনামা ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জিওফ্রি হিন্টন। তাঁর দাবি, বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো এআইয়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হলেও তা প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিয়ে দেখাচ্ছে না। হিন্টনের ভাষায়, এআই এখন এমনভাবে বিকশিত হচ্ছে, যার গতি ও জটিলতা বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশারও বাইরে।
সম্প্রতি ‘ওয়ান ডিসিশন’ নামের একটি পডকাস্টে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হিন্টন বলেন, বড় কোম্পানিগুলোর অনেকেই এসব ঝুঁকি সম্পর্কে জানেন, কিন্তু প্রকাশ্যে সেসবে গুরুত্ব দিতে অনিচ্ছুক। কিন্তু ডেমিস হাসাবিস এই দিক থেকে ব্যতিক্রম। তিনি বিষয়টি গভীরভাবে বোঝেন এবং আন্তরিকভাবে কিছু করার চেষ্টা করছেন।
কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণার জন্য এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জিওফ্রি হিন্টন ও মার্কিন গবেষক জন জে হপফিল্ড। এই গবেষণাকাজই আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। হিন্টন জানান, এআই এখন যে হারে উন্নত হচ্ছে, তা আগাম কল্পনার বাইরে ছিল। তাঁর মতে, এআই মডেলগুলো এখন এমন সব উপায়ে শেখার ক্ষমতা অর্জন করছে, যা অনেক সময় গবেষকেরাও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারছেন না।
হিন্টন বলেন, ‘এই প্রযুক্তির অগ্রগতি এত দ্রুত ঘটছে যে কখন কোন দিক থেকে কোন ধরনের ঝুঁকি তৈরি হবে, তা আগে থেকে বলা কঠিন। আমি যদি আরও আগে এর সম্ভাব্য বিপদগুলো নিয়ে ভাবতাম, তাহলে হয়তো প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকত। তখন মনে হয়েছিল, এসব ঝুঁকি বহু দূরের ভবিষ্যতের বিষয়।’
২০২৩ সালে দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় কাজ করার পর গুগল ছাড়েন হিন্টন। তখন অনেকেই ধরে নেন, গুগলের আগ্রাসী এআই কৌশলের প্রতিবাদেই প্রতিষ্ঠানটি ছাড়ছেন তিনি। তবে পডকাস্টে হিন্টন এই ব্যাখ্যাকে ‘মিডিয়ার বানানো গল্প’ বলে উল্লেখ করেন। ‘গল্পটা এমন যে একজন সৎ বিজ্ঞানী প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন সত্য বলার জন্য। এটা মিডিয়ার বানানো। সত্যি কথা হলো, আমি গুগল ছেড়েছি কারণ বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। আমি আর আগের মতো কোড করতে পারছিলাম না’—বলেন হিন্টন। তবে তিনি স্বীকার করেন, গুগলে থাকলে তাঁর পক্ষে সব কথা খোলাখুলি বলা সম্ভব হতো না। ‘আপনি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেতন নেন, তখন তাদের স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে কিছু বলা কঠিন।’
ডেমিস হাসাবিসের প্রসঙ্গে হিন্টনের মন্তব্য, ‘ডেমিস এমন একজন, যিনি কেবল প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন না, এর দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও বুঝতে পারছেন এবং সেটা রোধে উদ্যোগ নিতে আগ্রহী।’ ডেমিস হাসাবিস ২০১৪ সালে গুগলের মালিকানাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দায়িত্ব নেন। বর্তমানে তিনি গুগলের এআই গবেষণা শাখার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। প্রযুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদী হলেও তিনি এআইয়ের অপব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সতর্কতা প্রকাশ করে আসছেন।
চলতি বছরের শুরুর দিকে সিএনএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে হাসাবিস বলেন, তাঁর মূল উদ্বেগ চাকরি হারানোর ঝুঁকি নয়, বরং এই প্রযুক্তি যদি ভুল মানুষের হাতে পড়ে, সেটাই বড় ভয়। তিনি বলেন, ‘একজন অসৎ ব্যক্তি যদি এই প্রযুক্তিকে ক্ষতিকর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে তার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই প্রযুক্তির শক্তিশালী দিকগুলো যেন কেবল সৎ ও দায়িত্বশীল মানুষের হাতেই থাকে।’ হাসাবিস মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন যেন একদিকে ভালো মানুষের জন্য সুযোগ তৈরি করে, আবার অন্যদিকে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে এর নিয়ন্ত্রণ সুরক্ষিত রাখা যায়। সেই ভারসাম্যই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে