আফরিন হত্যা: মুখে কালো কাপড় বেঁধে কুবি শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল
Published: 10th, September 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মায়ের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং ন্যায় বিচার চেয়ে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর থেকে প্রধান ফটক হয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশ দিয়ে মিছিল নিয়ে আবার গোল চত্বরে এসে শেষ হয়।
আরো পড়ুন:
১৬ ডাকাতি মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা
জমিয়ত নেতা মুশতাক হত্যা: হাফিজ ৩ দিন রিমান্ডে
কুমিল্লা শহরে জিন তাড়ানোর চিকিৎসার নামে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আফরিন ও তার মাকে খুন করেন কথিত কবিরাজ মোবারক হোসেন, যাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এই ঘটনা জানাজানির দিনই আফরিনের কুবির সহপাঠীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে হত্যাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবি তোলেন।
আফরিন পড়নের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। তার হত্যার দাবিতে বুধবার আবার কর্মসূচি পালন করেন। এদিন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও এই মৌন মিছিলে অংশ নেন।
লোক প্রশাসন বিভাগের একজন শিক্ষক এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন। মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা সুমাইয়া হত্যার ন্যায় বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন। অবশ্য এই কর্মসূচিতে বিভাগের শিক্ষকদের অনুপস্থিতির জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা।
সুমাইয়ার সহপাঠী লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদ সোহান বলেন, “গত ৮ তারিখ সুমাইয়া এবং তার মাকে নিজ বাড়িতে হত্যার প্রতিবাদে আজকে আমাদের এই মৌন মিছিল। আমরা গতকাল (৯ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধান্ত নেই যে, আজ এই প্রতীকী মানববন্ধন করব। আমাদের বিভাগের বাইরে থেকেও আজকে যারা উপস্থিত হয়েছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”
“আজ এখানে একজন শিক্ষক ছাড়া কেউ উপস্থিত হননি এবং সুমাইয়ার জানাজায়ও কেউ অংশগ্রহণ করেননি। এটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। তাদের মধ্যে হয়তো মানবিকতার অভাব। আমরা সুমাইয়া ও তার মায়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।”
সুমাইয়া আফরিনের আরেক সহপাঠী মুনিয়া আফরোজ বলেন, “আমরা আজকে এখানে দাঁড়ানোর মূল কারণ হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন আমাদের গতকাল কোন আশ্বাস দেয়নি যে, ঠিক কতটা সময় লাগবে পূর্ণ তদন্ত করতে। সুমাইয়া এবং তার মায়ের হত্যার আসামি পাওয়া গেছে কিন্তু আমরা এখনো হত্যার কারণ সম্পর্কে অবগত নই, এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত করে সুমাইয়া ও তার মায়ের হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হোক।”
লোক প্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল আরাফাত আমিন রাফি বলেন, “আমাদের এখানে আসার কারণ হচ্ছে পুলিশের যে স্টেটমেন্ট এবং নিহতের ভাইদের যে স্টেটমেন্ট তাতে অসংগতি আছে। এখনো হত্যার কারণ ক্লিয়ার হয়নি, এটা আসলেই হতাশাজনক। এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তার হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত। এজন্যই আজকে আমাদের অবস্থান।”
গত ৮ সেপ্টেম্বর সকালে কুমিল্লার কালিয়াজুড়ী এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে সুমাইয়া ও তার মায়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরইমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার মোবারকই হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি।
ঢাকা/এমদাদুল/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য র হত য র আম দ র হত য ক আফর ন
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫