নেপাল ফেরত ফুটবলারদের ট্রমা কাটাতে মনোবিদের দ্বারস্থ বাফুফে
Published: 12th, September 2025 GMT
নেপালে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে কয়েকদিন কাটিয়ে অবশেষে দেশে ফিরেছেন জামাল ভূঁইয়ারা। হোটেলবন্দি জীবন, বাইরে টানা বিক্ষোভ আর সহিংসতার দৃশ্য; সব মিলিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। দেশে ফিরলেও তাদের ভেতরে রয়ে গেছে অস্বস্তি আর আতঙ্কের ছাপ।
এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বের করে আনতে খেলোয়াড়দের জন্য মনোবিদের সহায়তা নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সংগঠনের সভাপতি তাবিথ আউয়াল জানিয়েছেন, প্রয়োজন অনুযায়ী প্রত্যেক খেলোয়াড়কে মনো-পরামর্শ দেওয়া হবে। তার ভাষায়, “আমাদের চিকিৎসা প্রক্রিয়ার মধ্যে মানসিক সাপোর্ট ও সাইকোলজিক্যাল কোচিং থাকবে। যাদের সরাসরি প্রয়োজন হবে, তাদের বিশেষ সহায়তা দেওয়া হবে। এমনকি যাদের দৃশ্যত কোনো সমস্যা নেই, তাদেরও আমরা মূল্যায়ন করব। কারণ, এই ধরনের অভিজ্ঞতা শারীরিক ও মানসিক ধাক্কা দিয়ে যায়।”
আরো পড়ুন:
বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরলেন জামাল ভূঁইয়ারা
নেপাল থেকে বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরছে বাংলাদেশ দল
তিনি আরও জানান, পুরো ঘটনাতেই ফেডারেশন ছিল সতর্ক। দলের হোটেলের কাছেই আগুন লাগার ঘটনা ঘটে, এমনকি বিক্ষোভকারীরা হোটেলে প্রবেশের চেষ্টাও করেছিল। এ কারণেই বিকল্প আশ্রয়স্থলের পরিকল্পনাও আগেভাগেই করে রেখেছিল বাফুফে।
এই অভিযানে শুধু ফুটবলাররাই নন, দলের সঙ্গে থাকা কোচিং স্টাফ, কর্মকর্তা এবং কাঠমান্ডুতে সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া ১৭ জন সাংবাদিককেও দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মোট ৩৭ জনের এই যাত্রা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাফুফে সভাপতি।
তাবিথ আউয়াল কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী ও আর্মড ফোর্সেসের প্রতি, যারা বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে ২০ ঘণ্টার ভেতর সবাইকে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও কাঠমান্ডুর বাংলাদেশ দূতাবাসের অবদানও তুলে ধরেন তিনি।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি