চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভোট গ্রহণ আগামী ১ নভেম্বর। প্রায় এক যুগ পর ভোটের মাধ্যমে সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচন হতে চললেও নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত ভোটার আইডি হাতে পাননি তাঁরা। অনেকে প্রার্থিতা বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন, তবে তাঁদের নাম প্রার্থী তালিকায় রয়ে গেছে। এদিকে চারটি শ্রেণিতে ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি চললেও এর মধ্যে দুটি শ্রেণি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এফবিসিসিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন চার ব্যবসায়ী।

চেম্বার সূত্রে জানা গেছে, ভোটারদের আইডি বিতরণ ৬ অক্টোবর স্থগিত করা হয়। আইডি বিতরণের নতুন সময়সূচি ঘোষণা করা হয়নি। চেম্বারের মোট ভোটার ৬ হাজার ৭৮০ জন। এর মধ্যে সাধারণ সদস্য ৪ হাজার ১ জন, সহযোগী সদস্য ২ হাজার ৭৬৪ জন, ট্রেড গ্রুপ প্রতিনিধি ১০ এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি ৫ জন। এই চারটি শ্রেণিতে চেম্বারের ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। তবে ট্রেড গ্রুপ প্রতিনিধি ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি নির্বাচন নিয়ে চার ব্যবসায়ী এফবিসিসিআইয়ের আর্বিট্রেশনাল ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে দুটির শুনানি আজ মঙ্গলবার হওয়ার কথা রয়েছে।

এফবিসিসিআইয়ে অভিযোগ করা পক্ষটির দাবি, নির্বাচনকে বিগত বছরগুলোর মতো প্রভাবিত করতে চায় ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। তাঁরাই বিভিন্ন অকার্যকর সংগঠনকে ব্যবহার করে চেম্বারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন। তবে অপর পক্ষের দাবি, নির্বাচনকে পেছানোর জন্য দুটি শ্রেণির ভোটারদের নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।

আমি মালয়েশিয়ায় থাকার কারণে প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলাম। তবে তাঁরা বলল বিধিমালায় বলা হয়েছে এটি করা যাবে না। অথচ বিধিমালার এসব বিষয় নির্বাচনী তফসিলে উল্লেখ করা হয়নি। মো.

শওকত আলী, সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন

চেম্বার নির্বাচনে সবশেষ ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর সব কমিটি এসেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। চট্টগ্রাম চেম্বারে ব্যবসায়ীদের ভোটে ১২ জন সাধারণ শ্রেণিতে, ৬ জন সহযোগী শ্রেণিতে এবং ৩ জন করে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে পরিচালক নির্বাচিত হয়ে থাকেন। পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত হয় সভাপতি ও দুই সহসভাপতি।

বাতিলের আবেদন, তবু প্রার্থী

৮ অক্টোবর চেম্বার নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন বোর্ড। এদিন বেলা একটা পর্যন্ত প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী, সাধারণ শ্রেণিতে মোট প্রার্থী ৩৬ জন। অন্যদিকে সহযোগী শ্রেণিতে মোট প্রার্থী ১৪ জন। ট্রেড ও টাউন অ্যাসোসিয়েশনে ৩ জন করে প্রার্থী।

তবে প্রার্থী তালিকায় নাম থাকা ৫ ব্যবসায়ীর অভিযোগ, নির্বাচনে অন্য ব্যবসায়ীদের সমর্থন দিয়ে তাঁরা নাম প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করে এক প্রার্থী বলেন, প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা হবে না, এটি তফসিলে বলা হয়নি। চেম্বার নির্বাচনের সব কার্যক্রম চলছে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে।

দুই শ্রেণিতে ফরম নিয়ে একটিও প্রত্যাহার না করায় মো. শওকত আলী নামের একজনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন বোর্ড। তিনি চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। আটলান্টিক ট্রেডার্স ও বাগদাদ ডিস্ট্রিবিউশন নামের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে সাধারণ ও সহযোগী—এ দুই শ্রেণিতে তিনি মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছিলেন। শওকত আলীর ভাষ্য, তিনি প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রত্যাহারের আবেদন করলেও আবেদন গ্রহণ করেনি নির্বাচন বোর্ড।

মো. শওকত আলী বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়ায় থাকার কারণে প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলাম। তবে তারা বলল, বিধিমালায় বলা হয়েছে এটি করা যাবে না। অথচ বিধিমালার এসব বিষয় নির্বাচনী তফসিলে উল্লেখ করা হয়নি।’

বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর নাম প্রত্যাহার করতে হলে প্রার্থীকে সরাসরি এসে আবেদন করার কথা বলা হয়েছে। তবে চেম্বারের নির্বাচনী তফসিলে এ বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ নেই। এর আগে চেম্বারের নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা মনোনয়ন ফরমও প্রতিনিধির মাধ্যমে কিনেছেন। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, বিষয়গুলো স্পষ্ট না করায় নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

ট্রাইব্যুনালে চার ব্যবসায়ী

চেম্বার নির্বাচন ঘিরে শুরু থেকে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ ট্রেড গ্রুপ ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে সুযোগ পাওয়া ভোটার ও প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অবশ্য টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ প্রতিনিধিদের নিয়ে সাবেক সভাপতি এম এ লতিফের সময় থেকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ চেম্বারে ২০০৮-০৯ মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই চেম্বারে তাঁর একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়।

চেম্বার নির্বাচনে সবশেষ ভোট হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর সব কমিটি এসেছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। চট্টগ্রাম চেম্বারে ব্যবসায়ীদের ভোটে ১২ জন সাধারণ শ্রেণিতে, ৬ জন সহযোগী শ্রেণিতে এবং ৩ জন করে টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও ট্রেড গ্রুপ শ্রেণি থেকে পরিচালক নির্বাচিত হয়ে থাকেন। পরিচালকদের ভোটে নির্বাচিত হয় সভাপতি ও দুই সহসভাপতি।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত ২০ আগস্ট এই দুই শ্রেণির অকার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভোট প্রদানে সুযোগ না দিতে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ। এরপর চারটি টাউন অ্যাসোসিয়েশন ও চারটি ট্রেড গ্রুপকে অকার্যকর ঘোষণা করা হয়। তবে গত ৪ সেপ্টেম্বর আরেক চিঠিতে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই আট সংগঠনগুলো হলো, পটিয়া, বোয়ালখালী, হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপ, চট্টগ্রাম টায়ার টিউব ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস গ্রুপ, চিটাগাং ডাইজ অ্যান্ড কেমিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার গ্রুপ ও চিটাগাং মিল্ক ফুড ইমপোর্টার্স গ্রুপ।

এসব সংগঠনের বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের আর্বিট্রেশনাল ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া এস এম নুরুল হক ও চেম্বারের সদস্য আজিজুল হক। চেম্বার নির্বাচনে একটি প্যানেলের এস এম নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘চেম্বার থেকে তদন্ত করে এই আট সংগঠন বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আবার কিসের ভিত্তিতে তাঁদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। আমরা ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছি। মঙ্গলবার (আজ) শুনানির জন্য ডাকা হয়েছে। আমরা চাই নির্বাচন সুষ্ঠু হোক।’

তবে নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল—এমন অভিযোগ চট্টগ্রাম গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যাসোসিয়েশনে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলালের। এদিকে বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বলে দাবি করে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছেন চেম্বারের সদস্য এস এম সালেহ জহুর।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন বোর্ডের সদস্য আহমেদ হাছান বলেন, যেহেতু আইনে আছে, তাই প্রত্যাহারপ্রক্রিয়ার বিষয়টি তফসিলে আর উল্লেখ করা হয়নি। দুই শ্রেণির ভোটারদের নিয়ে ট্রাইব্যুনাল থেকে জবাব চাওয়া হয়েছিল, সেটি দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে চেম্বারের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি থাকবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এফব স স আইয় ন র ব চ ত হয় ব যবস য় দ র রক র য় উল ল খ হয় ছ ল কর ছ ন গ রহণ সহয গ তফস ল সদস য স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

কালীগঞ্জে শখের মাছ শিকারিদের উৎসব

বর্ষা মানেই শুধু বৃষ্টি নয়- এ সময়টা মাছ শিকারিদের কাছে আনন্দের মৌসুমও। কেউ জীবিকার তাগিদে, কেউবা নিছক শখের বশেই ছুটে যান জলাশয়ের ধারে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিল-ঝিল, নদী-নালা আর খালের পাড়ে এখন জমে উঠেছে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার উৎসব।

আষাঢ়-শ্রাবণের শুরুতেই যখন চারদিক জলময় হয়ে ওঠে, তখন প্রাণ ফিরে পায় কালীগঞ্জের বিল ও নদীগুলো। আশ্বিনে খাল বিলে মাছ বেড়ে ওঠে। সঙ্গে জেগে ওঠে শখের মাছ শিকারিদের দল। কেউ পেশায় ব্যবসায়ী, কেউ শিক্ষক, কেউ চাকরিজীবী। তবে সবারই এক পরিচয়, তারা বড়শি দিয়ে মাছ ধরার টানে ছুটে আসেন এই জলমগ্ন মাঠে।

জেলেরা যেখানে সারা বছর মাছ শিকারেই ব্যস্ত, সেখানে এই শৌখিন শিকারিরা মৌসুমি অভিযানে নামেন। কেউ বড়শি ফেলে নদীর ধারে বসে থাকেন, কেউ আবার ডিঙি নৌকা ভাড়া করে চলে যান জলাশয়ের গভীরে।

বিলের নিয়মিত শিকারি পারভেজ বলেন, “বড়শি দিয়ে মাছ ধরার আনন্দটাই আলাদা। দিনভর বসে থেকেও যদি একটা বড় মাছ পাই, তাতেই সারাদিনের ক্লান্তি মুছে যায়। টাকা-পয়সা ওঠে কি না, সেটা ভাবি না।”

অনেকে জানান, টোপ বানাতে কেউ কেউ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করেন। কারো কাছে এটা প্রতিযোগিতা, কারো কাছে ধ্যানের মতো এক অভ্যাস।

কালীগঞ্জ উপজেলার বেলাই বিল, আফাইন্নার বিল, অন্যান্য জলাশয় ও শীতলক্ষা নদীতে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে এই ‘বড়শি মৌসুম’। সকাল থেকেই ডিঙি নৌকা, বাঁশের চেয়ার, ছাতা, টিফিনবক্স-সব নিয়ে হাজির হন শিকারিরা।

বিকেল গড়ালে পাড়ে ভিড় জমে দর্শকদেরও। কেউ কৌতূহল নিয়ে দেখেন, কেউ পরামর্শ দেন, আবার কেউ মাছ ধরার মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া বলেন, “শখের মাছ শিকার আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ। এতে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যায়। আমরা চাই, সবাই নিয়ম মেনে শিকার করুক-ছোট মাছ ছেড়ে দিক, জলাশয়ের ভারসাম্য বজায় থাকুক।”

মাছ ধরা এখন শুধু জীবিকার বিষয় নয়- এটা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ বিনোদনের এক অনন্য মাধ্যম। ছুটির দিনে অনেকে পরিবার নিয়ে আসেন। অনেকেই শিকার করা টাটকা মাছ বিলের পাড়েই রান্না করেন।

হঠাৎ বড় মাছ টোপে ধরা পড়লে পাড়ে ছড়িয়ে পড়ে উচ্ছ্বাস। কেউ হাসে, কেউ চিৎকার দেয়, আবার কেউ বলে- ‘এই আনন্দের দাম টাকায় মাপা যায় না!’
 
বর্ষা শেষে জল কমে এলেও শিকারিদের মন থেকে বড়শির টান যায় না। তারা বলে, “মাছ না ধরলে দিনটা অসম্পূর্ণ লাগে।”

কালীগঞ্জের জলাশয়গুলো তাই শুধু জীবিকার উৎস নয়-এগুলো এখন মানুষ ও প্রকৃতির সংযোগের প্রতীক। বড়শির ফাঁদে ধরা পড়ে শুধু মাছ নয়, ধরা পড়ে আনন্দ, ধৈর্য আর জীবনের রঙ।

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ