গুমের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু গুরুত্বপূর্ণ, নির্বিচারে আটকদের মুক্তি জরুরি
Published: 15th, October 2025 GMT
বাংলাদেশে বিগত সরকারের আমলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করাকে জবাবদিহি নিশ্চিতের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। তিনি এতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ মান অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া জরুরি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বুধবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছেন ফলকার টুর্ক। গুমের ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু নিয়ে তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে প্রথমবারের মতো গুমের ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম ও নির্যাতনসংশ্লিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনা যথাক্রমে টাস্ক ফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেল (টিএফআইসি) ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) সংঘটিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এ মামলাগুলোতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই সাবেক সেনা কর্মকর্তা হলেও বর্তমানে কর্মরত সেনা কর্মকর্তারা আছেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের কয়েকজন সাবেক মহাপরিচালক ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক কর্মকর্তারা রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত শনিবার সেনাবাহিনী ঘোষণা দিয়েছে যে তারা বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এক ডজনের বেশি কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য সেনাবাহিনীর ওই কর্মকর্তাদের একটি উপযুক্ত বেসামরিক আদালতে দ্রুত হাজির করা গুরুত্বপূর্ণ।
ফলকার টুর্ক বলেন, ‘আমি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ মান, আন্তর্জাতিক আইনে যার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি। এসব সংবেদনশীল ও তাৎপর্যপূর্ণ মামলায় ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গত বছরের প্রাণক্ষয়ী আন্দোলন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল—যাঁরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, যেগুলোর কিছু আন্তর্জাতিক অপরাধের পর্যায়েও পড়তে পারে, তাঁদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং সেটা হতে হবে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী।
২০২৪ সালের আগস্টে গুমবিরোধী সনদ অনুসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন আনার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বলপূর্বক গুমকে অপরাধ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ঝুলে থাকা বিপুলসংখ্যক অন্যান্য মামলার বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়ার ওপর অগ্রাধিকার দিতেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এসব মামলার মধ্যে বিগত প্রশাসনের আমলে হওয়া মামলা থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে হওয়া মামলা রয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ও ন্যায়সংগত সমাধান নিশ্চিত করা এবং নির্বিচারে আটক করা যেকোনো ব্যক্তিকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
এই ব্যক্তিদের মধ্যে গুমের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া লোকজনের পাশাপাশি যাঁদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁরা রয়েছেন। এ তালিকায় সাংবাদিক ও বিগত সরকারের সমর্থক মনে করে আটক করা ব্যক্তিরা রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই এখনো অত্যন্ত কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে মামলার আসামি হিসেবে রয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি যেকোনো মামলাতেই আদালতের কাছে মৃত্যুদণ্ড না চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অভিযোগ যত গুরুতর হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ড না চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ফলকার টুর্ক বলেন, ‘ব্যক্তিগত জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো, সত্য প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ, ক্ষত প্রশমন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া অনুসরণ। এ প্রক্রিয়ায় অবশ্যই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারা বন্ধ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এসব নিপীড়ন আর কখনো ঘটতে না পারে। একই সঙ্গে আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত চলমান উদ্বেগগুলো নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি এবং তা করতে হবে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত স ঘ র ম নব ধ ক র আহ ব ন জ ন য় ছ র আহ ব ন জ ন ফলক র ট র ক ন শ চ ত কর কর মকর ত প রক র য় সরক র র অপর ধ র র জন য বল ছ ন গ র তর র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
গুমের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু গুরুত্বপূর্ণ, নির্বিচারে আটকদের মুক্তি জরুরি
বাংলাদেশে বিগত সরকারের আমলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করাকে জবাবদিহি নিশ্চিতের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। তিনি এতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ মান অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া জরুরি বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বুধবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছেন ফলকার টুর্ক। গুমের ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু নিয়ে তিনি বলেছেন, এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে প্রথমবারের মতো গুমের ঘটনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারের জন্য একটি তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুম ও নির্যাতনসংশ্লিষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুটি মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনা যথাক্রমে টাস্ক ফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেল (টিএফআইসি) ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) সংঘটিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল এ মামলাগুলোতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে অধিকাংশই সাবেক সেনা কর্মকর্তা হলেও বর্তমানে কর্মরত সেনা কর্মকর্তারা আছেন। এই ব্যক্তিদের মধ্যে ডিজিএফআইয়ের কয়েকজন সাবেক মহাপরিচালক ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক কর্মকর্তারা রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত শনিবার সেনাবাহিনী ঘোষণা দিয়েছে যে তারা বিগত সরকারের আমলে সংঘটিত গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এক ডজনের বেশি কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়া নিশ্চিতের জন্য সেনাবাহিনীর ওই কর্মকর্তাদের একটি উপযুক্ত বেসামরিক আদালতে দ্রুত হাজির করা গুরুত্বপূর্ণ।
ফলকার টুর্ক বলেন, ‘আমি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের সর্বোচ্চ মান, আন্তর্জাতিক আইনে যার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি। এসব সংবেদনশীল ও তাৎপর্যপূর্ণ মামলায় ভুক্তভোগী ও সাক্ষীদের সুরক্ষা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রদের নেতৃত্বাধীন গত বছরের প্রাণক্ষয়ী আন্দোলন নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ ছিল—যাঁরা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, যেগুলোর কিছু আন্তর্জাতিক অপরাধের পর্যায়েও পড়তে পারে, তাঁদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে এবং সেটা হতে হবে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী।
২০২৪ সালের আগস্টে গুমবিরোধী সনদ অনুসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে সংশোধন আনার মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বলপূর্বক গুমকে অপরাধ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ঝুলে থাকা বিপুলসংখ্যক অন্যান্য মামলার বিচারকাজ এগিয়ে নেওয়ার ওপর অগ্রাধিকার দিতেও বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এসব মামলার মধ্যে বিগত প্রশাসনের আমলে হওয়া মামলা থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে হওয়া মামলা রয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ও ন্যায়সংগত সমাধান নিশ্চিত করা এবং নির্বিচারে আটক করা যেকোনো ব্যক্তিকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
এই ব্যক্তিদের মধ্যে গুমের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া লোকজনের পাশাপাশি যাঁদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে, তাঁরা রয়েছেন। এ তালিকায় সাংবাদিক ও বিগত সরকারের সমর্থক মনে করে আটক করা ব্যক্তিরা রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই এখনো অত্যন্ত কঠোর সন্ত্রাসবিরোধী আইনসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে মামলার আসামি হিসেবে রয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের প্রতি যেকোনো মামলাতেই আদালতের কাছে মৃত্যুদণ্ড না চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। অভিযোগ যত গুরুতর হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই মৃত্যুদণ্ড না চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ফলকার টুর্ক বলেন, ‘ব্যক্তিগত জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য এগিয়ে যাওয়ার সর্বোত্তম পথ হলো, সত্য প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ, ক্ষত প্রশমন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া অনুসরণ। এ প্রক্রিয়ায় অবশ্যই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারা বন্ধ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে, যাতে এসব নিপীড়ন আর কখনো ঘটতে না পারে। একই সঙ্গে আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত চলমান উদ্বেগগুলো নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি এবং তা করতে হবে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে।’