বিচার চাওয়ায় রাগ দেখালেন আইন উপদেষ্টা
Published: 17th, January 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ১০০ শিক্ষার্থীকে যৌথভাবে বৃত্তি দেবে ‘সন্তান ও অভিভাবক ফোরাম (এসওএফ)’, ‘বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)’ এবং ‘কোয়ালিটি লাইফ ফাউন্ডেশন (কিউএলএফ)’। পাশাপাশি আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবে বিপিএ। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
আয়োজকরা জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অনেকেই হাত-পা হারিয়ে পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। কেউ চোখ হারিয়েছেন। একদিকে যেমন সীমিত জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন, অন্যদিকে তাদের শিক্ষা কিংবা কর্মজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাদের কথা চিন্তা করে যৌথভাবে ১০০ জনের মাঝে বৃত্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০ জনকে শিক্ষাজীবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে বাকি ৭০ জনকে এ সহায়তা দেওয়া হবে।
আন্দোলনে নিহত ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, প্রতি মাসের ১৮ তারিখ আমাদের জন্য বেদনাদায়ক। এ তারিখ আসলেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ বেড়ে যায়। শনিবার আমার সন্তানের মৃত্যুর ছয় মাস পূর্ণ হবে। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
নিহত আহনাফের মা সাফাত সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার সন্তান হত্যার বিচার চাওয়ায় ‘বেশি কথা বলেন’ বলে ক্ষুব্ধ হয়েছেন আইন উপদেষ্টা। ‘আমি যখন আইন উপদেষ্টাকে বললাম, ‘আমার সন্তান হত্যার খুনিরা এখনও বাইরে। তারা কার মদদে এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা কীভাবে এখনও দেশের বাইরে যাচ্ছে এসব কি দেখেন না।’ তখন আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এসব আমার দায়িত্ব না, এসবের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার। আমার কাছে এসবের জন্য আসেন কেন, এসবের জন্য আমাকে বলবেন না।’
জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিপিএর সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, ট্রাস্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট (অপারেশন) তহমিনা আক্তার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোহনা আক্তার, এসওএফের অন্যতম সমন্বয়ক ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন আইন উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা