‘জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির (জেপিসি) বৈঠক চলাকালীন সময়ে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ভারতে একসঙ্গে ১০ সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বহিষ্কৃতরা হলেন-কল্যাণ ব্যানার্জি (তৃণমূল কংগ্রেস), মোহাম্মদ জাভেদ (কংগ্রেস), এ রাজা (ডিএমকে), আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (এআইএমআইএম), নাসির হোসেন (কংগ্রেস), মোহিবুল্লাহ (সমাজবাদী পার্টি), এম আব্দুল্লাহ (ডিএমকে), অরবিন্দ সাবন্ত (শিবসেনা, উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী), নাদিমুল হক (তৃণমূল) ও ইমরান মাসুদ (কংগ্রেস)।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ওয়াকফ আমেন্ডমেন্ট বিল-২০২৪ নিয়ে আলোচনার জন্য জেপিসির বৈঠক ডাকা হয়েছিল দিল্লির সংসদ ভবনের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে। সেই বৈঠকেই বিশৃঙ্খলার অভিযোগে বিরোধীদলের ১০ সাংসদকে একদিনের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

সস্ত্রীক সুবিধ আলী ও মৃণাল কান্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক এমপি রশীদুজ্জামান ৩ দিনের রিমান্ডে

শুক্রবার সকাল ১১টায় বৈঠক শুরুর পর থেকেই হট্টগোল শুরু হয়। খসড়ায় প্রস্তাবিত পরিবর্তন নিয়ে খুঁটিয়ে দেখার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন বিরোধীদলের সদস্যরা।

ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের ধর্মীয় নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের মতামত শোনার কথা ছিল জিপিসির যৌথ কমিটির। কিন্তু বিরোধী সংসদ সদস্যদের অভিযোগ যে, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বিজেপি সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের রিপোর্ট তাড়াতাড়ি পেশ করার জন্য জোর দিচ্ছে। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ তৈরি হয় এবং একসময় ওই বৈঠক মুলতবি করে দিতে বাধ্য হয়। এরপর পুনরায় বৈঠক শুরু হওয়ার পর মিরওয়াইজ উমর ফারুকের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল বৈঠকে উপস্থিত হলেও বৈঠক চালানোর উপযুক্ত পরিবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দুই সংসদ সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি এবং নাসির হোসেনের অভিযোগ এই কমিটি এবং তাদের কার্যক্রম একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে।

পরে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জী বিরোধী কণ্ঠকে দমিয়ে রাখার অভিযোগ তুলে কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‍“আমরা বারবার ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারি জেপিসির সভা করার জন্য অনুরোধ করেছি, কিন্তু আমাদের সেই অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে। গতরাতে আমরা যখন দিল্লিতে নামলাম, বৈঠকের বিষয়বস্তু পাল্টে গেল। প্রাথমিকভাবে, আমাদের জানানো হয়েছিল যে প্রতিটি ধারা অনুসারে সভাটি চলবে। কিন্তু ভিতরে যা ঘটছে তা একটি অঘোষিত জরুরি অবস্থার মতো। দিল্লি নির্বাচনের কারণে তারা তাড়াহুড়ো করছে- এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চেয়ারম্যান কারো কথা শোনেন না, মনে হয় ‘জমিদারি’। তারা বিরোধীদলের সদস্যদের প্রতি কোনো সম্মান দেখায় না। এই জেপিসি কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছে।”

যদিও, সংসদীয় গণতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ ও গণ্ডগোল তৈরির জন্য বিরোধীদের নিন্দা করেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনিই প্রথম বিরোধী সংসদ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে যা প্যানেল দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল।

‘ওয়াকফ আমেন্ডমেন্ট বিল-২০২৪’ সম্পর্কিত জেপিসির বৈঠক নিয়ে এর আগেও একাধিকবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসেই জেপিসি বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি এবং বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলীর মধ্যে বচসা বাঁধে। এরপরই রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে কাঁচের বোতল ভেঙে কমিটির চেয়ারম্যানের দিকে ছুড়ে মেরেছিলেন কল্যাণ ব্যানার্জি। ওই ঘটনায় হাতে আঘাত পেয়েছিলেন কল্যাণ। 

ঢাকা/সুচরিতা/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কল য ণ ব য ন র জ ব র ধ দল র জন য ধ দল র কম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • সংশোধিত সাইবার অধ্যাদেশও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি
  • জার্মানির ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনা, জেনে নিন সব তথ্য
  • ২০২৪ সালে মেটার কাছে ৩৭৭১ অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে সরকার
  • কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধ থেকে এবার প্রকাশ্য সংঘাতে ইরান-ইসরায়েল
  • তিন চ্যাম্পিয়ন দলসহ যেসব তারকাকে দেখা যাবে না ক্লাব বিশ্বকাপে
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ