ভারতের ১০ বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার
Published: 24th, January 2025 GMT
‘জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটির (জেপিসি) বৈঠক চলাকালীন সময়ে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ভারতে একসঙ্গে ১০ সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কৃতরা হলেন-কল্যাণ ব্যানার্জি (তৃণমূল কংগ্রেস), মোহাম্মদ জাভেদ (কংগ্রেস), এ রাজা (ডিএমকে), আসাদুদ্দিন ওয়াইসি (এআইএমআইএম), নাসির হোসেন (কংগ্রেস), মোহিবুল্লাহ (সমাজবাদী পার্টি), এম আব্দুল্লাহ (ডিএমকে), অরবিন্দ সাবন্ত (শিবসেনা, উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী), নাদিমুল হক (তৃণমূল) ও ইমরান মাসুদ (কংগ্রেস)।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ওয়াকফ আমেন্ডমেন্ট বিল-২০২৪ নিয়ে আলোচনার জন্য জেপিসির বৈঠক ডাকা হয়েছিল দিল্লির সংসদ ভবনের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ে। সেই বৈঠকেই বিশৃঙ্খলার অভিযোগে বিরোধীদলের ১০ সাংসদকে একদিনের জন্য বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
সস্ত্রীক সুবিধ আলী ও মৃণাল কান্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সাবেক এমপি রশীদুজ্জামান ৩ দিনের রিমান্ডে
শুক্রবার সকাল ১১টায় বৈঠক শুরুর পর থেকেই হট্টগোল শুরু হয়। খসড়ায় প্রস্তাবিত পরিবর্তন নিয়ে খুঁটিয়ে দেখার জন্য তাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন বিরোধীদলের সদস্যরা।
ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের ধর্মীয় নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের মতামত শোনার কথা ছিল জিপিসির যৌথ কমিটির। কিন্তু বিরোধী সংসদ সদস্যদের অভিযোগ যে, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে বিজেপি সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের রিপোর্ট তাড়াতাড়ি পেশ করার জন্য জোর দিচ্ছে। এ নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ তৈরি হয় এবং একসময় ওই বৈঠক মুলতবি করে দিতে বাধ্য হয়। এরপর পুনরায় বৈঠক শুরু হওয়ার পর মিরওয়াইজ উমর ফারুকের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদল বৈঠকে উপস্থিত হলেও বৈঠক চালানোর উপযুক্ত পরিবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। দুই সংসদ সদস্য কল্যাণ ব্যানার্জি এবং নাসির হোসেনের অভিযোগ এই কমিটি এবং তাদের কার্যক্রম একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
পরে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জী বিরোধী কণ্ঠকে দমিয়ে রাখার অভিযোগ তুলে কমিটির চেয়ারম্যান জগদম্বিকা পালের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা বারবার ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারি জেপিসির সভা করার জন্য অনুরোধ করেছি, কিন্তু আমাদের সেই অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে। গতরাতে আমরা যখন দিল্লিতে নামলাম, বৈঠকের বিষয়বস্তু পাল্টে গেল। প্রাথমিকভাবে, আমাদের জানানো হয়েছিল যে প্রতিটি ধারা অনুসারে সভাটি চলবে। কিন্তু ভিতরে যা ঘটছে তা একটি অঘোষিত জরুরি অবস্থার মতো। দিল্লি নির্বাচনের কারণে তারা তাড়াহুড়ো করছে- এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। চেয়ারম্যান কারো কথা শোনেন না, মনে হয় ‘জমিদারি’। তারা বিরোধীদলের সদস্যদের প্রতি কোনো সম্মান দেখায় না। এই জেপিসি কার্যত প্রহসনে পরিণত হয়েছে।”
যদিও, সংসদীয় গণতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপ ও গণ্ডগোল তৈরির জন্য বিরোধীদের নিন্দা করেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তিনিই প্রথম বিরোধী সংসদ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে যা প্যানেল দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল।
‘ওয়াকফ আমেন্ডমেন্ট বিল-২০২৪’ সম্পর্কিত জেপিসির বৈঠক নিয়ে এর আগেও একাধিকবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। গত বছরের অক্টোবর মাসেই জেপিসি বৈঠকে তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি এবং বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গাঙ্গুলীর মধ্যে বচসা বাঁধে। এরপরই রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে কাঁচের বোতল ভেঙে কমিটির চেয়ারম্যানের দিকে ছুড়ে মেরেছিলেন কল্যাণ ব্যানার্জি। ওই ঘটনায় হাতে আঘাত পেয়েছিলেন কল্যাণ।
ঢাকা/সুচরিতা/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কল য ণ ব য ন র জ ব র ধ দল র জন য ধ দল র কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই স্বীকৃতির উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া সংবিধানের তফসিলেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।
বহুল আলোচিত জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এ কথাগুলো বলা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর সবুজ সংকেত পেলে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতেই ঘোষণা করা হতে পারে জুলাই ঘোষণাপত্র।
ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক এবং আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’
আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৫ ঘণ্টা আগেপরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাকশাল বা একদলীয় শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের কথা যেমন এতে উল্লেখ রয়েছে, পাশাপাশি এক-এগারোর ‘ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের’ কড়া সমালোচনাও ঘোষণাপত্রে আছে।
জনগণের লড়াইকে সমর্থন দেয় সামরিক বাহিনীঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরে গণহত্যার মতো আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ’১৮ ও ’২৪) দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে বলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ-জলবায়ু ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন করে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে, যা পরে ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন দেন। তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট (২০২৪) পদত্যাগ করেন এবং তিনি মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।